সংসদের অধিবেশন শুরুর ঠিক আগে অসহিষ্ণুতা বিতর্ক উস্কে দিয়ে বিরোধীদের হাতে বড় অস্ত্র তুলে দিয়েছেন আমির খান। তা নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া অধিবেশনে হইচই হবে না, তা নয়। কিন্তু সরকার পক্ষের কাছে মরুভূমির মধ্যেও মরুদ্যান হল, এই টানাপড়েনের আবহেও পণ্য ও পরিষেবা কর বিল নিয়ে অন্তত একটি সমঝোতায় আসতে চাইছে সরকারএবং বিরোধী দু’পক্ষই।
গত কালই অসহিষ্ণুতা নিয়ে আমির খানের মন্তব্যকে সমর্থন করে নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতায় নেমেছিলেন রাহুল গাঁধী। আজ এ নিয়ে আরও সুর চড়িয়েছেন তিনি। এই অবস্থায় সরকার অনড় থাকলে সংসদে হট্টগোল হবেই। কিন্তু বিহার নির্বাচনের পরে বিজেপির মনোবলে যে ধাক্কা লেগেছে, তার পর তারা খুব বেশি অনড় না থেকে বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতার পথেই হাঁটতে চাইছে। আজ সর্বদল বৈঠকে বিজেপি নেতা বেঙ্কাইয়া নায়ডুও বলেন, ‘‘অসহিষ্ণুতার ঘটনা সরকার কোনও ভাবেই সমর্থন করে না।’’
সরকারের এখন লক্ষ্য হল, অসহিষ্ণুতার প্রথম ধাক্কা সামলে সংসদের এই অধিবেশনে অন্তত পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) বিল পাশ করানো। কারণ ঝামেলা যা-ই থাক, এই বিলটি নিয়ে এখনও পর্যন্ত বিরোধী শিবির সহযোগিতারই বার্তা দিয়েছে। রাহুলও আজ বলেছেন, ‘‘জিএসটি বিলের সমর্থনে রয়েছি আমরা। কিন্তু আমাদের তিনটি মৌলিক আপত্তি রয়েছে। সেগুলি নিয়ে সরকারের আলোচনা করা উচিত।’’ দিল্লি এসে আজ পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও বলেন, ‘‘দেশের স্বার্থে আমরা নীতিগত ভাবে একে সমর্থন করছি। তবে রূপায়ণের ইস্যুগুলো নিয়ে লাগাতার সরব হব।’’ আজ সর্বদল বৈঠকে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সরকার বিরোধিতায় মুখ খোলেননি মুলায়ম সিংহ যাদব। উল্টে মুলায়মের দলের নেতা রামগোপাল যাদব জাতীয় বিচার কমিশনে সংসদের আধিপত্য কায়েম করার কথা বলে সরকারের সুরেই সুর মেলান। মায়াবতীও জিএসটি বিল সমর্থনের আশ্বাস দেন।
সরকার মনে করছে, বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার পথে গেলে এ বারের অধিবেশন আগের বারের মতো স্তব্ধ হয়ে যাবে না। গত কাল এক বণিকসভার অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বিভিন্ন বিল আটকে যাওয়ার জন্য পরোক্ষে কংগ্রেসের দিকে নিশানা করেছিলেন। আজকের বৈঠকে গুলাম নবি আজাদ প্রসঙ্গটি তুলে বলেন, এক দিকে আলোচনা আর অন্য দিকে সংঘাত— এক সঙ্গে চলতে পারে না। এই বক্তব্য শোনার পরে সরকারের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়, আলোচনা করেই এগোনো হবে।
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, গত বারের মতো না করে এ বারে সংসদ চালানোরই পক্ষপাতী তারা। কারণ, সংস্কারের বিভিন্ন পদক্ষেপ আটকে যাওয়ায় চাপ বাড়াচ্ছে শিল্পমহলও। কংগ্রেসের গায়ে শিল্প-বিরোধী তকমা এঁটে যাচ্ছে। এ বারে তাদের
বক্তব্য, যদি সরকার নানা বিষয়ে সদর্থক পদক্ষেপ করে, তা হলে তারাও নরম হবে। কিছু হলেই প্রধানমন্ত্রীকে বিবৃতি দিতে হবে বলে আগের মতো হইহই করা হবে না। এ প্রসঙ্গে গুলাম নবি আজাদের রসিকতা, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে এলে বড়জোর বিষয়টা নিয়ে জিজ্ঞাসা করব!’’
জিএসটি বিলে সমর্থন করলেও অসহিষ্ণুতা, মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয় নিয়ে সরকারকে চেপে ধরতে চায় কংগ্রেস। আর এই ফাঁকে তফসিলি জাতি ও উপজাতির উপর অত্যাচার রোখা সংক্রান্ত বিলটি পাশ
করিয়ে নিতে চান সনিয়া গাঁধী। তিনি চান, যে বিলই পাশ হোক, তাকে সমর্থন করে পুরো কৃতিত্ব যেন
নিতে পারে কংগ্রেস। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির মতে, সরকার আগেও এমন ভাব দেখিয়েছিল যে জমি বিল পাশ হলেই অর্থনীতির সুরাহা হবে। এখন পণ্য ও পরিষেবা কর বিল নিয়েও সেটাই করছে। সংসদের অধিবেশন শুধু একটি বিল-কেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয়। একই মত তৃণমূলেরও।
বিরোধীদের প্রতি নরম হওয়ার পাশাপাশি এনডিএ শরিকদেরও তুষ্ট রাখার কৌশল নিচ্ছেন শীর্ষ বিজেপি নেতারা। যে কারণে এ দিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে প্রথমে দলের সংসদীয় নেতাদের এবং পরে এনডিএ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। সেখানেই নরেন্দ্র মোদী জানান, প্রত্যেক দু’মাস অন্তর এনডিএ-র বৈঠক হবে। অথচ ঘটনা হল, গত এক বছরে এনডিএ-র একটিও বৈঠক হয়নি! তা নিয়ে বহু শরিক নেতা ক্ষোভ জানিয়েছেন। এত দিন এই বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও বিহার-পরবর্তী পরিস্থিতিতে শরিকদের মন পেতে সক্রিয় হয়েছেন তাঁরা। তবে তার মধ্যেও তাৎপর্যপূর্ণ হল, প্রথম বৈঠকে লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশীর মতো প্রবীণ নেতারা উপস্থিত থাকলেও পরের বৈঠকে তাঁদের থাকতে বলা হয়নি! অথচ আনুষ্ঠানিক ভাবে আডবাণী এখনও এনডিএর পদে রয়েছেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy