Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নিশানা দিল্লি, চিনের নজরে পাক চুল্লিও

বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সংসদীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের খুশাব এলাকায় একটি পরমাণু চুল্লি গড়ে তুলছে ইসলামাবাদ। চুল্লিটি বকলমে চিনই তৈরি করছে। এর ফলে ওই চুল্লিতে যুদ্ধাস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় প্লুটোনিয়াম তৈরি করতে পারবে পাকিস্তান।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ১১:৩০
Share: Save:

পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরমাণু অস্ত্রের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছে বেজিং। গত শুক্রবার বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই তথ্যটি জানিয়েছেন খোদ বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। এ ব্যাপারে নয়াদিল্লি যে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন, সে কথা উল্লেখ করে বিদেশ সচিবের বক্তব্য, পাকিস্তানকে কাজে লাগিয়ে পরমাণু বোমা নিয়ে রক্তচক্ষু দেখাতে তলে তলে বড় মাপের প্রস্তুতি নিচ্ছে বেজিং। সূত্রের খবর, এই বিষয়ে বিস্তারিত শোনার পরে সংসদীয় কমিটি-র পক্ষ থেকে অবিলম্বে পরমাণু-ক্ষেত্রে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে কেন্দ্রকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই বিশেষ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে লোকসভা স্পিকারের কাছে একটি রিপোর্টও জমা দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।

বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সংসদীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের খুশাব এলাকায় একটি পরমাণু চুল্লি গড়ে তুলছে ইসলামাবাদ। চুল্লিটি বকলমে চিনই তৈরি করছে। এর ফলে ওই চুল্লিতে যুদ্ধাস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় প্লুটোনিয়াম তৈরি করতে পারবে পাকিস্তান। এখানেই শেষ নয়। জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের মীনওয়ালি জেলার চাসমা কলোনীর কাছে তৈরি হওয়া ৪টি পরমাণু চুল্লি এবং করাচিতে প্রস্তাবিত দু’টি চুল্লির জ্বালানি সরবরাহের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে বেজিং। পাকিস্তানের বর্তমান পরমাণু চুল্লিগুলিই শুধু নয়, প্রস্তাবিত এবং নির্মীয়মান সব ক’টি পরমাণু চুল্লি চালানোর ‘খরচের একটি বড় অংশ’ সাগ্রহে ঘাড়ে নিয়েছে চিন। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, ১৯৬০ সাল থেকেই পাকিস্তানের পরমাণু প্রকল্পে সাহায্য করছে বেজিং। কিন্তু এখন বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে কার্যত পাকিস্তানের গোটা পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডারই চিনের নিয়ন্ত্রণে। সে দেশের পরমাণু জ্বালানির জন্য খননকার্য, পরমাণু ওয়্যারহেডের নকশা তৈরি, প্রযুক্তি এবং কাঁচামাল হস্তান্তর, পরমাণু বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ— সব ক্ষেত্রেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে বেজিং।

সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাকিস্তান-চিন পরমাণু যোগসাজশ নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। যে রিপোর্টটি পেশ করা হয়েছে, তাতে ইসলামাবাদের ‘ক্রমবর্ধমান পরমাণু অস্ত্র সম্ভার’-এর কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের পরমাণু নীতি ‘ইচ্ছাকৃত ভাবে ধোঁয়াটে’ রাখা হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, প্রথমেই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার না-করা নিয়ে (নো ফার্স্ট ইউজ) ভারতের নীতি স্পষ্ট। অথচ ইসলামাবাদ ইচ্ছাকৃত ভাবে তাতে ফাঁক রেখে দিয়েছে।

পাকিস্তান থেকে পরমাণু অস্ত্র ভারত-বিরোধী জঙ্গিদের হাতে পৌঁছতে পারে— এমন উদ্বেগের কথা বেশ কিছু দিন থেকেই আন্তর্জাতিক স্তরে জানিয়ে আসছে নয়াদিল্লি। আশঙ্কায় বৃত্তে এ বার জুড়ে গিয়েছে চিনের ভূমিকাও। বর্তমানে ডোকলাম পরিস্থিতি নিয়ে চিনের সঙ্গে তৈরি হওয়া টানাপড়েন বেজিং-নিয়ন্ত্রিত পাক পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডারে না পড়ে— সেই দিকটি নিয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু করতে বাধ্য হয়েছে নয়াদিল্লি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE