Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বেজিংয়েরই পথে ‘বন্ধু’ মায়ানমার

চিনের মতো হতাশ করল মায়ানমারও। সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানকে একঘরে করতে মায়ানমারের নেত্রী আউং সান সু চি-কে পাশে পেতে চেয়েছিল ভারত। শান্তির নোবেলজয়ী এই নেত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফর ছিল এর জন্য উৎকৃষ্ট সময়।

আউং সান সু চি-র সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। বুধবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

আউং সান সু চি-র সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। বুধবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৪৯
Share: Save:

চিনের মতো হতাশ করল মায়ানমারও। সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানকে একঘরে করতে মায়ানমারের নেত্রী আউং সান সু চি-কে পাশে পেতে চেয়েছিল ভারত। শান্তির নোবেলজয়ী এই নেত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফর ছিল এর জন্য উৎকৃষ্ট সময়।

কিন্তু নরেন্দ্র মোদী তথা ভারত সরকারকে এক প্রকার হতাশই করলেন সু চি। স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, সন্ত্রাসবাদকে কোণঠাসা করতে তিনি রাজি। কিন্তু কোনও দেশ বা সংগঠনের বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন না তিনি।

তিন দিনের জন্য ভারতের মাটিতে পা রেখেছেন সু চি। আজ সফরের শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক ছিল মায়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও বিদেশমন্ত্রী সু চি-র। সেখানেই সে দেশের রাখাইন এলাকার জাতিদাঙ্গা এবং সাম্প্রতিক সন্ত্রাসের (অভিযোগ, যার সঙ্গে পাক মদতপ্রাপ্ত একটি জঙ্গি সংগঠন যুক্ত) নিন্দা করে নয়াদিল্লি। উদ্দেশ্য ছিল, সন্ত্রাস প্রশ্নে নেপিদওয়ের সহমর্মিতা পাওয়া। ও পাকিস্তানকে চাপে ফেলা। এক কথায় সে কাজে সাফল্য পেল না ভারত। সু চি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদকে একঘরে করতে হবে, কোনও দেশ বা ব্যক্তিকে নয়।

আপাত দৃষ্টিতে মায়ানমারের সঙ্গে ভারতের এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অবশ্য সফল। নিরাপত্তার প্রশ্নে নয়াদিল্লির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন সু চি। মায়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের জমিকে কোনও প্ররোচনাতেই ভারত-বিরোধী কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।

পাশাপাশি আজ শক্তি, ব্যাঙ্কিং এবং বিমা ক্ষেত্রে তিনটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও সই করেছে ভারত-মায়ানমার। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপের কথায়, ‘‘পূর্ব দেশের এক পুরনো বন্ধু, আমাদের যৌথ প্রগতির অংশীদার মায়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরকে প্রধানমন্ত্রী আজ স্বাগত জানিয়েছেন।’’ মোদী নিজেও মায়ানমারকে ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন।

কিন্তু বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা বা ভুটানের মতো সার্কভূক্ত দেশগুলি যে ভাবে পাকিস্তান প্রশ্নে কোমর বেঁধে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছিল, সে চেষ্টা দেখা যায়নি সু চি-র মধ্যে। সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সন্ত্রাসবাদ গোটা বিশ্বের সমস্যা। একে কোণঠাসা করে নির্মূল করতে হবে। তবে আমি কোনও ব্যক্তি বা সংগঠন বা কোনও দেশের নিরিখে বিষয়টিকে দেখতে চাই না।’’ আসলে সু চি-র ইঙ্গিত স্পষ্ট। চিনের অবস্থানকে অনুসরণ করেই পাকিস্তানের সঙ্গে বৈরিতার পথে যেতে চাইছে না মায়ানমার। এ বিষয়ে চিন এবং মায়ানমারের মধ্যে যথেষ্ট বোঝাপড়া আছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

তবে বিষয়টি ভারতের পক্ষে কিছুটা অস্বস্তির। রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিদ্রোহী সংগঠন ‘রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন’-এর সঙ্গে যুক্ত যে ‘আক্কা-মূল-মুজাহিদিন’ সংগঠনটি মায়ানমারের রাখাইন এলাকায় সন্ত্রাস চালিয়েছে, তার সদস্যরা পাকিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। নয়াদিল্লির কৌশল ছিল, এই বিষয়টিকে সামনে এনে পাকিস্তান প্রশ্নে মায়ানমারকে পাশে পাওয়া। কিন্তু সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করলেও, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রশ্নে যে সু চি ইসলামাবাদের বিরোধিতা করবেন না, তা আজ তাঁর বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Aung San Suu Kyi terrorism issue Narendra modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE