Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
জবাব দিতে খেই হারাল বিজেপি

খামতি মেনে নিয়ে ধারালো টানটান রাহুল

এমন পরিশীলিত, পরিণত ভাষায় আক্রমণের জবাব কী হবে, তা নিয়ে আজ খেই হারিয়েছে বিজেপি। গত সপ্তাহে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রাহুলের মন্তব্যের জবাব দিতে তেড়েফুঁড়ে নেমেছিলেন স্মৃতি ইরানি থেকে রবিশঙ্কর প্রসাদেরা। আজ সকলে চুপ। দলের সভাপতি অমিত শাহ শুধু উত্তরাখণ্ডে বলেছেন, ‘‘রাহুল গাঁধী তিন প্রজন্মের কাজের জবাব দিন।

সাক্ষাৎ: নোবেলজয়ী পদার্থবিদ ডানকান হ্যালডেন ও স্যাম পিত্রোদার সঙ্গে রাহুল গাঁধী। নিউ জার্সিতে। ছবি: পিটিআই।

সাক্ষাৎ: নোবেলজয়ী পদার্থবিদ ডানকান হ্যালডেন ও স্যাম পিত্রোদার সঙ্গে রাহুল গাঁধী। নিউ জার্সিতে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:৫৮
Share: Save:

ইটের বদলে পাটকেল দেওয়ার জন্য তৈরিই ছিল বিজেপির ফৌজ। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীকে তোপ দাগতে গিয়ে যে ভাবে নিজেদের দায়টিও সুকৌশলে কবুল করে নিলেন রাহুল গাঁধী, তাতেই থতমত খেতে হলো বিজেপিকে। যেটিকে রাহুলের ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হিসেবেই দেখছে কংগ্রেস।

গত সপ্তাহের মতোই রাহুল আজ আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মেরুকরণের রাজনীতি’ থেকে ‘ক্ষমতা হাতের মুঠোয় রাখা’ নিয়ে মোদীকে বিঁধলেন। একই সঙ্গে কবুল করলেন, কংগ্রেসের সংগঠনেও বিকেন্দ্রীকরণ করতে গিয়ে পদে পদে বাধা এসেছে। মোদীর বিকল্প পথের সন্ধান দিতে গিয়ে হাতিয়ার করলেন বেকারির প্রসঙ্গ। আর সেখানেও রাহুল কবুল করলেন, রোজগার দিতে পারেনি কংগ্রেস। সেই ক্ষোভের জেরেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মোদী। আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থানের পিছনেও রয়েছে এই কাজের খোঁজ। তবে তফাত এটাই যে, কংগ্রেস সমস্যা স্বীকার করে। কিন্তু মোদী কবুল না করে সমাধান এড়িয়ে যান অন্য কথা বলে। কিন্তু কাজ দিতে না পারার ক্ষোভ বাড়ছে মোদীর বিরুদ্ধেও। হতাশ যুবকেরা, এই জমানায় ভারতে নিজেদের ভবিষ্যৎ দেখতে পাছে না।

এমন পরিশীলিত, পরিণত ভাষায় আক্রমণের জবাব কী হবে, তা নিয়ে আজ খেই হারিয়েছে বিজেপি। গত সপ্তাহে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রাহুলের মন্তব্যের জবাব দিতে তেড়েফুঁড়ে নেমেছিলেন স্মৃতি ইরানি থেকে রবিশঙ্কর প্রসাদেরা। আজ সকলে চুপ। দলের সভাপতি অমিত শাহ শুধু উত্তরাখণ্ডে বলেছেন, ‘‘রাহুল গাঁধী তিন প্রজন্মের কাজের জবাব দিন। আমরা তিন বছরের কাজের খতিয়ান দিতে তৈরি।’’ এটাও রাহুলের আজকের বক্তব্য নিয়ে নতুন কোনও কথা নয়। ক’দিন ধরেই অমিত শাহ, কংগ্রেসে কাজের খতিয়ান চাইছেন ‘রাহুলবাবা’র কাছে।

কংগ্রেস বলছে, রাষ্ট্রনায়কের মতো কথা বলেছেন রাহুল। মোদীর বিকল্প পথের সন্ধান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধেছেন। আবার পুরনো ভাবনার গণ্ডি পেরিয়ে নতুন পথে দলকে ঢেলে সাজার নকশাও মেলে ধরেছেন। এই সুযোগে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা প্রসঙ্গটিও ফের সামনে নিয়ে এসেছেন সলমন খুরশিদ। তা হলো রাহুলকে দলের সভাপতি করা। খুরশিদ বলেছেন, ‘‘রাহুল সভাপতি হলেই চাঙ্গা হবে গোটা কংগ্রেস। নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প ভাবনায় আশা জাগছে দলে।’’ রাহুল নিজেও শুনিয়েছেন, তিনি সভাপতি হলে আগামী দশ বছরের ‘ভিশন’ কী হবে। অকপটে বলেছেন, আর্থিক নীতিতে খুব বেশি ফারাক নেই বিজেপির সঙ্গে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ভাল ভাবনা। কিন্তু মোদীর মতো বড় শিল্পের বদলে রাহুল জোর দিতে চান ছোট ও মাঝারিতে। রাহুল মনে করেন, চিনা পথের বদলে ভারতে গণতান্ত্রিক পথেই বাড়তে পারে রোজগার। কৃষিতেও রোজগার বাড়ানো সম্ভব।

রাহুলের মতে, সকলকে সামিল করেই চলায় বিশ্বাসী কংগ্রেস। মোদী জমানায় ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং মেরুকরণের রাজনীতিতে সংখ্যালঘু, আদিবাসীরা নিজেদের সমাজের অংশিদার মনে করতে পারছেন না। আর তার সুযোগ নিচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র (পাকিস্তান)। এই জমানায় আইনও তৈরি করেন আমলারা। সেখানে সাধারণ মানুষের মতের প্রতিফলন কোথায়? রাহুলের আক্ষেপ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যেও পর্যাপ্ত খরচ নেই। নেই একুশ শতকের উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা।

রাহুলের এই টানটান, ধারালো ও পরিণত আক্রমণ, মোদী-বিরোধী মুখ হিসেবে তাঁর উত্থান— ইতিমধ্যেই কপালে ভাঁজ ফেলছে বিজেপির। ভারতীয় সময়ের হিসেবে কাল সকালে নিউ ইয়র্কে ফের বলবেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE