বিহার জিতে শেষ পর্যন্ত দিল্লিতে ভরাডুবির বদলা নিতে পারেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। আর পাঁচ দিন পর থেকে শুরু হচ্ছে ভোট। তার আগে শেষ রাউন্ডের প্রাক্-নির্বাচনী জনমত সমীক্ষার ইঙ্গিত, নীতীশকুমারদের জোটকে পিছনে ফেলে পটনার গদি দখল করতে চলেছে বিজেপি জোট।
বিহারে ২৪৩টি আসনের বিধানসভায় গরিষ্ঠতার জন্য দরকার অন্তত ১২২টি। এবিপি নিউজ-এসি নিয়েলসেনের শেষ প্রাক্-নির্বাচনী সমীক্ষা বলছে, এনডিএ পেতে পারে ১২৮টি। সংখ্যাটি অবশ্য জাদু-সংখ্যা থেকে মাত্র ৬ বেশি। আর জাদু-সংখ্যা থেকে মাত্র ১০টি আসন পিছনে দৌড় শেষ করতে পারে লালু-নীতীশ-কংগ্রেসের মহাজোট।
জনপ্রিয়তার নিরিখে নীতীশ ও মোদীর টক্কর অবশ্য এখনও সেয়ানে-সেয়ানে। বিহারের জনতা নীতীশ-মোদী উভয়ের কাজেই মোটামুটি সন্তুষ্ট। যদিও পছন্দের মুখ্যমন্ত্রী কে, এই প্রশ্নে নীতীশই সব থেকে এগিয়ে আছেন সমীক্ষায়। তবে লালুপ্রসাদের সঙ্গ শেষ পর্যন্ত বিপাকে ফেলতে পারে নীতীশকে। কারণ, বিহারে নীতীশের থেকে লালুর শক্তিই বেশি। আবার লালুতে বিমুখ মানুষের সংখ্যাটাও কম নয় রাজ্যে।
গত কয়েক মাস ধরেই দফায় দফায় জনমত সমীক্ষা করে আসছে এবিপি নিউজ-এসি নিয়েলসেন। প্রথম দিকের সমীক্ষায় এনডিএকে অনেক পিছনে ফেলে এগিয়ে ছিল মহাজোট। কিন্তু দিন যত এগিয়েছে, সমীক্ষায় ক্রমশই জমি হারিয়েছেন নীতীশ। ভোটদাতাদের মানসিকতার আঁচ পেতে এই ধরনের সমীক্ষার গুরুত্ব থাকলেও এ ধরনের জনমত সমীক্ষার ফল যে সব সময় মেলে, তা অবশ্য নয়। শেষ মুহূর্তে ভোটের কাঁটা সামান্য এ-দিক ও-দিক সরলেই ফল বদলে যেতে পারে। এবং সেই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না নির্বাচন-বিশ্লেষকদের একটি অংশ। কারণ, কোন পক্ষ কত শতাংশ ভোট পেতে পারে, সেই হারে খুব বেশি ফারাক দেখা যাচ্ছে না সমীক্ষায়। এবিপি নিউজ-এসি নিয়েলসেনের সমীক্ষা বলছে, এই মুহূর্তে ৪২% এনডিএতে ও মহাজোটে ৪০% মানুষ আস্থা রাখছেন।
শুধু এবিপি নিউজ-এসি নিয়েলসেনই নয়, অন্যান্য প্রাক্-নির্বাচনী সমীক্ষাও বিজেপি জোটকে এগিয়ে রেখেছে। একটি ইংরেজি দৈনিকের সমীক্ষা, এনডিএ ৪২% ও মহাজোট ৩৮% ভোট পেতে পারে। অর্থাৎ ব্যবধান ৪%। অন্য এক সমীক্ষায় অবশ্য ব্যবধান ঢের বেশি, ১৩.৬% (এনডিএ ৫৩.৮% ও মহাজোট ৪০.২% ধরে)।
ভোট শতাংশের সামান্য ব্যবধানও আসনসংখ্যায় অনেকটা ফারাক এনে দেয়। তাই ঠিক এক মাস পরে ভোটের ফল বেরোলে ছবিটা উল্টেও যেতে পারে। এবং সেই আশাতেই আরজেডির মনোজ ঝা আজ দাবি করেছেন, ‘‘আমাদের ভোটাররা নিঃশব্দে ভোট দেন। নানা সময়েই এ ধরনের সমীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বারেও ভোটের ফল সমীক্ষার থেকে আলাদা হবে।’’
আবার হাওয়া জোরদার হলে এনডিএর গরিষ্ঠতার অঙ্কটা লাফিয়ে বেড়ে যেতে পারে। যেমনটি হয়েছিল গত লোকসভা ভোটে। উত্তরপ্রদেশে গত ২০১২-র ভোটেও মায়াবতীর চেয়ে মাত্র ২% ভোটে এগিয়ে থেকে একক গরিষ্ঠতা পেয়েছিলেন অখিলেশ সিংহ যাদব। স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি শিবির বিভিন্ন সমীক্ষার ফল দেখে উৎসাহিত। দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের কথায়, ‘‘গত ক’মাসে একটাই ধারাবাহিকতা দেখা গিয়েছে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্রমশ শক্তিশালী হয়েছে। ভোট এলে মজবুত হবে এই জোট। ব্যবধান আরও বাড়বে।’’
এটা ঘটনা, পরের পর সমীক্ষায় বিজেপির শক্তি ক্রমেই বাড়ছে বলে পাওয়া গিয়েছে। এর কারণটা কী?
সমীক্ষা বলছে, বিহারে উচ্চবর্ণের সমর্থন এ বারে বিজেপির দিকেই রয়েছে। তার সঙ্গে জুড়েছে দলিত-মহাদলিত ভোট ব্যাঙ্ক। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ওবিসি সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ জুড়েছে এই জোটের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর জনপ্রিয়তা এখনও আগের মতোই রয়েছে। তা ছাড়া, অনেক বিহারবাসীই মনে করছেন, গত ২৫ বছর ধরে কেন্দ্রের শাসক দলের সঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের মিল ছিল না। তার জেরে রাজ্যের উন্নয়ন ধাক্কা খেয়েছে। এ বার তাই কেন্দ্রে-রাজ্যে একই দলকে পেতে চাইছেন তাঁরা। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব জানেন, সংরক্ষণ নিয়ে মোহন ভাগবতের মন্তব্য ও সাম্প্রতিক কিছু সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে ইতিমধ্যেই খানিকটা ফারাক তৈরি হয়েছে। শেষ বাজারে বিহার-প্যাকেজ ও উন্নয়নের স্লোগানকে মূলধন করে মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন অমিত শাহ। তাঁর ও মোদীর কাছে বিহার জয় এখন ইজ্জতের লড়াই। তাই প্রায় দু’ডজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও বিহারে ঘাঁটি গেড়েছেন। প্রতি দফার ভোটের আগে তুরুপের তাস মোদীকেও নামানো হচ্ছে কার্পেট বম্বিংয়ে। পরের পর সমীক্ষায় মোদী-বাহিনীর শক্তিবৃদ্ধির রসায়ন এটাই।
মহাজোটের ভরসা জাতপাতের সমীকরণ। মুসলমান, যাদব, কুর্মি-কোয়েরিদের ভোট তাদের দিকে আসতে পারে। তিরহুত, মিথিলা এবং পূর্ব বিহারের সীমাঞ্চলে ভাল ফল করার সম্ভবনা রয়েছে মহাজোটের। মুসলিম ভোটের ৫২% মহাজোটের দিকে যাচ্ছে বলে সমীক্ষকদের দাবি। আবার ৩৯% মুসলিম ভোট যে কোনও দিকেই যেতে পারে বলে মনে করছেন সমীক্ষকরা। শহুরে ভোট বিজেপির দিকে ঝুঁকলেও গ্রামে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দিচ্ছে মহাজোট। একাধিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, গ্রামে মাত্র ২% ভোটে এগিয়ে থাকতে পারে এনডিএ। মগধ, ভোজপুর এলাকায় এনডিএ-এর জয়ের সম্ভবনা প্রবল। তফসিলি ভোটারদের বেশির ভাগ এ বারে ঝুঁকেছে এনডিএর দিকে। জিতনরাম মাঁঝি এবং রামবিলাস পাসোয়ানকে এক মঞ্চে এনে সেই ভোটকে সংগঠিত করতে পেরেছে বিজেপি। শুধু তাই নয়, মহাজোটের মূল ভোটব্যাঙ্ক যে যাদব, কুর্মি ও কোয়েরি ভোটার, তাঁদেরও প্রতি দশ জনে দু’জনের সমর্থন এনডিএ পেতে পারে। যার অর্থ মহাজোটের তৈরি করা ভোটব্যাঙ্কে কিছুটা হলেও ফাটল ধরাতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। ভোটের সময় সেই হাওয়া আরও জোর পাবে নাকি উল্টো বইবে, জানেন বিহারবাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy