মায়া কোডনানী
নরোডা পাটিয়া গণহত্যার প্রধান চক্রী হিসেবে ২৮ বছর জেল হয়েছিল নিম্ন আদালতে। উচ্চ আদালত বেকসুর ঘোষণা করল গুজরাতের প্রাক্তন বিজেপি মন্ত্রী মায়া কোডনানীকে। গুজরাত হাইকোর্ট জানিয়েছে, ২০০২ সালে নরোডা পাটিয়ায় ৯৭ জনকে হত্যার মামলায় সাক্ষীদের বয়ান মিলছে না। মায়ার ভূমিকা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কোনও সাক্ষীই বলেননি, মায়ার সঙ্গে এ নিয়ে তাঁর কথা হয়েছে। তাঁকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হল। শুধু মায়া নয়, বিশেষ সিট আদালতে সাজা হয়েছিল এমন মোট ১৮ জনকে আজ বেকসুর ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।
নিম্ন আদালত সাজা শুনিয়েছিল ৩২ জনকে। তাদের এক জন মারা গিয়েছে। বাকিদের মধ্যে ১৩ জন এ দিনও দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তবে গণহত্যার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী বজরং দলের প্রাক্তন নেতা বাবু বজরঙ্গীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল নিম্ন আদালত। বিচারপতি হর্ষ দেবানী এবং বিচারপতি এ এস সুপেহিয়াকে নিয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ আজ তার কারাবাসের মেয়াদ কমিয়ে ২১ বছর করেছে। আশিস খেতান নামে এক সাংবাদিকের স্টিং অভিযান ও তাঁর মৌখিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আজ নতুন তিন জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাদের শাস্তি ঘোষণা ৯ মে।
মক্কা-মসজিদ বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্তরা ছাড়া পাওয়ার পরে গেরুয়া সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলার জন্য কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছে বিজেপি। বিচারপতি লোয়ার মৃত্যু নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে তারা সুর চড়িয়েছে আরও। কারণ সেখানে অভিযোগের আঙুল উঠেছিল দলের সভাপতি অমিত শাহের দিকে। আজ ‘মায়াবেনের মুক্তি’ স্বস্তির বার্তা আনল শাসক শিবিরে। দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে রায়কে স্বাগত জানিয়ে দলের মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখী বলেন, ‘‘কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা কালে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছিল বিজেপি নেতাদের। তাদের নোংরা কৌশলের কারবারিরা অপপ্রচার চালিয়েছিল হিন্দু সন্ত্রাস নিয়ে। এখন একের পর এক মামলায় কংগ্রেসের মুখোশ খুলছে।’’ বেজায় খুশি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়া। তাঁর দাবি, রাজ্য সরকার যেন এই রায়ের বিরুদ্ধে আর না এগোয়।
যে পথে নরোডা পাটিয়া
• ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০০২: অযোধ্যার দু’হাজারেরও বেশি করসেবক সাবরমতী এক্সপ্রেসে অমদাবাদ রওনা হয়েছিলেন।
• ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০২: গোধরায় ৪ ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছয় ট্রেন। করসেবক ভর্তি কামরায় আগুন লাগিয়ে দেয় এক দল লোক।
• ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০০২: ভিএইচপি এই ঘটনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল বার করে। বন্ধ ডাকে। বন্ধের দিন বিক্ষোভকারীরা নরোডা পাটিয়া এলাকায় হামলা চালায়। ৯৭ জন নিহত হন।
• ২০০৯ সাল: মামলা শুরু হয়। ৬২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। ৩২ জন দোষী সাব্যস্ত হয়। ১১ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি ২৯ অভিযুক্ত বেকসুর খালাস পায়। মামলা চলার সময়েই এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়।
• ২০১২ সাল: সিটের বিশেষ আদালত বিজেপি বিধায়ক এবং গুজরাতের তৎকালীন নরেন্দ্র মোদীর সরকারের মন্ত্রী মায়া কোডনানী ও বাবু বজরঙ্গীকে দোষী সাব্যস্ত করে। মায়ার ২৮ বছর ও বজরঙ্গীর আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়।
• ২০১৭ সাল: দোষী সাব্যস্তেরা গুজরাত হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। গত অগস্টে শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রাখা হয়।
• ২০ এপ্রিল, ২০১৮ সাল: মায়া কোডনানী-সহ ১৮ জনের মুক্তি। বাবু বজরঙ্গী-সহ মোট ১৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে হাইকোর্ট।
গণহত্যায় হতাহতদের পরিবারের আইনজীবী সমসের পাঠান বলেছেন, ‘‘আমরা হতাশ। বিশেষ তদন্তকারী দল(সিট) ঠিক মতো তদন্তই করেনি। রায় খতিয়ে দেখে আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব।’’ কংগ্রেসের অভিযোগ, বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে মোদী সরকার ও শাসক শিবির। এই মূল অভিযোগকে সামনে রেখেই আজ প্রধান বিচারপতিকে ‘ইমপিচ’ করার প্রস্তাব এনেছে কংগ্রেস। নরোডা মামলার রায় শুনে দল আঙুল তুলেছে গুজরাত সরকারের দিকে। রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি ধন্নানির কথায়, ‘‘এটা বিচারের নামে প্রহসন। রাজ্যের বিজেপি সরকার হয় প্রমাণ লোপাট করেছে, নয়তো আদালতে তা পেশই করেনি।’’ রায় দেওয়ার আগে রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে ডিভিশন বেঞ্চও। সরকার পক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেছে, ‘‘অভিযুক্তকে জামিন দেওয়ার সময় বিরোধিতা করেননি। এখন শাস্তি বাড়ানোর আর্জি রাখছেন! আপনারা শুধু বলার জন্যই বলে যাচ্ছেন।’’ খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে মায়া এত দিন মুক্তই ছিলেন জামিনে। এ বার মুক্ত অভিযোগ থেকেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy