Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
National News

মমতাকে ঘিরে বিরোধী ঐক্যের আশঙ্কা, আচমকা আক্রমণে মোদী নিজেই

নোট বাতিলের ঘটনাকে সামনে রেখে জাতীয় রাজনীতিতে বৃহত্তর জোট গড়তে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক সেই সময় বিরোধী ঐক্য ভাঙ্গার লক্ষ্যে ‘চিট ফান্ড’ প্রসঙ্গ তুলে পরোক্ষে তৃণমূল নেত্রীকে বিঁধলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৬ ২০:৩৫
Share: Save:

নোট বাতিলের ঘটনাকে সামনে রেখে জাতীয় রাজনীতিতে বৃহত্তর জোট গড়তে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক সেই সময় বিরোধী ঐক্য ভাঙ্গার লক্ষ্যে ‘চিট ফান্ড’ প্রসঙ্গ তুলে পরোক্ষে তৃণমূল নেত্রীকে বিঁধলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হতেই নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে ঘিরে দিল্লি এসে মোদী-বিরোধী আন্দোলনে বিরোধীদের একজোট করার চেষ্টা করছেন মমতা। ফের দিল্লি আসার কথাও ঘোষণা করেছেন। এমনই একটি সময় আজ উত্তরপ্রদেশের আগরায় এক জনসভায় নাম না করে মমতাকে পাল্টা আক্রমণ করলেন মোদী।

প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘‘আমি জানি কোন কোন লোক আমার বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন? দেশ কি জানে না, চিট ফান্ডের কারবারে কার অর্থ লেগেছে? লক্ষ-কোটি গরিব চিট ফান্ডে পয়সা জমা করেছেন। আর রাজনৈতিক নেতাদের আশীর্বাদে চিট-ফান্ডের কোটি-কোটি টাকা গায়েব হয়েছে। চিট ফান্ডের জন্য শয়ে-শয়ে পরিবারের প্রধানের আত্মহত্যার পরিস্থিতি হয়েছে। মরতে হয়েছে। আজ তাঁরাই (নেতারা) আমাকে প্রশ্ন করছেন?’’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেশের সাধারণ, সৎ ব্যক্তি পরিশ্রম করে বাঁচতে চায়, কিন্তু কিছু বেইমান লোক তাঁদের বাঁচতে দেন না।’’

মমতাকে এই তীব্র ভাষায় প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণের কারণ কী?

বিজেপি সূত্রের মতে, ইদানীং মমতা যে ভাবে মোদী-বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন, মাস খানেক আগেও এতটা সরব তিনি ছিলেন না। প্রথমে অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গে জোট বেধে বিরোধী দলগুলির নেতৃত্ব দিতে চাইছিলেন। সেই সময়ও বিরোধী ঐক্য ভাঙ্গতে কেজরীবালের থেকে মমতা ‘ঢের ভালো’ এমন কৌশল নেওয়া হয়েছিল বিজেপির পক্ষে। কিন্তু তাতেও থামানো যায়নি তৃণমূল নেত্রীকে। এখন ধীরে ধীরে কংগ্রেসের সঙ্গেও তাঁর দূরত্ব ঘুচছে। ঘন ঘন সনিয়া-রাহুল সহ কংগ্রেসের অন্য শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও তৃণমূলের যোগাযোগ বাড়ছে। আগামিকালও সংসদ শুরুর আগে সকাল দশটায় বিরোধী দলগুলি একজোট হয়ে কৌশল রচনা করবে। সে বৈঠকে থাকবে মমতার দলও।

কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে মমতার এই নৈকট্যে অধীর চৌধুরীর মতো রাজ্য নেতাদের অসন্তোষও বাড়ছে। মোদী আজ সুকৌশলে তাঁদেরই আরও অক্সিজেন জোগালেন। কাল সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী ঐক্য ভাঙার কৌশলেই প্রধানমন্ত্রী আজ বাকি বিরোধী দলগুলিকে ‘চিট ফান্ডের’ দুর্নীতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বোঝাতে চেয়েছেন, কালো টাকার বিরুদ্ধে যাঁরা একজোট হচ্ছেন, তাঁদেরই গায়েই দুর্নীতির কলঙ্ক আছে। আগে এই ভাবেই কংগ্রেস জমানায় টু-জি, কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে রাহুল গাঁধীকে বিঁধেছিলেন মোদী। নিশানা করেছিলেন মায়াবতীকেও। বিজেপি নেতাদের মতে, কালো টাকা রুখতে যে কড়া দাওয়াই দেওয়া হয়েছে, তার বিরোধিতা কারা করছেন, প্রধানমন্ত্রী তা স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছেন।

আরও পড়ুন: চিট ফান্ডের পিছনে যাঁর হাত, তিনি আজ আমাকে প্রশ্ন করছেন? ক্ষিপ্ত মোদী

প্রধানমন্ত্রী যে এমন একটি পাল্টা হুঁশিয়ারির পথে হাঁটবেন, সেটি আগেই আঁচ করেছিলেন মমতা। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী রায়ের মতো তৃণমূল নেতাদের সিবিআই নোটিস ধরিয়েছে। দলের আরও কোনও নেতার বিরুদ্ধেও ইডি বা অন্য কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থা পদক্ষেপ করতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা।

মমতা অবশ্য নিজের ঘনিষ্ঠ মহলে গোড়া থেকেই বার্তা দিয়ে এসেছেন যে কেন্দ্রের এই প্রতিহিংসার রাজনীতিতে তিনি আদৌ ভয় পান না। নোট বাতিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাপান থেকে বক্তব্য রাখার পরেই মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমাকে গুলি করুন, ভয় পাই না। আমাকে জব্দ করতে জেলে পুরলে, কন্ঠরোধ করে মেরে ফেললেও আপস করব না।’’

মমতার একার বিরোধিতা নিয়ে বিজেপি খুব একটা ভাবিত ছিল না। কিন্তু বিরোধী দলগুলিকে একজোট করতে মমতা যেভাবে ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে উঠছেন, সেটিই এখন শীড়ঃপীড়ার কারণ হয়ে উঠেছে বিজেপি নেতৃত্বের। সংসদের গত অধিবেশনেও বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের একটি প্রচ্ছন্ন সখ্য দেখা যাচ্ছিল, যাকে বিরোধীরা মোদীভাই-দিদিভাই আঁতাত বলে কটাক্ষ করত। কিন্তু বিজেপি নেতারাই মানছেন, এ বারে পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে ফের রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে পারে তৃণমূল। তাই ‘চিট ফান্ড’ জুজু দেখিয়ে পাল্টা চাপ বাড়ানো শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী।

মমতার মোদী-বিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতেই সিদ্ধার্থনাথ সিংহের মতো মমতা-বিরোধী মুখকে ফের আসরে নামিয়েছিল বিজেপি, যিনি রোজ দিল্লি থেকে সারদা-নারদ দুর্নীতি, বর্ধমান সন্ত্রাস, রাজ্যে জাল নোটের কারবার নিয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে মমতাকে প্রত্যাঘাত করছিলেন। বিজেপি সূত্রের মতে, এ বারে প্রধানমন্ত্রী বলার পর গোটা দল মমতাকে বিঁধে বিরোধী শিবিরকে আরও ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE