Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জাতীয় নাগরিক পঞ্জী নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যেতে চান বরাকবাসী

জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এন আর সি) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাবেন বরাক উপত্যকার মানুষ। আজ এক নাগরিকসভায় এ বিষয়ে ‘বরাকভ্যালি হিউম্যান রাইটস প্রোটেকশন সোসাইটি’-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সভায় উপস্থিত জনতা। প্রাথমিক ভাবে আগামী ১৮ মে শহিদ ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে দু’ঘণ্টা ধর্না চলবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০৩:৪২
Share: Save:

জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এন আর সি) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাবেন বরাক উপত্যকার মানুষ। আজ এক নাগরিকসভায় এ বিষয়ে ‘বরাকভ্যালি হিউম্যান রাইটস প্রোটেকশন সোসাইটি’-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সভায় উপস্থিত জনতা। প্রাথমিক ভাবে আগামী ১৮ মে শহিদ ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে দু’ঘণ্টা ধর্না চলবে।

ওই সভায় নুরুল আলম মজুমদার, নীলাদ্রি রায়, হরিদাস দত্ত-সহ অন্য বক্তারা জানান— যে পদ্ধতিতে এন আর সি নবীকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাতে অনেক ভারতীয় নাগরিকের নামও বাদ যাবে। ৪৫ বছর আগের নথি গ্রামীণ বরাকের অনেক বাড়িতেই নেই। এমনকী, শহরের মানুষকেও পুরনো কাগজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হচ্ছে।

অসমে এন আর সি নবীকরণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে। তাই তাঁরা সর্বোচ্চ আদালতেই বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে চান। অন্য রাজ্যের মত এখানেও সমস্ত ভোটারের নাম এন আর সি-তে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানাবেন সকলে।

এ দিকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী খোঁজার নামে এন আর সি-তে অসমের জন্য বিশেষ প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হলেও, ১৯৭১ সালের নথি দেখানোর নির্দেশে বরাক উপত্যকার হিন্দিভাষীরাও উদ্বেগে। বরাক চা জন জাগৃতি মঞ্চ এবং হিন্দিভাষী সমন্বয়ভাষী যৌথ ভাবে এক স্মারকপত্র পাঠিয়ে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। কাছাড়ের অতিরিক্ত জেলাশাসক বরেণ্য দাসের হাতে ওই স্মারকপত্র তুলে দেন তাঁরা। পরে দুই সংগঠনের পক্ষে দিলীপ কুমার, জহরলাল পাণ্ডে জানান, বরাক উপত্যকায় কয়েকশো বছর ধরে হিন্দিভাষীরা বসবাস করছেন। তাঁদের একটি বড় অংশ চা শ্রমিক হিসেবে এখানে এসেছিলেন। তাঁরা না জানেন পড়াশোনা, না বাইরের জগৎ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান রয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগড়, ওড়িশা-সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে তাঁদের নিয়ে আসা হয়েছিল। রয়েছেন তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রমিকরাও।

ভারতের নাগরিক হলেও তাঁদের কাছে কোনও সরকারি নথি নেই। পূর্বপুরুষরা কে কোন বাগানে থাকতেন, কোথায় ভোট দিতেন— সে সব কারও জানা নেই। তাই পুরনো ভোটার তালিকা থেকে ‘লিগ্যাসি ডেটা’ সংগ্রহ করতে পারছেন না। বাড়িঘর নেই বলে বিদ্যুতের বিল বা দলিল নেই।

বাগান থেকে রেশন সামগ্রী সরবরাহ করা হয় বলে নেই রেশন কার্ডও। পাসপোর্ট, জীবনবিমা এবং অন্যান্য যে সব কাগজের সুবিধের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলির কথা আজও তাঁরা ভাবতে পারেন না।

এই অবস্থায় হিন্দিভাষী সংগঠনের নেতৃত্ব চা শ্রমিকদের বিষয়টিকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানান। বরাকের লক্ষাধিক চা ও প্রাক্তন চা জনগোষ্ঠীর মানুষ যেন এন আর সি-তে নাম তোলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হন, তার উপায় বের করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ জানান।

এ দিকে, এন আর সি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা গৌতম রায় বলেন, ‘‘বরাকের মানুষ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। রাজ্য সরকার পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE