নীতীশের দেখানো পথেই ‘নীতীশ-বধ’-এর আয়োজন করছে বিজেপি!
নীতীশ-লালুর ‘সুবিধাবাদী জোট’-ই আপাতত বিহারে বিজেপি-র প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য। রাজ্য বিধানসভার মেয়াদ আর বাকি মাত্র ১১ মাস। তবে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে সময়টা খুব বেশি নয়। তাই ও দিকে যখন নীতীশ বেরিয়ে পড়েছেন তাঁর ‘সম্পর্ক যাত্রায়’, তখন বিজেপিও পাল্টা-প্রচারে নামার প্রস্তুতি শুরু করে দিল। প্রাথমিক ভাবে বিজেপি সর্বভারতীয় নেতৃত্বের পরিকল্পনা: গত দু-তিন বছরে নীতীশ এবং লালু পরস্পরের প্রতি যে ভাষা ব্যবহার করেছে, যে ভাবে একে অপরকে সুবিধাবাদী আখ্যা দিয়ে আক্রমণ করেছে তার যাবতীয় অডিও-ভিডিও নথি জোগাড় করা। এরপর সেই নথি একত্র করে একটি প্রচার-মডিউল তৈরি করা হবে। রাজ্যের প্রতিটি গ্রামে-গঞ্জে সেই মডিউলই হবে আপাতত লালু-নীতীশ জোটের বিরুদ্ধে বিজেপি-র প্রধান হাতিয়ার। উল্লেখ্য, তাঁর সম্পর্ক যাত্রায় জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার তাঁর চির-প্রতিদ্বন্দ্বী নরেন্দ্র মোদীর বিভিন্ন জনসভার ভাষণের সিডি শুনিয়ে জনগণকে বোঝাচ্ছেন, মোদী যা বলেন তা তিনি করেন না। রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি মঙ্গল পাণ্ডের কথায়, “নীতীশ এবং লালুর জবাব আমরা এ ভাবেই দেব। মানুষের কাছে গিয়ে বলব, যাঁরা একে অন্যকে সহ্যই করতে পারেন না, তাঁরা কী ভাবে এক সঙ্গে রাজ্যের ভাল করবে?” তাদের এই জোট যে দীর্ঘস্থায়ী হবে না তাও মানুষকে বোঝানো হবে বলে রাজ্য সভাপতি জানান।
আপাতত, নীতীশ-লালুর পরস্পর বিরোধী বক্তব্যের অডিও এবং ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহের জন্য দলেরই কয়েক জন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিজেপি মূলত যে বিষয়গুলিতে জোর দিতে চায়, তা হল: লালুপ্রসাদ জেলে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, নীতীশ চক্রান্ত করে তাঁকে জেলে ঢোকালেন। আবার যখন লালুকে ছেড়ে অনেকেই নীতীশের দলে নাম লেখাচ্ছিলেন তখন আরজেডি প্রধান বলেছিলেন, নীতীশ তাঁর ঘর ভাঙছে। অন্য দিকে, দল ভাঙার ব্যাপারে লালুপ্রসাদের অভিযোগ নিয়ে নীতীশ বলেছিলেন, যাঁর ঘর আগলানোর ক্ষমতা নেই তিনি চিৎকার না করে নিজের দিকে তাকান। তা হলেই বুঝতে পারবেন কেন ঘর ভাঙছে। এখানে তাঁর কোনও ভূমিকা নেই। আবার যখন বিধানসভার স্পিকারের বাড়িতে লালুপ্রসাদের উপস্থিতিতে ঢিল ছুড়ে আরজেডি সমর্থকরা প্রতিবাদ করেছিল, সেদিন নীতীশ বলেছিলেন, লালুপ্রসাদের মনে রাখা উচিত যে তিনি দুর্নীতির মামলায় দোষী এবং জামিনে ছাড়া আছেন।
মঙ্গল পাণ্ডের কথায়, “বিহার এ বার বিজেপির মূল লক্ষ্য।” নীতীশকে সরাতে পারলে অনেক ‘অপমান’-এর জবাব যে দেওয়া যাবে তা মানছেন তাঁরা। নরেন্দ্র মোদীর নাম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণার পরে নীতীশ বিজেপির সঙ্গ ছাড়েন। সেই সময় বিজেপির নয় মন্ত্রীকে আগাম কিছু না জানিয়েই মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেন নীতীশ। অপমানিত বিজেপি নেতৃত্ব তাও ভোলেননি।
অন্য দিকে, নীতীশ বনাম মোদীর লড়াইয়েও তৎকালীন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর বিহারে প্রবেশের ব্যাপারে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন অবিভক্ত এনডিএ-র নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ।
২০১০ সালে পটনায় বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে উপস্থিত বিজেপি নেতৃত্বকে মধ্যাহ্নভোজে ডেকেও শুধু মাত্র নরেন্দ্র মোদীর কারণেই নীতীশ সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করে নেন। পটনার বৈঠকে সেদিন উপস্থিত লালকৃষ্ণ আডবাণীর অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনই সেই বদলা নেওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy