ছবি: পিটিআই।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের উপস্থিতিতে প্রকারান্তরে দাদরির হত্যাকাণ্ড নিয়ে আজ অসন্তোষ প্রকাশ করলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
ভারতের বহুত্ববাদ ও বৈচিত্রকে সুরক্ষিত রাখতে না-পারা ও দাদরির ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মৌন থাকার প্রতিবাদে গতকাল সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বিশিষ্ট লেখিকা নয়নতারা সহগল। তাঁর পথ অনুসরণ করে একই ভাবে প্রধানমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ফিরিয়েছেন কবি অশোক বাজপেয়ী। আজ সেই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘‘বহুত্ববাদের সঙ্গে সহাবস্থান আমাদের সভ্যতার মৌলিক মূল্যবোধ। তা নষ্ট করে দেওয়া আমরা প্রশ্রয় দিতে পারি না।’’
রাষ্ট্রপতির জীবন নিয়ে আজ রাইসিনা হিলসে একটি বই প্রকাশিত হয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও। আজ তাঁর সামনেই কথা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘‘ইতিহাস পড়লেই দেখা যাবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বহু সভ্যতার পতন ঘটেছে। কিন্তু বহির্শত্রুর আক্রমণ সত্ত্বেও ভারতীয় সভ্যতার মৌলিক মূল্যবোধ নষ্ট হয়নি। সেটা মাথায় রেখে চললে ভারতীয় গণতন্ত্রের অগ্রগতি কেউই ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর সাংবিধানিক এক্তিয়ারের মধ্যে থেকে যতটুকু বার্তা দেওয়া সম্ভব তা প্রণববাবু দিয়েছেন। তাঁর কথায় দু’টি বিষয় তাৎপর্যপূর্ণ। যে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে তাতে ভারতীয় গণতন্ত্রের অবক্ষয় অবধারিত, সেই সার কথাটি বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। তা ছাড়া, দাদরির ঘটনায় মূল অভিযোগ রয়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের দশ জনের মধ্যে সাত জনই বিজেপির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে এই সহিষ্ণুতার বার্তা দেওয়া অর্থবহ।
দাদরির সেই পরিবার গত কাল রাতে বিসারা গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছে। নিহত আখলাকের বড় ছেলে মহম্মদ সরতাজ জানিয়েছেন, আপাতত তাঁরা দিল্লিতে থাকবেন। সরতাজের ভাই দানিশ সে দিন হামলাকারীদের হাতে মার খেয়ে নয়ডার একটি হাসপাতালে ভর্তি। আজ আইসিইউ থেকে ছাড়া পেয়েছে সে। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে অল্প কথাও বলেছে।
সন্দেহ নেই দাদরির ঘটনাকে সামনে রেখে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের মধ্যে একটা বড় অংশ মেরুকরণের রাজনীতিতে হাওয়া দিতে চাইছে। কিন্তু এতে শিক্ষিত সমাজে সরকার সম্পর্কে যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে, তা নিয়েও কেন্দ্র ওয়াকিবহাল। তাই পরিস্থিতি কিছুটা প্রশমিত করতে আজ সকালে রাজনাথ সিংহ বলেন, ‘‘দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করলে সরকার দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। কেন্দ্র কোনও ভাবেই চুপ করে বসে থাকবে না।’’ দাদরির ঘটনা নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সবিস্তার রিপোর্ট পেশ করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
তবে তাতেই সন্তুষ্ট নন বিশিষ্টজনেরা। সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়ে কবি অশোক বাজপেয়ী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী সব বিষয় এত বোঝেন, এত জানেন, এত কথা বলেন। অবাক হচ্ছি এটা দেখে যে লেখক, নিরীহ মানুষ, যুক্তিবাদী নেতাদের ধরে ধরে পিটিয়ে মারা হচ্ছে, কিন্তু তাঁর কোনও হেলদোল নেই! অসহিষ্ণুতা বরদাস্ত করা হবে না বলে সরকার শুধু ভাষণ দিচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কোনও চেষ্টাই দেখা যাচ্ছে না।’’
সাহিত্য অকাদেমি সূত্রের মতে, নয়নতারা সহগল ও অশোক বাজপেয়ীর মতো আরও কবি, সাহিত্যিক ও বিশিষ্টজনেরা দাদরির ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে পারেন। এমনকী দিল্লিতে কবি-সাহিত্যিকরা একটি অরাজনৈতিক আলোচনা সভা করার কথাও ভাবছেন। যার মোদ্দা অর্থ হল, দাদরির ঘটনা নিয়ে ক্রমশ চাপ বাড়ছে মোদী সরকারের ওপর।
তবে কবি-সাহিত্যিকদের পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়া বা রাষ্ট্রপতির সতর্কবার্তা নিয়ে বিজেপি মুখপাত্ররা আজও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বিজেপি ও মোদী সরকারকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস নেতা শাকিল আহমেদ আজ বলেন, ‘‘এ সবে বিজেপি বিচলিত নয়। বরং সুচিন্তিত ভাবেই বিজেপি সমাজে বিভাজন তৈরি করতে চাইছে। মানুষ সেই বিপদের গন্ধ না পেলে বিপর্যয় অনিবার্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy