কংগ্রেস-সিপিএমকে মূল নিশানায় রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তোপ দাগলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।দিল্লিতে বিজেপির দু’দিনের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের শুরুতেই আজ অমিত শাহ মূলত টেনে আনেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগানের কথা। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যক্তি, দল বা সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা চলতেই পারে। কিন্তু দেশের সমালোচনা সহ্য করা হবে না। বাক-স্বাধীনতার নামে রাহুল গাঁধীও এই রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগানের বিরোধিতা করেননি। আর মাও-এর ভক্ত, স্তালিনের সমর্থকদের থেকেও আমাদের বাক স্বাধীনতার পাঠ নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
আগাগোড়া কংগ্রেস ও বামেদেরই নিশানা করে গিয়েছেন অমিত শাহ। রাহুল গাঁধী প্রধানমন্ত্রীকে যে প্রশ্ন করেন, নরেন্দ্র মোদী দেশকে কী দিয়েছেন? তার জবাবেও বিজেপি সভাপতি দুর্নীতি-মুক্ত, পরিবারতন্ত্র-মুক্ত, নেতৃত্বের অস্থিরতামুক্ত সরকারের কথা বলে সনিয়া-রাহুলকে পাল্টা কাঠগড়ায় দাঁড় করান। জাতীয় স্তরে বিজেপির কাছে কংগ্রেসই যে প্রধান প্রতিপক্ষ, সেটি বুঝিয়েও রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আক্রমণ শানান তিনি। বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক কর্মীদের উপর আক্রমণ হচ্ছে। তাঁদের হত্যা করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু যত দমন করবে, ততই আমরা আগে এগোব।’’ তাঁর মতে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি একটি ‘সিরিয়স প্লেয়ার’ হয়ে আবির্ভূত হবে।’’
আগামিকাল পশ্চিমবঙ্গ-সহ বাকি ভোটমুখী রাজ্যের রণকৌশল নিয়েও সবিস্তার আলোচনা হবে। তবে দলীয় সূত্রের মতে, আজ অমিত শাহ দলের অভিমুখটি তৈরি করে দিলেন। আর তাতে স্পষ্ট, জাতীয় স্তরের নিরিখে কংগ্রেসের পাশাপাশি এখন বামেদেরও আক্রমণের মূল নিশানায় রাখা হচ্ছে। তবে ভোটের বাজারে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলকেও ছেড়ে দেওয়া হবে না। তাই পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন নিয়ে আলোচনার আগে অমিত শাহ দলের লাইনটিও বেঁধে দিলেন।
দলের এক নেতার কথায়, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কতটা আক্রমণ শানানো হবে, তা নিয়ে দলের মধ্যেই দ্বন্দ্ব রয়েছে। একপক্ষ মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গের এ বারের নির্বাচনে যদি ক্ষমতা দখলের অবস্থায় বিজেপি না-ই আসতে পারে, তা হলে অহেতুক মমতাকে চটিয়ে লাভটা কী? কারণ, কংগ্রেস বরাবরই বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ। ফলে পশ্চিমবঙ্গেও কংগ্রেস-বামেদের জোটকে আরও দুর্বল করার চেষ্টা করা উচিত, যাতে কংগ্রেস নিজেদের শক্তি বাড়াতে না পারে। আর রাজ্যসভাতেও আরও বেশি বেগ দিতে না পারে। বরং বিভিন্ন বিল পাশের জন্য মমতার মতো দলকেই আরও বেশি প্রয়োজন। কিন্তু দলের সভাপতি হিসাবে অমিত শাহ চান, চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করে অন্তত একটি সম্মানজনক অবস্থায় আসা যায়। সভাপতি হিসাবে এটিও তাঁর একটি চ্যালেঞ্জ। আরএসএস-ও চায়, বিধানসভায় দলের শক্তি বাড়িয়ে সামনের লোকসভার জন্য ভিতটি আরও মজবুত করে রাখা।
সেই হিসাবেই আজ অমিত শাহ বুঝিয়ে দিলেন, জাতীয় স্তরে কংগ্রেস প্রধান শত্রু হলেও পশ্চিমবঙ্গের ভোটে মমতাকেও তিনি কোনও ভাবে রেয়াত করতে চান না। সেই হিসাবে দলে দুটি অবস্থানের মধ্যে তিনি একটি ভারসাম্যের লাইনই নিতে চাইলেন। বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, ভোটের সময় নীতীশ কুমারকেও কোনও ভাবে রেয়াত করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এখন ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে নীতীশ কুমারের সঙ্গেও সখ্য বজায় রাখতে চাইছেন। এটি নিছক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ধর্ম মেনেই নয়, এর পিছনে একটি রাজনৈতিক কারণও আছে। সামনের লোকসভাতে কংগ্রেস যাতে এ ধরনের আঞ্চলিক শক্তিকে সামনে রেখে মোদী-বিরোধিতায় একজোট না হয়, সেটিও সুকৌশলে সুনিশ্চিত করতে চাইছেন মোদী। আজ দলের নেতাদের সরকারের কাজকর্ম মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বার্তা দিলেও প্রধানমন্ত্রী এই বিষয় নিয়ে মুখ খোলেননি। কাল বৈঠকের শেষ লগ্নে নিজের বক্তব্য পেশ করবেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy