Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ছুঁলেন না জমি বিল, আর্থিক সংস্কার প্রসঙ্গ

কংগ্রেসের ‘বুরে দিন’, বিঁধলেন মোদী

তখন নিশানায় ছিল ইউপিএ সরকার। বিরোধী মঞ্চ থেকে ডাক দিয়েছিলেন সেই সরকারকে হটিয়ে ‘সুদিন’ (অচ্ছে দিন) আনার। এক বছর দেশের কর্ণধারের আসনে থাকার পরে এখন তিনিই বিরোধীদের আক্রমণের মূল লক্ষ্য। আর সেই ‘রিভার্স সুইং’ সামলাতে গিয়ে আজ পাল্টা আক্রমণে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর মুখে এক দিকে শোনা গেল ‘‘দুর্দিন (বুরে দিন) তো ঘুচেছে।’’ সেই সঙ্গে কটাক্ষ, ‘‘যাঁরা কুকীর্তি করেছেন, তাঁদের জন্য বুরে দিন এসেছে।’’

ফ্রেমবন্দি। সোমবার মথুরা জেলায় জনকল্যাণ সভার মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে বিশেষ স্মারক তুলে দিলেন বিজেপি সাংসদ হেমা মালিনী। ছবি: পিটিআই

ফ্রেমবন্দি। সোমবার মথুরা জেলায় জনকল্যাণ সভার মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে বিশেষ স্মারক তুলে দিলেন বিজেপি সাংসদ হেমা মালিনী। ছবি: পিটিআই

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নাঙ্গলা চন্দ্রভান গ্রাম (মথুরা) শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০৩:২২
Share: Save:

তখন নিশানায় ছিল ইউপিএ সরকার। বিরোধী মঞ্চ থেকে ডাক দিয়েছিলেন সেই সরকারকে হটিয়ে ‘সুদিন’ (অচ্ছে দিন) আনার। এক বছর দেশের কর্ণধারের আসনে থাকার পরে এখন তিনিই বিরোধীদের আক্রমণের মূল লক্ষ্য। আর সেই ‘রিভার্স সুইং’ সামলাতে গিয়ে আজ পাল্টা আক্রমণে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর মুখে এক দিকে শোনা গেল ‘‘দুর্দিন (বুরে দিন) তো ঘুচেছে।’’ সেই সঙ্গে কটাক্ষ, ‘‘যাঁরা কুকীর্তি করেছেন, তাঁদের জন্য বুরে দিন এসেছে।’’
গত এক বছরের কাজের হিসেব দিতে প্রধানমন্ত্রী বেছে নিয়েছিলেন জনসঙ্ঘের প্রয়াত নেতা দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ছোট্ট গ্রাম নাঙ্গলা চন্দ্রভানকে। রাজধানী দিল্লি থেকে দূরে, উত্তরপ্রদেশের মথুরার কাছে এই গ্রামের তাঁকে দেখতে উপচে পড়েছিল আমজনতার ভিড়। সেখানেই এত জোর দিয়ে ‘বুরে দিন’-এর কথা কেন?

দিল্লির রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের মতে, গত এক বছরে মোদী সরকারের গায়ে ‘গরিব-বিরোধী’, ‘কর্পোরেট বন্ধু’ তকমাটি অনেকটাই সেঁটে দিতে সমর্থ হয়েছেন বিরোধীরা। জমি বিল নিয়ে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে মোদী সরকারকে ‘কৃষক-বিরোধী’ আখ্যাও দিয়েছেন তাঁরা। বারবার দাবি করেছে, প্রতিশ্রুতি দিয়েও মোদী সুদিন আনতে পারেননি।

তাই ‘অচ্ছে দিনের’ পাশাপাশি বিরোধীদের, বিশেষ করে কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে ‘বুরে দিন’-কেও অস্ত্র করলেন মোদী। কারণ, তিনি বিলক্ষণ জানেন, লোকসভা ভোটের সময় ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে যে পাহাড়প্রমাণ প্রত্যাশা মানুষের মনে ভিড় করেছে, তার অধিকাংশই পূরণ করতে পারেনি তাঁর সরকার।

সে কারণে আজ জমি বিলের মতো বিতর্কিত প্রসঙ্গের ধারেকাছে ঘেঁষেননি মোদী। অদূর ভবিষ্যতে সেচে আরও বিনিয়োগ হবে বলে লগ্নির কথা সেরে ফেললেন। বললেন না বড় কোনও সংস্কারের পদক্ষেপের কথাও, পাছে তা নিয়ে আবার ‘কর্পোরেট-বন্ধু’ বলে তাঁকে বেশি করে দাগিয়ে দেন বিরোধীরা। মূল্যবৃদ্ধি রোখা নিয়েও বড় কোনও দাবি করলেন না। বললেন, রাশ টানা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে কমেছেও। রোজগার কত বেড়েছে, তার পরিসংখ্যানও দিতে পারলেন না। বললেন, দক্ষতা উন্নয়ন থেকে মুদ্রা ব্যাঙ্কের মতো পদক্ষেপে রোজগার আরও বাড়বে।

বরং মোদী ঘটা করেই বললেন, এক বছরে দিল্লির অলিন্দ থেকে দালালদের হটিয়ে দিয়েছেন তিনি। নিজের স্লোগানকে সামান্য বদলে বললেন, দুর্দিন ঘুচতে শুরু করেছে। আর সেই সুযোগে ঢুকে পড়লেন বিরোধীদের আক্রমণের বাইশ গজে। বললেন, ‘‘এখন যাঁরা চিৎকার করছেন, যাঁরা কুকীর্তি করেছেন, তাঁদের সুদিন আনার কোনও নিশ্চয়তা আমি দিতে পারব না। তাঁদের আরও খারাপ দশা হবে। অনেকেরই সুদিন এসেছে, আর কিছু লোকের দুর্দিন।’’

নিঃসন্দেহে এই যাবতীয় অভিযোগ মোদী আনলেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, এবং সুকৌশলে। কারণ, কংগ্রেসই গত এক বছরে সরকারের ভাবমূর্তিকে খাটো করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তারই জবাব দিতে মোদী আজ ইউপিএ-র প্রসঙ্গ টেনে আনলেন। এবং গত এক বছরে সরকারের সব চেয়ে বড় সাফল্য যে দুর্নীতি দমন, সেটিই মেলে ধরলেন জনতার সামনে। জনধন প্রকল্প, গ্যাসের সরাসরি ভর্তুকি দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তগুলিও যে দুর্নীতি রোধের অঙ্গ, রাজীব গাঁধী জমানার সঙ্গে তুলনা টেনে বোঝালেন সেটিও।

অনেকেই বলছেন, নিজের সরকারের দুর্বলতা থেকে চোখ ঘোরাতেই প্রধানমন্ত্রী ইউপিএ জমানার প্রসঙ্গকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। একের পর এক প্রশ্ন করে বোঝাতে চেয়েছেন, আরও এক বছর ইউপিএ ক্ষমতায় থাকলে দেশ আরও ডুবত। ‘রিমোট কন্ট্রোলে’ চালিত সরকারের আমলে ফেঁপে উঠত দুর্নীতি। আরও নেতার জেলে যাওয়া, ক্ষমতাশালীর জামাইয়ের দুর্নীতির কথা জানতে পারতেন দেশবাসী। স্পষ্টতই তাঁর নিশানায় কংগ্রেস তথা গাঁধী পরিবার।

তবে সবটাই আক্রমণ নয়। নিজের কথা কিছু ছিল তাঁর। জানালেন, কিছু পদক্ষেপ শুরু হয়েছে এক বছরে। বাকি মেয়াদে আরও হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি দিতে গিয়েও কোথাও যাতে সরকারকে গরিব-বিরোধী তকমা নিয়ে চলতে না হয়, সে জন্য এক বছরের খতিয়ানে ফুটিয়ে তুলতে চাইলেন গরিব-দরদি ভাবমূর্তি। ছোট ছোট পদক্ষেপও যে শুধুমাত্র গরিবদের কল্যাণেরই জন্য, সেটাই বললেন বারবার। বললেন, ‘‘গরিবদের ফৌজ তৈরি করছি। তাঁরাই আমার সেনাপতি। তার জন্য চাই আপনাদের আশীর্বাদ। যাতে নতুন শক্তিতে কাল থেকে নতুন বছর শুরু করতে পারি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE