প্রতীকী ছবি।
দার্জিলিংয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দফতরে অস্ত্র উদ্ধার, এই সব ঘটনা ঘটার পরে রাজ্য সরকার যখন পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগকে দোষ দিচ্ছে, তখনই গোয়েন্দাদের দাবি, আপাতদৃষ্টিতে শান্তিকল্যাণ পাহাড়ে যে নিয়মিত উত্তর-পূর্ব থেকে অস্ত্র ঢুকছে, সে খবর ২০১৪ সালেই তাঁরা প্রশাসনকে দিয়েছিলেন। কিন্তু তখন রাজনৈতিক কারণ বা অতিরিক্ত আত্মতুষ্টির ফলে গোয়েন্দা রিপোর্টে পাত্তাই দেয়নি সরকার। সেই ঘটনাই এ বার বুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছে।
আইবি-র একাধিক কর্তা জানান, ২০১৪-র নভেম্বরে অসমের চিরাং জেলায় ধরা পড়ে গণেশ ছেত্রী ও উমেশ কামি নামে ইউনাইটেড গোর্খা পিপলস অর্গানাইজেশনের দুই সদস্য। এদের মধ্যে গণেশ এনএসসিএন শিবিরে রীতিমতো অস্ত্র প্রশিক্ষণ পাওয়া। কামি ছিল গরুবাথানে প্রশিক্ষণ নেওয়া জিএলপি ক্যাডার। তাদের সঙ্গে থাকা একটি টাটা সাফারি গাড়ির ভিতরের গোপন কুঠুরি থেকে উদ্ধার হয় একটি মার্কিন এম-১৬ রাইফেল, দু’টি বেরেটা পিস্তল, তিনটি ৩২ বোরের পিস্তল, ৩০০ রাউন্ড ৯ মিলিমিটার পিস্তলের গুলি, ৮০ রাউন্ড একে সিরিজ রাইফেলের গুলি ও ১৯৮ রাউন্ড এম-১৬ রাইফেলের গুলি ও ৬০টি .৩২ বোরের গুলি। উত্তরবঙ্গের গোয়েন্দারা অসমে এসে দু’জনকে জেরা করেন। জেরায় জানা যায়, ২০১২ সালে গোর্খা জাতীয় যুব মোর্চার উপ-সভাপতি সঞ্জয় থুলুংয়ের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়। পরে সঞ্জয় স্বশাসিত পরিষদের সদস্য হন। উমেশ ও গণেশ জানায়, থুলুংই নেপালি যুবকদের এনএসসিএনের কাছে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য নাগাল্যান্ডে পাঠাতেন। তেমন অনেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে মোর্চায় যোগ দিয়েছে। খাপলাং বাহিনীর কাছ থেকে তাদের জন্য অস্ত্র জোগাড় করার ভার গণেশ ও উমেশকে দেওয়া হয়েছিল। কামি দাবি করেছিল, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতাদের গাড়ি চালানোর সূত্রে সে নেতৃত্বের আস্থাভাজন হয়ে ওঠে। তাই তাকে গাড়ি দিয়ে সোজা নাগাল্যান্ডে অস্ত্র আনতে পাঠানো হয়েছিল। সঞ্জয় ২০০৭ সালে তৈরি হওয়া গোর্খা লিবারেশন আর্মির সদস্য ছিল বলে পুলিশ রিপোর্টে উল্লেখ ছিল। আইবি রিপোর্টে আরও উল্লেখ ছিল, বিমল গুরুঙ্গের তৈরি গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেল বাহিনীকে গরুবাথানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: আইএস-র হাতে ৩৯ পণবন্দি ভারতীয় জীবিত, জানাল বিদেশমন্ত্রক
তখনই গুরুঙ্গের সঙ্গে অসম-নাগাল্যান্ডের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ঘনিষ্ঠতা হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, স্বশাসিত পরিষদ গড়ার পরেও গোর্খা যুবকদের নাগাল্যান্ডে পাঠানো হচ্ছে, আধুনিক অস্ত্র নাগাল্যান্ড থেকে কিনে দার্জিলিংয়ে আনা হচ্ছে, একে সিরিজের রাইফেল নাগা জঙ্গিদের কাছ থেকে দাজিলিংয়ে পাঠানো হয়েছে এবং আগ্নেয়গিরির উপরে বসে রয়েছে পাহাড়— এ সবই ২০১৪ সাল থেকে রাজ্য সরকার জানত। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া বলতে, অসম পুলিশের ওই তদন্তের সূত্র ধরে সঞ্জয়ের ভাই বিজয়কে গ্রেফতার করা হয়। ওই সাফারি গাড়ির মালিক অম্বর ধোজ ওরফে ভুট্টোকে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে দার্জিলিং থেকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সঞ্জয় এখনও পলাতক।
আইবি-র বক্তব্য, বিমল গুরুঙ্গ, রোশন গিরিদের মতো নেতাদের অন্ধকারে রেখে মোর্চা নেতা বা পরিষদ সদস্যদের পক্ষে নাগাল্যান্ড থেকে ১৫-২০ লক্ষ টাকা খরচ করে অস্ত্র আমদানি করা কার্যত অসম্ভব। তাই রাজ্য সরকার তখনই সক্রিয় হলে আজকের পরিস্থিতি এড়ানো যেত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy