Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

অনলাইনে হুঁশিয়ার! হতে পারেন পণবন্দি

এমনিতে তিনি মোটামুটি প্রাচীনপন্থী। ক্যাশ, চেক, ডেবিট কার্ডের বাইরে বেরোন না। মোবাইল ফোনে অনলাইন ওয়ালেট তো নয়-ই। কিন্তু পাঁচশো, হাজারের নোট বাতিল হওয়ায় ঘেরাটোপ ছেড়ে বেরোতে হয়েছে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:০৯
Share: Save:

এমনিতে তিনি মোটামুটি প্রাচীনপন্থী। ক্যাশ, চেক, ডেবিট কার্ডের বাইরে বেরোন না। মোবাইল ফোনে অনলাইন ওয়ালেট তো নয়-ই। কিন্তু পাঁচশো, হাজারের নোট বাতিল হওয়ায় ঘেরাটোপ ছেড়ে বেরোতে হয়েছে। খুচরো কেনাকাটার জন্য মোবাইল ওয়ালেটে কয়েক হাজার টাকা ভরে নিয়েছেন লালাবাজারের গোয়েন্দা-অফিসারটি!

শুধু উনি নন। বৈধ নোটের আকালের বাজারে বহু লোকই সেই রাস্তা ধরেছেন। নগদে লেনদেন এড়ানোর তাগিদে নেটব্যাঙ্কিং কিংবা অনলাইন ওয়ালেট (টাকা লেনদেনের স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন)-এর ব্যবহার এক ধাক্কায় যথেষ্ট বেড়েছে। গত ক’দিনে কিছু ওয়ালেটে লেনদেন পাঁচ গুণ বেড়েছে। ব্যবহারকারীর সংখ্যা হয়েছে কয়েক গুণ।

যা দেখে আবার প্রমাদ গুনছেন সাইবার বিশেষজ্ঞেরা। কেন? ওঁদের মতে, যাঁরা বৈদ্যুতিন লেনদেন নতুন শুরু করেছেন, তাঁদের অনেকেই এতে সড়গড় নন। ফলে জালিয়াতদের খপ্পরে পড়ার সমূহ আশঙ্কা। লালবাজারের সাইবার সেলের গোয়েন্দারা বলছেন, নগদে টাকা তুলতে, রাখতে ও ব্যবহার করতে যেমন সতর্ক হতে হয়, অনলাইনেও তা-ই। সেগুলো খেয়াল রাখলে ক্ষতির আশঙ্কা কম। নচেৎ বিপদ ওত পেতে আছে পদে পদে। সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের উপলব্ধি, ‘‘অনলাইনে জাল বিছোতে জালিয়াতেরা নিত্য-নতুন ফন্দিফিকির আঁটে। তাই একাধিক সতর্কতা জরুরি।’’ বাস্তব কিন্তু তেমন আশাপ্রদ নয়। এক নামী অ্যান্টিভাইরাস নির্মাতা কোম্পানির সমীক্ষা মোতাবেক, দেশে নেটব্যাঙ্কিং গ্রাহকদের এক-তৃতীয়াংশই পাসওয়ার্ড যাকে-তাকে ফাঁস করে দিচ্ছেন। একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, ২৩% লোক জালিয়াতদের পাঠানো নানা লোভনীয় ও ভুয়ো প্রতিশ্রুতির ই-মেল নিয়মিত খুলে থাকেন। ২০০১-এর বলিউডি ছবি ‘আজনবি’তে দেখা গিয়েছিল অনলাইনে টাকা হাপিস করার চমকপ্রদ উপায়। ভিলেনের মুখে সব সময় লেগে থাকত একটাই কথা— এভরিথিং ইজ প্ল্যানড। নায়ক অনুমান করে নেয়, ওটাই তার নেটব্যাঙ্কিং পাসওয়ার্ড। ঠিক তা-ই। সুইস ব্যাঙ্কে ভিলেনের কোটি কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট নিমেষে ফাঁকা করে দিতে নায়কের দেরি হয়নি। এ তো গেল সিনেমা। সাইবার বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এখন পাসওয়ার্ড হাতানোর জন্য সামনাসামনি হওয়ার দরকার নেই। অ্যান্টিভাইরাস, ফায়ারওয়ালের মতো যথাযথ বর্ম না-থাকলে স্রেফ কম্পিউটার-মোবাইলে ভাইরাস হামলা চালিয়েই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের যাবতীয় তথ্য জালিয়াতেরা হাতিয়ে নিতে পারে। যার সাম্প্রতিকতম পদ্ধতি— আনকোরা লোকজনকে সাইবারে ‘পণবন্দি’ করে ফেলা। কী রকম? পুলিশের ব্যাখ্যা: অপহরণকারীরা যে ভাবে পরিজনের কাছে মুক্তিপণ চায়, এখানেও তা-ই। গ্রাহকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সাইবার দুষ্কৃতীরা কৌশলে কব্জা করে নেয়। সেগুলো ছাড়়ার জন্য মোটা টাকা দাবি করে। বহু ক্ষেত্রে আদায়ও করে।

শুক্রবার সল্টলেকে তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত আলোচনাচক্র ‘ইনফোকন-কলকাতা, ২০১৬’-তেও উঠে এল সাইবার পণবন্দির প্রসঙ্গ। যার কর্মপদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাইবার বিশেষজ্ঞ সুখমিন্দর সিংহ সিদানা জানালেন, প্রথমে জালিয়াতেরা গ্রাহকের ই-মেলে একটা কম্পিউটার ‘প্রোগ্রাম’ (প্রযুক্তি পরিভাষায়, র‌্যানসমওয়ার) পাঠায়। অ্যাটাচড ফাইল খুললেই যা কিনা কম্পিউটারে ঢুকে গোটা সিস্টেমের দখল নিয়ে নেয়। গ্রাহকের যাবতীয় তথ্য বন্দি হয়ে যায় ওদের হাতে। গাঁটগচ্চা দিয়ে তা মুক্ত করতে হয়। একই ভাবে ই-মেলের আড়ালে কম্পিউটারে ‘ট্রোজান’ জাতীয় ভাইরাসের হানাদারি সম্পর্কেও হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। ওঁদের বক্তব্য: হাজারো স্মার্টফোন অ্যাপও চোরাপথে নানা তথ্য হাতিয়ে নিতে তৈরি। ডাউনলোড হতে গেলে সব অ্যাপই ফোনের কন্টাক্ট লিস্ট, ফোটো গ্যালারি-সহ নানা তথ্যভাঁড়ারে ঢোকার অনুমতি চায়। ‘‘কিন্তু নেট জগতের এত অ্যাপের কোনটা সাধু কোনটা চোর, বুঝবেন কী ভাবে?’’— প্রশ্ন এক সাইবার গোয়েন্দার। অথচ না-করেও উপায় নেই। তথ্যপ্রযুক্তির নিত্যনতুন ব্যবহার ও প্রয়োগ দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠছে। তাই বিশেষজ্ঞদের নিদান— অনলাইনে লেনদেন অবশ্যই করুন। তবে ঠিকঠাক রক্ষাকবচ পরে নিয়ে। না হলে ঠকতে হতে পারে।

নোট নেই তো কী হল! নেট-লুটেরার তো অভাব নেই!

দশ দাওয়াই

জোরালো অ্যান্টিভাইরাস চাই

সক্রিয় থাক ফায়ারওয়াল

নিজের ব্যাঙ্কের ওয়ালেট অ্যাপই ভাল

মোবাইলে যথেচ্ছ গেম বা অ্যাপ নয়

নেট দুনিয়ায় চেনা অ্যাপ চলতে পারে

নিজের ব্যাঙ্কের তথ্য ফাঁস করবেন না

ব্যক্তিগত তথ্যও গোপন থাকুক

অচেনা ই-মেল হুটহাট খুলবেন না

পুরস্কারের টোপ দেওয়া মেল এড়ান

অচেনা মেলে অ্যাটাচড ফাইল ঝুঁকির

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

E-transactions
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE