কর্পোরেট-গ্রাউন্ড: এই মাঠ থেকেই কামাই হচ্ছে লাখ টাকা। —নিজস্ব চিত্র।
টান টান ছায়া ফেলা দু’টো গগনচুম্বীর ফাঁকে এক টুকরো জমি। মেরে কেটে বিশ-বাইশ কাঠা।
খান চারেক ফ্লাড–লাইটের স্তম্ভ, কাচ মোড়া ক্লাব হাউস আর রঙিন গ্যালারি— কর্পোরেট ক্রিকেটের জন্য দিব্যি সেজেগুজে রয়েছে এক ফালি মাঠ, হায়দরাবাদের নব্য জমি-ব্যবসা।
নিজামের শহরের সঙ্গে কলকাতার ছবিটা মিলছে? সংক্ষিপ্ত উত্তর, না। বহুতলের বাড়বাড়ন্ত এ শহরেও কম নয়। কলকাতা আর তাকে ঘিরে ছোট-বড় উপনগরীর রাস্তায় আকাশচুম্বির লম্বাটে ছায়ার আঁকিবুঁকিও অজস্র। কিন্তু কর্পোরেট মাঠ কোথায়?
‘‘এক ফালি জমি পেলেই প্রোমোটারের চোখ বহুতলের স্বপ্ন দেখে, সে কি খেলার মাঠ গড়ার শৌখিনতা দেখাবে’’— প্রশ্নটা রাখছেন রাজ্য আবাসন পর্ষদের পদস্থ কর্তা। তিনি একা নন, খোলা জমির এমনতর ব্যবহারের সঙ্গে আলাপ নেই কলকাতার তাবড় রিয়েল এস্টেট সওদাগরদের। ইএম বাইপাস এবং নিউটাউনে তাঁদের একের পর এক আবাসন রয়েছে, এমন এক সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরের কাছে মিলছে তার একটা ব্যাখ্যা— ‘‘আসলে, কলকাতা কিংবা সল্টলেক কর্পোরেশনের খোলা জমি ফেলে রাখার আইনটা তেমন স্পষ্ট নয়। হায়দরাবাদ বা বেঙ্গালুরুর মতো বিশ-বাইশ কাঠা জমি স্রেফ সবুজায়নের স্বার্থে ফেলে রাখার সাহস দেখানোর রেওয়াজ এখানে নেই, তাই মাঠও নেই।’’ তবে, সার কথাটা ধরিয়ে দিচ্ছেন বহুজাতিক এক তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার শীর্ষ কর্তা— ‘‘কলকাতায় কর্পোরেট সংস্কৃতিটাই সাবালক হয়ে ওঠেনি।’’
গরচিবওলি, নারাপল্লি, চান্দানগর— আড়েবহরে হু হু করে বেড়ে ওঠা সাবেক হায়দরাবাদে তাই বিরামহীন বহুতল উঠলেও গ্রেটার হায়দরাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (জিএইচএমসি) চোখ রাঙাচ্ছে— দু’টি বহুতলের মাঝে যেন সবুজায়নের পর্য়াপ্ত খোলা জমি থাকে, যার বিস্তার নিয়মের ফেরে কোথাও বারো কোথাও বা আঠারো কাঠা। সেই খোলা জমিতে এখন ‘কর্পোরেট-গ্রাউন্ড’-এর বাড়বাড়ন্ত।
সে মাঠের খোঁজ পেতে সাইবার-শহরে চালু হয়েছে ওয়েবসাইট, ‘গ্রাউন্ডওয়ালা’। কোন মাঠ কবে-কখন খালি, মাঠের ভাড়া, গাড়ি রাখার ব্যবস্থা— ঝলমে ওয়েবসাইটে থাকছে সব তথ্যই। নিতান্ত অবহেলার পাথুরে প্রান্তরে লাখ টাকার কারবার।
গুন্ডাপোচমপল্লিতে এমনই এক কর্পোরেট গ্রাউন্ডের মালিক এস.পি গুনশেখরন বলছেন, ‘‘চার থেকে ছ-ঘণ্টায় ম্যাচ পিছু ভাড়া ১.৮০ লক্ষ থেকে দু’লক্ষ টাকা। তবে, ভরা মরসুমে ভাড়াটা একটু বাড়িয়ে দিই!’’ গোঁফের ফাঁকে মুচকি হাসছেন তিনি।
গুনশেখরনদের জমিটা পড়েছিল দু’টি বহুতলের মাঝে। নিয়মের গেরোয় সেখানে আর একটা গগনচুম্বী মাথা তুলতে পারেনি ঠিকই, তবে ক্রিকেট মাঠ তো সবুজায়নের নামান্তর! ‘গ্রাউন্ড’ গড়ে তোলার এই ব্যবসাটা শুরু এই নিয়মের গেরো থেকেই।
ঘাটকেশর হাইওয়ের ধারে নারাপল্লির এমনই এক জমি-মালিক মাসুদ আখতার বলছেন, ‘‘শহর জুড়ে ক্রিকেট আর টেনিসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কিন্তু স্টেডিয়াম কোথায়? ভাবলাম এক বার চেষ্টা করে দেখি।’’ মাঠ সাজিয়ে ক্রিকেট গ্রাউন্ড গড়ে তুলেছিলেন মাসুদ। বলছেন, ‘‘টাকা ঢেলেছি ঠিকই, তেমনই এখন ম্যাচ পিছু দিব্যি দেড় লাখ টাকা কামাচ্ছি।’’
মাসুদ হাসছেন, ‘‘শুধু ফসল নয়, মনে রাখবেন, জমির হরেক কিসিমের ব্যবহার দাদা!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy