Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সমালোচক হয়েও পুবে পথ নেহরুই

 কথায় কথায় জওহরলাল নেহরুর সমালোচনা করে থাকেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু ইতিহাসের চাকা ঘুরে এমন পরিস্থিতি এসেছে, যখন বিদেশনীতির প্রশ্নে নেহরুর দেখানো পথেই পা বাড়াতে হচ্ছে তাঁকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৬
Share: Save:

কথায় কথায় জওহরলাল নেহরুর সমালোচনা করে থাকেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু ইতিহাসের চাকা ঘুরে এমন পরিস্থিতি এসেছে, যখন বিদেশনীতির প্রশ্নে নেহরুর দেখানো পথেই পা বাড়াতে হচ্ছে তাঁকে।

নেহরু জমানায় দেশের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের ‘থিম’ ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। মোদীর আমলে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে নতুন মোড়ক এ বার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার (আসিয়ান-ভুক্ত) ১০টি রাষ্ট্রের নেতাদের সম্মিলিত উপস্থিতি। তার ঠিক আগের দিন নয়াদিল্লিতে হবে ভারত-আসিয়ান শীর্ষ বৈঠক।

১৯৫০ সালে প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার নেতা সুকর্ণ। ঔপনিবেশিকতা-বিরোধী লড়াইয়ে (পরে যা নির্জোট আন্দোলনের রূপ নেয়) নেহরুর প্রধান সহযোদ্ধা ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পরই নেহরু স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছিলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ এবং সার্বিক এশিয়ার ঐক্যের প্রশ্নে দিল্লি মুখ্য ভূমিকা পালন করতে চাইছে। স্বাধীন ভারতের এশিয়া নীতিতে নিরাপত্তা সমঝোতার বিষয়টিতেও জোর দিয়েছিলেন নেহরু। তবে যাটের দশক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের সেই সখ্য ফিকে হয়ে আসতে শুরু করে। প্রাসঙ্গিকতা হারায় নির্জোট আন্দোলনও।

কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের আগের সেই সংযোগই ফিরে আসছে মোদীর ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির নতুন মোড়কে। কূটনীতির লোকজন মনে করছেন, এশিয়া-নীতিতে চিনের একচেটিয়া বাড়বাড়ন্ত রুখতে আঞ্চলিক মঞ্চকে শক্তিশালী করাটাই মোদীর লক্ষ্য। এবং সেটাই তাঁর ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির প্রাথমিক উদ্দেশ্য। ২৫ তারিখের ভারত-আসিয়ান বৈঠকে সমুদ্র নিরাপত্তা থেকে আঞ্চলিক সংযোগ— সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে। কূটনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধি, শান্তি ও সম্প্রীতির পাশাপাশি, ভারতের জাতীয় স্বার্থও জড়িয়ে আছে নয়াদিল্লির এর সঙ্গে। গত কয়েক বছরে দক্ষিণ চিন সাগরে বেজিংয়ের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আসিয়ানকে প্রয়োজন নয়াদিল্লির। বাণিজ্যিক স্বার্থের দিকটি নিয়েও টনক নড়েছে সরকারের। চিনের সঙ্গে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলির ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৭ হাজার কোটি ডলার। তুলনায় ভারতের সঙ্গে এই বাণিজ্য এখনও অকিঞ্চিৎকর, মাত্র ৭১০ কোটি ডলার। তবে এটাও ঘটনা যে চিনের সঙ্গে বিপুল বাণিজ্য করলেও ভূকৌশলগত রাজনীতিতে আসিয়ান দেশগুলির মধ্যে চিন-বিরোধী মনোভাব বাড়ছে। দিল্লিতে আসিয়ান-উৎসব করে মোদী এই পরিস্থিতিকেই কাজে লাগাতে চান।

তবে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলির মধ্যে থেকে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, অতিরিক্ত জাতীয়তাবাদ এবং জনপ্রিয়তার রাজনীতি সংযোগ বাড়ানোর প্রয়াসে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো? ভারতের নাম না করে কিছুটা বেসুরে বেজেছেন নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত তাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত চুতিনন্ত্রণ স্যাম গোঙ্গসাকি। তাঁর কথায়, ‘‘(ভারত-আসিয়ান) সংযোগ বাড়ানো অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু আমরা এমন একটি অঞ্চলে রয়েছি যেখানে জাতীয়তাবাদ এবং জনপ্রিয়তার রাজনীতি ক্রমশই বাড়ছে। বাণিজ্য যোগাযোগ আরও সমৃদ্ধ করতে হলে জাতীয়তাবাদী বুকনি বন্ধ করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE