Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিহারে ভোটের মুখে ফের হিন্দুত্বে অমিত, দলে প্রশ্ন

বিহার নির্বাচনের আগে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের মুখে আবার হিন্দুত্বের সুর। আর তা নিয়ে প্রশ্ন উঠল তাঁর দলের মধ্যেই। বিহারে বিজেপি নেতাদের একটি অংশের আশঙ্কা, এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদেরও কেউ কেউ ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, বিহারে নরেন্দ্র মোদীকেই মুখ করে এগোনো হবে, নাকি বিপক্ষের দলগুলির মতো জাতপাতের রাজনীতিকে হাতিয়ার করা হবে, সেই কৌশলই এখনও ঠিক হয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৫ ০২:৫৯
Share: Save:

বিহার নির্বাচনের আগে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের মুখে আবার হিন্দুত্বের সুর। আর তা নিয়ে প্রশ্ন উঠল তাঁর দলের মধ্যেই। বিহারে বিজেপি নেতাদের একটি অংশের আশঙ্কা, এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদেরও কেউ কেউ ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, বিহারে নরেন্দ্র মোদীকেই মুখ করে এগোনো হবে, নাকি বিপক্ষের দলগুলির মতো জাতপাতের রাজনীতিকে হাতিয়ার করা হবে, সেই কৌশলই এখনও ঠিক হয়নি। এই অবস্থায় আগেভাগেই হিন্দুত্বের নামে মেরুকরণের রাজনীতি উস্কে দিয়ে কী লাভ?

গত কাল গুজরাতে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের একটি বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে অমিত শাহ বলেছেন, ‘‘হিন্দু ধর্মই পৃথিবীর সব সমস্যার সমাধান।’’ সোহরাবুদ্দিন ভুয়ো সংঘর্ষ মামলার সময় আদালতের নির্দেশে যে দুই বছর তাঁকে গুজরাতের বাইরে থাকতে হয়েছিল, তখনকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অমিত শাহ বলেন, সেই ‘কঠিন’ সময়ে ভারতের সব ধার্মিক কেন্দ্র তিনি ঘুরে দেখেছেন। ভারতের সব জ্যোতির্লিঙ্গ ও শক্তিপীঠের আশীর্বাদও চেয়েছেন।

বিজেপি সভাপতির মুখ থেকে ফের হিন্দুত্বের সুর শুনে বিরোধীরা আসরে নেমে পড়তে দেরি করেননি। কংগ্রেসের নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেছেন, ‘‘হিন্দু ধর্ম সব সমস্যার সমাধান, তা নিয়ে আমাদের কোনও বিরোধিতা নেই। কিন্তু বেছে বেছে বিজেপি নেতারা শুধু কেন হিন্দু ধর্মেই সব কিছু দেখতে পান? অন্য ধর্মে কেন কিছু নজর আসে না? এটা আসলে বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতি।’’ কিন্তু বিহার নির্বাচনের আগে ফের খোদ বিজেপি সভাপতির মুখে হিন্দুত্ব দেখে অসন্তুষ্ট তাঁর দলের নেতারাই। বিশেষ করে বিহারের নেতারা বলছেন, এর খেসারত দিতে হতে পারে রাজ্যে আসন্ন নির্বাচনে।

বিহার বিজেপির এক নেতার বিশ্লেষণ, উত্তরপ্রদেশ ও বিহার, দু’টিই গোবলয়ের মধ্যে গণ্য হলেও দুই রাজ্যের রাজনীতির অঙ্ক আলাদা। লোকসভা নির্বাচনে মেরুকরণের রাজনীতি করে অমিত শাহ উত্তরপ্রদেশে সাফল্য অর্জন করতে পারেন। কিন্তু সেই রসায়ন রূপায়ণ করতে গিয়ে কিন্তু ধাক্কা খেয়েছেন দিল্লিতে। বিহারে জাত-পাতের রাজনীতি চলতে পারে, কিন্তু ধর্ম়ীয় মেরুকরণ সে ভাবে ধোপে টিকবে না।

দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও প্রশ্ন তুলছেন অমিত শাহের এই হিন্দুত্ব প্রচার নিয়ে। এমনিতেই বিহার বিধানসভা নির্বাচনে দলের কৌশল কী হবে তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। লোকসভা ভোটের মতো তাঁরা এই নির্বাচনেও জাত-পাতের ঊর্ধ্বে উঠে মোদীকেই মুখ করে এগোতে চাইছেন। কিন্তু লালু-নীতীশের দল ও কংগ্রেস যে ভাবে জাত-পাতের রাজনীতি নিয়ে কোমর বেঁধে ময়দানে নেমেছে, তাতে জাতের রাজনীতিকেও উপেক্ষা করতে পারছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের একাংশ তাই প্রশ্ন তুলছেন, দলের নেতারাই যখন নিশ্চিত নন, কোন কৌশল নিয়ে এগোনো হবে, তখন অযথা কেন ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতিকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে?

এই অসন্তোষকে অবশ্য প্রকাশ্যে আমল দিতে চাইছে না বিজেপি। দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বরং এ দিন দাবি করেন, দলের সভাপতি আদৌ মেরুকরণের রাজনীতি করছেন না। কারণ তিনি নিজেই বলেছেন, হিন্দু হয়ে জন্মেছেন বলে এই কথা তিনি বলেননি। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কালামের বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে তিনি ‘হিন্দু ধর্মের বিষয়ে তাঁর উপলব্ধির কথা বলেছেন মাত্র’। তার মানে এই নয় অন্য ধর্মকে তিনি উপেক্ষা করেছেন। অমিত শাহের মন্তব্যের এই ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি বিজেপি মুখপাত্র পাল্টা অভিযোগ করেন, ‘‘কংগ্রেস বরাবরই ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করে এসেছে। এখনও করে চলেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE