Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কংগ্রেসের নয়া তথ্যে আরও চাপে বসুন্ধরা

ঢোলপুরের প্রাসাদ তা হলে কার? সরকারের? না ঢোলপুরের একদা মহারানি তথা রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে ও তাঁর পুত্র দুষ্মন্ত সিংহের? ঢোলপুর প্রাসাদ নিয়ে বসুন্ধরাকে আরও চাপে ফেলতে আজ চারটি নতুন নথি সামনে আনল কংগ্রেস। ললিত মোদীর সঙ্গে বসুন্ধরার আর্থিক যোগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতেই গত কাল ঢোলপুরের অন্দরমহলের কাহিনি প্রকাশ্যে আনতে সচেষ্ট হয়েছিল কংগ্রেস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ০৪:০৬
Share: Save:

ঢোলপুরের প্রাসাদ তা হলে কার?

সরকারের? না ঢোলপুরের একদা মহারানি তথা রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে ও তাঁর পুত্র দুষ্মন্ত সিংহের?

ঢোলপুর প্রাসাদ নিয়ে বসুন্ধরাকে আরও চাপে ফেলতে আজ চারটি নতুন নথি সামনে আনল কংগ্রেস। ললিত মোদীর সঙ্গে বসুন্ধরার আর্থিক যোগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতেই গত কাল ঢোলপুরের অন্দরমহলের কাহিনি প্রকাশ্যে আনতে সচেষ্ট হয়েছিল কংগ্রেস। তাদের দাবি ছিল, ঢোলপুর রাজওয়াড়া যখন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়, তখনই ঠিক হয়েছিল, আগরা থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরে লাল বেলেপাথর (স্যান্ডস্টোন) দিয়ে গড়া ঢোলপুরের এই প্রাসাদ সরকারের সম্পত্তি বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু কংগ্রেসের অভিযোগ উড়িয়ে বসুন্ধরা-ঘনিষ্ঠ রাজস্থানের বিজেপি সভাপতি অশোক পরনামী কাল দাবি করেছিলেন, মহারাজা হেমন্ত সিংহের সঙ্গে বসুন্ধরার বিবাহ বিচ্ছেদের পর আদালতের হস্তক্ষেপে যে সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়, তাতে দুষ্মন্ত সিংহ প্রাসাদের মালিকানা পান। মজার ব্যাপার হল, কাল আদালতের যে কাগজ দূর থেকে দেখিয়ে বসুন্ধরা-বাহিনী প্রাসাদের কব্জা ধরে রাখতে চেয়েছিল, সেই কাগজকে অস্ত্র করেই আজ ঢোলপুর-কিস্সা নিয়ে হইচই ফেলতে চাইল কংগ্রেস। তাদের দাবি, এর পর মুখ্যমন্ত্রীর তখত থেকেও বসুন্ধরাকে সরানো উচিত।

ঢোলপুর প্রাসাদ নিয়ে গত কালই কংগ্রেসের দাবি উড়িয়েছিল বিজেপি। সূত্রের খবর, পাল্টা দিতে কংগ্রেস গত কালই নতুন চার প্রস্ত নথি বের করার কথা ভেবেছিল। পরে ঠিক হয়, বিষয়টি জিইয়ে রাখা হবে। তাই আজ দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করতে গিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘যত দিন না বসুন্ধরার দুর্নীতি মামলার ‘ক্লোজার’ (নিষ্পত্তি) করছেন প্রধানমন্ত্রী, তত দিন রোজ ‘ডিসক্লোজার’ (তথ্য ফাঁস) চলবে! দেখা যাক, প্রধানমন্ত্রী আর ক’দিন কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমোতে পারেন!’’

জয়রাম এ দিন জাতীয় সংগ্রহশালা থেকে পাওয়া ১৯৪৯ সালের একটি কাগজ সামনে আনেন। যাতে লেখা, ঢোলপুরের রাজওয়াড়া ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর কিছু সম্পত্তি রাজা উদয়ভান সিংহের কাছে থাকবে। কিছু চলে যাবে সরকারি মালিকানায়। যেমন দিল্লিতে ঢোলপুর হাউস এখন ইউপিএসসি-র সদর কার্যালয়। অর্থাৎ তা ভারত সরকারের সম্পত্তি। তেমনই ঢোলপুর প্রাসাদের ক্ষেত্রে বলা ছিল, রাজা উদয়ভান সিংহ যত দিন জীবিত থাকবেন, তত দিন তিনি ওই প্রাসাদে থাকবেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর সেটি সরকারি মালিকানায় চলে যাবে। কংগ্রেসের দ্বিতীয় অভিযোগ, ২০১০ সালে ঢোলপুর প্রাসাদ চত্বরের ৬০০ বর্গমিটার জমি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণ করেছিল। সে জন্য প্রায় ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করেন দুষ্মন্ত সিংহ। কংগ্রেসের অভিযোগ, বেআইনি ভাবে ওই কাজ করেছিলেন দুষ্মন্ত। তাই তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই মামলা চেয়ে তিন বছর পরে আবেদন জমা পড়ে। কংগ্রেসের সর্বশেষ অভিযোগ, ২০০৭ সালে মহারাজা হেমন্ত সিংহের সঙ্গে তাঁর ছেলে দুষ্মন্তের সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে চূড়ান্ত রফা হয় অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। কংগ্রেসের অভিযোগ খণ্ডন করতে সেই আদেশনামাটিই গত কাল দূর থেকে দেখিয়েছিল বিজেপি। আজ কংগ্রেস সেই আদেশনামার প্রতিলিপি সাংবাদিকদের হাতে তুলে দেয়। তাতে লেখা রয়েছে, ঢোলপুর প্রাসাদের আসবাব-সহ অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তি দুষ্মন্ত সিংহের। ওই আদেশনামায় হেমন্ত এবং দুষ্মন্তের সইও রয়েছে। কংগ্রেসের তরফে এ দিন ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, হেমন্ত ও দুষ্মন্তের মধ্যে মামলায় ঢোলপুর প্রাসাদের মালিকানা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কেবল উত্তরাধিকার নিয়ে তাঁদের মধ্যে যে মিটমাট হয়েছিল তা-ই স্বীকার করে নেয় আদালত। ঢোলপুরের প্রাসাদ ফের দুষ্মন্ত, বসুন্ধরা বা হেমন্তের হাতে গিয়েছে, এমন কোনও নথি এখনও বসুন্ধরা শিবির দেখাতে পারেনি।

জয়রাম এ দিন বলেন, ‘‘গত কাল এই কাগজটি দেখিয়েই সংবাদমাধ্যমকে বোকা বানাতে চেয়েছিলেন বসুন্ধরার অনুগামীরা। কিন্তু চালাকি ধরা পড়ে গিয়েছে!’’ যদিও রাজস্থান বিজেপির দাবি, ১৯৫৮ সালে সরকারের সঙ্গে রাজ পরিবারের একটি চুক্তি হয়। তখন ঢোলপুর প্রাসাদ ফের ব্যক্তি মালিকানায় আসে। কিন্তু কংগ্রেসের বক্তব্য, ‘‘তাই যদি হয়, তা হলে রাজস্ব দফতরের খাজনার কাগজে কেন ২০১০ সালেও এটিকে সরকারি সম্পত্তি হিসেবে উল্লেখ করা থাকবে? অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের কাগজও কি মিথ্যা!’’

সম্পত্তি নিয়ে আদালতের ওই আদেশনামাটিই দেখিয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি আজও কংগ্রেসের অভিযোগ খণ্ডন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, সাংবাদিকরা তার প্রতিলিপি চাইলে, তিনি দিতে রাজি হননি। প্রশ্ন উঠেছে, প্রাসাদটি যদি প্রকৃতই দুষ্মন্তের সম্পত্তি হয়, সে ক্ষেত্রে মিউটেশন ও রেজিস্ট্রেশনের কাগজ তো তাঁর কাছে থাকা উচিত। বিজেপি নেতারা তো সেটাও দেখাতে পারেন। কিন্তু এ দিন অন্তত তা দেখাতে পারেননি বিজেপি নেতারা!

গত কালের মতো আজও প্রশ্ন উঠেছে, ললিত মোদী বিতর্কে ঢোলপুর প্রাসাদ কতটা প্রাসঙ্গিক? জয়রামের জবাব, ‘‘রাজ পরিবারের অন্দরের ঝঞ্ঝাট নিয়ে কংগ্রেসের মাথাব্যথা নেই। কংগ্রেস এটাই প্রমাণ করতে চাইছে যে, বসুন্ধরার সঙ্গে ললিত মোদীর আর্থিক আঁতাঁত ছিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ঢোলপুরের প্রাসাদ হেরিটেজ হোটেলে রূপান্তরিত করে বসুন্ধরা ও ললিত টাকা আয় করেছেন। সরকারি সম্পত্তি এ ভাবে কব্জা করে মুনাফা করার জন্যও ওঁদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত।’’

বসুন্ধরার পাশাপাশি তাঁরা যে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বিষয়টিও মাথায় রাখছেন, তা স্পষ্ট করে জয়রাম বলেন, ‘‘মানবিক কারণে ললিত মোদীকে ভিসা পাইয়ে দিতে তথা পালিয়ে থাকতে সাহায্য করেছিলেন সুষমা! সেই মানবিক কারণটা কী?’’

তাৎপর্যপূর্ণ হল, শুধু বসুন্ধরা বা সুষমা নন, বিজেপির যে সব মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের সকলকে নিয়েই ধুন্ধুমার বাধাতে চাইছে কংগ্রেস। তাই মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে মিথ্যা হলফনামার বিরুদ্ধে যেমন ছাত্র কংগ্রেস আন্দোলনে নামছে, তেমনই মধ্যপ্রদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েও মাঠে নামতে চাইছে তারা। কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, সনিয়া গাঁধী আজই দেশে ফিরেছেন। কাল ফিরবেন রাহুল গাঁধী। তার পরই ভবিষ্যতের কৌশল ঠিক হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE