Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সন্ত্রাস-আবহে কথা নয়, আবার বোঝাল ভারত

পাক প্রধানমন্ত্রীর বিদেশনীতি উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ ভারতে আসছেন শনিবার। জল্পনা চলছিল আগামী ৩ এবং ৪ তারিখে অমৃতসরের ‘হার্ট অব এশিয়া’ সম্মেলনের ফাঁকে ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক নিয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:১৪
Share: Save:

পাক প্রধানমন্ত্রীর বিদেশনীতি উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ ভারতে আসছেন শনিবার। জল্পনা চলছিল আগামী ৩ এবং ৪ তারিখে অমৃতসরের ‘হার্ট অব এশিয়া’ সম্মেলনের ফাঁকে ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক নিয়ে। আজ কিন্তু ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ কার্যত স্পষ্ট করে দিলেন, সে সম্ভাবনা দূর অস্ত্। লাগাতার সন্ত্রাসবাদী হামলার আবহে আলোচনা যে চলতে পারে না, আজ সে কথাই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

বস্তুত, দিল্লির পুরনো অবস্থান এটাই। অমৃতসরে ভারত-পাক কথা হবে কি না, জানতে চাওয়া হয়েছিল স্বরূপের কাছে। তিনি জানান, দ্বিপাক্ষিক বৈঠক চেয়ে পাকিস্তানের কাছ থেকে কোনও প্রস্তাব আসেনি। এর পরেই স্বরূপ বলেন, ‘‘ভারত সব সময়েই আলোচনার ব্যাপারে উদারতা দেখিয়েছে। কিন্তু লাগাতার সন্ত্রাসের আবহে কথা চলতে পারে না। ক্রমাগত সন্ত্রাস চলবে, তার মধ্যেই দু’দেশ আলোচনায় বসবে, যেন এটাই খুব স্বাভাবিক— এমন চলে না। ভারত কখনওই এটা মেনে নেবে না।’’

কাশ্মীরের নাগরোটার সেনা ঘাঁটিতে হামলার প্রসঙ্গ টেনে আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেন, ‘‘পাক সন্ত্রাসবাদ শুধুমাত্র গত সপ্তাহ বা গত মাসের বিষয় নয়। বহু বছর, বহু দশক ধরে আমরা ভুক্তভোগী। নাগরোটা তারই সাম্প্রতিক উদাহরণ মাত্র।’’ সীমান্তপারের সন্ত্রাসের বিরোধিতায় কাবুলকে পাশে নিয়ে গত কালই যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেছিল ভারত। আগামী দু’তিন দিন ওই সম্মেলনের মোড়কে পাক-বিরোধী আক্রমণই যে আরও ক্ষুরধার করা হবে, স্বরূপের কথায় আজ তার ইঙ্গিত দেখছেন কূটনীতিকদের একাংশ। তবে তাঁদের মতে, ‘ব্রিকস’-এর মতো মূল আলোচ্যসূচি শুধুমাত্র পাক-বিরোধিতায় ঢেকে গিয়ে তার পর দিল্লির কার্যত একা পড়ে যাওয়ার পরিস্থিতি যাতে ‘হার্ট অব এশিয়া’ সম্মেলনে তৈরি না হয়, সে দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন।

আজ দিল্লির মূল সুরটাই ছিল পাক বিরোধিতার। সাংবাদিক সম্মেলনে বিকাশ স্বরূপ বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তান সীমান্তপারের সন্ত্রাসকে তাদের রাষ্ট্রীয় নীতি করে তুলেছে। এটা পাকিস্তানের পুরনো ছক। যে কারণে বিশ্বের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে তারা।’’ সংসদ ভবন আক্রমণ, ২০০২-এর জম্মুর কালুচকে পর্যটকদের বাসে হামলা, ২০০৮-এ উত্তরপ্রদেশের রামপুরে সিআরপি ছাউনিতে জঙ্গি হানা থেকে সাম্প্রতিক পঠানকোট, উরি— প্রত্যেকটি ঘটনায় কী ভাবে পাক মদত রয়েছে, তা উল্লেখ করেছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র।

সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরেও জম্মু-কাশ্মীরের মাটিতে এখনও যে ভাবে জঙ্গি হামলা জারি রয়েছে তাতে ভারতীয় সেনার অভিযানে লাভ কী হয়েছিল, প্রশ্ন তুলতে শুরু করছেন বিরোধীরা। আজ তারও জবাব দিয়েছে কেন্দ্র। স্বরূপ বলেন, ‘‘সেই সময়ে সীমান্তের ও-পারে বেশ কিছু জঙ্গি নির্দিষ্ট হামলার ছক কষে জমা হয়েছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতে হামলা চালিয়ে তাদের নিকেশ করা হয়। কী ঘটেছে, শুধু তা না দেখে বরং জঙ্গিদের রুখতে না পারলে আরও ভয়ঙ্কর কী হতে পারত— সেটাও ভাবা উচিত।’’

পঠানকোট, উরির মতো নাগরোটা হামলাতেও প্রাথমিক ভাবে পাক-যোগ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁরা জানিয়েছেন, জঙ্গিদের খাবার, অস্ত্র, গ্রেনেডে পাকিস্তানের ছাপ রয়েছে। সেগুলির ফরেন্সিক পরীক্ষা চলছে। সেই পরীক্ষার রিপোর্টে পাকিস্তানের হাত সম্পর্কে নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়ার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে, জানিয়েছে সাউথ ব্লক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্রের দাবি, নাগরোটা ও সাম্বায় সাম্প্রতিক সংঘর্ষের তদন্ত এনআইএ-কে দেওয়া হতে পারে।

আজ নাগরোটা সেনা ছাউনিতে চিরুনি তল্লাশি শুরু করে সেনাবাহিনী। যা নিয়ে ছাউনিতে ফের এক প্রস্ত আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। সেনা সূত্রে খবর, এটা রুটিন তল্লাশি। কোনও হামলার পরে এলাকাটি সম্পূর্ণ নিরাপদ কি না, দেখার জন্য তল্লাশি করা হয়।

সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, জঙ্গিরা না ফাটা শেল জমা করেছিল। আজ সকালে তা পাওয়া যায়। গোয়েন্দা কুকুর, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল একযোগে তল্লাশি চালিয়ে ওই বোমা-শেলগুলি নিষ্ক্রিয় করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India Terorism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE