পকেটে কোনও নামের তালিকা ছাড়াই রাষ্ট্রপতি ভোটে কংগ্রেস ও বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ প্রথমে সনিয়া গাঁধী, তার পর সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি এবং সিপিআই নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সরকারের দুই মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও বেঙ্কাইয়া নায়ডু। রাষ্ট্রপতি পদে মোদী সরকার কাকে প্রার্থী করতে চায়, তা নিয়ে উচ্চবাচ্য না করেই বিরোধীদের সমর্থন চেয়েছেন তাঁরা।
বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি বেঁকে বসা শরিক শিবসেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরেকে পাশে টানতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ তাঁর সঙ্গে বৈঠক করবেন। শিবসেনা আগে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের নাম তুলেছিল। চাপ বাড়িয়ে আজ তারা কৃষিবিদ এম এস স্বামীনাথনের নাম প্রস্তাব করেছে। তাতে আবার সমর্থন জানিয়েছে শরদ পওয়ারের এনসিপি। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ শিবসেনার প্রস্তাবিত মোহন ভাগবত রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। একে অবশ্য নেহাৎ সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে ব্যাখ্যা করেছে আরএসএস।
আজ বিজেপির প্রবীণ দুই নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী ও মুরলী মনোহর জোশীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন রাজনাথ-বেঙ্কাইয়া। বার্তা দিয়েছেন, প্রবীণ মার্গদর্শক মণ্ডলীর সদস্য হিসেবে তাঁরাও রাষ্ট্রপতি ভোট নিয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলার এই প্রক্রিয়ার বাইরে নন। নাম চূড়ান্ত করার আগে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা করে মোদী সরকার আসলে যে উদারতা দেখাচ্ছে, আজ তা-ও বোঝানোর চেষ্টা করেন দুই মন্ত্রী। সনিয়া, ইয়েচুরির সঙ্গে বৈঠকে রাজনাথ-বেঙ্কাইয়া মনে করিয়ে দিয়েছেন, বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই প্রতিভা পাটিলকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করে করে দিয়েছিল কংগ্রেস। বাজপেয়ী জমানায় এ পি জে আবদুল কালামের নামে ঐকমত্য হওয়া সত্ত্বেও বামেরা প্রয়াত লক্ষ্মী সেহগলকে প্রার্থী করেছিল।
সেয়ানে-সেয়ানে কোলাকুলির মতো কংগ্রেস ও বাম নেতারা পাল্টা জানিয়েছেন, সরকার নাম জানালে তবেই সমর্থন বা ঐকমত্যের প্রশ্ন। সরকারের মন্ত্রীরা তাঁদের সঙ্গে আজ আলোচনায় বসার আগেই কাল বৈঠকে বসেছিলেন সনিয়া গাঁধী ও সীতারাম ইয়েচুরি। সেখানেই রণকৌশল ঠিক হয় যে, আগে সরকার তাদের প্রার্থীর নাম জানাক। তার পরে সমর্থনের
প্রশ্ন। সেই কৌশল মেনেই এ দিন বিরোধী নেতারা জানিয়ে দেন, মোদী-অমিত শাহ তথা বিজেপি যাঁকে প্রার্থী করবে, তাঁকেই সমর্থন দেওয়া হবে, বিষয়টা মোটেই এমন নয়। বিজেপিও যে অতীতে প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রতিভা পাটিলের বিরুদ্ধে হার নিশ্চিত জেনেও কখনও পি এ সাংমা, কখনও ভৈঁরো সিংহ শেখাওয়াতকে প্রার্থী করেছিল, তা-ও মনে করিয়েছেন বাম, কংগ্রেস নেতারা।
এই গোটা প্রক্রিয়াকেই ‘জনসংযোগ কর্মসূচি’ বলে কটাক্ষ করেছেন ইয়েচুরি। তাঁর যুক্তি, ‘‘সরকার বোঝাতে চাইছে, আমার পক্ষে জনমত। তাই বিরোধীদের সরকারের প্রার্থীকেই চোখ বুজে সমর্থন করা উচিত। আমরা বলছি, ২০১৪-য় লোকসভা ভোটে বিজেপি তথা এনডিএ মাত্র ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। বিরোধীরা পেয়েছে ৬১ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ জনমত বিরোধীদের দিকে।’’
আসলে বাম বা অন্য কিছু দল রাষ্ট্রপতি পদে ভোটাভুটিতে আগ্রহী হলেও কংগ্রেস ততটা নয়। বাম নেতাদের মতে, মোদীরা একতরফা নাম ঘোষণা করবেন। তখন কংগ্রেসের সামনে ভোটাভুটিতে যাওয়া ছাড়া কোনও পথ খোলা থাকবে না।
এরই মধ্যে সরকারকে স্বস্তি দিয়ে আজ এডিএমকে-র নেতা এম থাম্বিদুরাই জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি যাঁকে প্রার্থী করবেন, তাঁকেই তাঁরা সমর্থন করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy