Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তৃতীয় নয়ন বন্ধ বলেই!

নীরব মোদী কেলেঙ্কারিতে তিনি ও তাঁর সরকার যে কোনও দায় নিতে নারাজ, নরেন্দ্র মোদী নিজেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন গত কাল। আজ সকালে তাঁর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আরও এক ধাপ এগিয়ে প্রশ্ন তুললেন, সব দায় সরকারকেই কেন নিতে হবে!

অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি

অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:২০
Share: Save:

দায় এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। দায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের। ব্যাঙ্ক-কর্তাদের তো বটেই। দায় শিল্পপতিদেরও।

নীরব মোদী কেলেঙ্কারিতে তিনি ও তাঁর সরকার যে কোনও দায় নিতে নারাজ, নরেন্দ্র মোদী নিজেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন গত কাল। আজ সকালে তাঁর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আরও এক ধাপ এগিয়ে প্রশ্ন তুললেন, সব দায় সরকারকেই কেন নিতে হবে! তাঁর খেদ, এই দেশে যত দায় সব রাজনীতিকদেরই নিতে হয়। জেটলির যুক্তি, নজরদারির দায়িত্ব যাদের, তাদের সর্বক্ষণ তৃতীয় নয়ন থাকতে হবে। সর্বক্ষণ সেই তৃতীয় নয়ন খুলে বসেও থাকতে হবে। ব্যাঙ্কের শীর্ষকর্তা থেকে অডিটরদের মধ্যে যাঁরা পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে প্রতারণা দেখেও চোখ বুজে ছিলেন, তদন্তে তাঁদেরও খুঁজে বার করা হবে বলে জেটলি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর সুরেই সরকার বাদে অন্য সকলের দায়ের কথা আজ মনে করিয়ে দিয়েছেন জেটলি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দিকে আঙুল তুলে বলেছেন, ‘‘নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারাই শেষ পর্যন্ত খেলার নিয়ম ঠিক করে। তাদের তৃতীয় নয়ন থাকা দরকার। যেটা সব সময় খুলে রাখতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হল, দেশে রাজনীতিকেরাই একমাত্র দায়বদ্ধ, নিয়ন্ত্রকেরা নন।’’

শিল্পপতিদেরও দুষছেন জেটলি। তাঁর যুক্তি, ‘‘শিল্পপতিদের নৈতিক ভাবে ব্যবসা করার অভ্যাস করতে হবে। ব্যাঙ্ক ও শিল্পপতিদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ করতে হবে।’’ ব্যাঙ্কের টাকা যাঁরা ফেরত দিচ্ছেন না, তাঁদের ছাড়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন জেটলি। তাঁর যুক্তি, এই ধরনের প্রতারণার ফলে ব্যবসার পরিবেশ সহজ করার কাজেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কারণ, বেআইনি কাজ রুখতে আইন কড়া করতে হয়। তাতে ব্যবসার পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, তিনিই হবেন দেশের চৌকিদার। নিজে খাবেন না। কাউকে খেতেও দেবেন না। নীরব মোদী, মেহুল চোক্সীরা ব্যাঙ্কের টাকা হাতিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার পরে মোদী-জেটলিরা অন্যদের ‘চৌকিদার’ ঠাওরেছেন। বিরোধীদের প্রশ্ন, সব দায়ই অন্যদের হলে মনমোহন সিংহ কী দোষ করেছিলেন? তাঁর জমানার দুর্নীতির জন্য বিজেপি প্রশ্ন ছুড়েছিল, প্রধানমন্ত্রী হয়েও মনমোহন কেন চোখ বুজে ছিলেন? একই প্রশ্ন তো তোলা যেতে পারে মোদীর বিরুদ্ধেও।

কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের কথায়, ‘‘নরেন্দ্র মোদী দেশের সব থেকে ব্যয়বহুল চৌকিদার। তিনি কেন নীরব মোদীকে পালাতে দিলেন? এখন সব দোষ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের! রাজনীতিকেরা ও অর্থ মন্ত্রক কেন জানবে না? রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সরকারের প্রতিনিধিই বা কী করছিলেন?’’ ব্যাঙ্ক পরিচালকদের ভূমিকা নিয়েও সরকার চিন্তিত বলে জানিয়েছেন জেটলি। নীরব কেলেঙ্কারির সময়ে পিএনবি-র পরিচালন বোর্ডে সরকারি প্রতিনিধি ছিলেন তাঁরই ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE