Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

জমি-টাকা নেই, হোঁচট খেল বুলেট ট্রেনের স্বপ্ন

মাত্র ন’মাস! আর তাতেই অগ্রাধিকারের বিচারে বুলেট ট্রেন চলে গেল একেবারে পিছনের সারিতে। অথচ, স্বপ্ন দেখেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। ভোটের আগেই শুধু নয়, নির্বাচনে জেতার পরেও নরেন্দ্র মোদী বুলেট ট্রেনের পিছনে বিস্তর শব্দ খরচ করেছেন। তাঁর নির্দেশে জাপান পর্যন্ত ঘুরে এসেছে বিশেষজ্ঞ দল। ভারতে এসে মউ স্বাক্ষর করে গিয়েছেন চিন, স্পেনের মতো দেশের প্রতিনিধিরা।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৯
Share: Save:

মাত্র ন’মাস! আর তাতেই অগ্রাধিকারের বিচারে বুলেট ট্রেন চলে গেল একেবারে পিছনের সারিতে।

অথচ, স্বপ্ন দেখেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। ভোটের আগেই শুধু নয়, নির্বাচনে জেতার পরেও নরেন্দ্র মোদী বুলেট ট্রেনের পিছনে বিস্তর শব্দ খরচ করেছেন। তাঁর নির্দেশে জাপান পর্যন্ত ঘুরে এসেছে বিশেষজ্ঞ দল। ভারতে এসে মউ স্বাক্ষর করে গিয়েছেন চিন, স্পেনের মতো দেশের প্রতিনিধিরা। কিন্তু আজ সংসদে বাস্তবমুখী বাজেট পেশ করতে গিয়ে সেই বুলেট ট্রেনের জন্য মাত্র একটি বাক্য খরচ করলেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। জানালেন, “আমদাবাদ-মুম্বইয়ের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালানোর বিষয়ে সমীক্ষা চলছে। তার পরেই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”

কেন এ ভাবে পিছনের সারিতে চলে গেল বুলেট ট্রেন?

মন্ত্রক জানাচ্ছে, আর্থিক ভাবে দীর্ণ রেলের পক্ষে এখন বুলেট ট্রেনের স্বপ্ন দেখা কঠিন। এ কথা ঠিক যে, এই প্রকল্প প্রথম থেকেই বেসরকারি বিনিয়োগে গড়ে ওঠার কথা। কিন্তু তার জন্য যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন, সেই অর্থ রেল যদি অন্য খাতে পায়, তা হলে রেলের সার্বিক পরিকাঠামোগত উন্নতি সম্ভব। কেননা সমীক্ষা বলছে, মুম্বই থেকে আমদাবাদ এই ৫৩৪ কিমি দূরত্ব ৩০০ থেকে ৩২০ কিলোমিটার গতিতে পৌঁছতে মাত্র দু’ঘণ্টা নেবে বুলেট ট্রেন। কিন্তু সেই লাইন নির্মাণে প্রয়োজন প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটার পিছু একশো কোটি টাকার বেশি। সে ক্ষেত্রে টিকিটের যা দাম হবে তা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে। দ্বিতীয়ত, বুলেট ট্রেনের মূল শর্ত হল গতি। এর জন্য প্রয়োজন ডেডিকেটেড এলিভেটেড করিডর। এর জন্য যে জমির প্রয়োজন রয়েছে তা কোথা থেকে আসবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তৃতীয়ত, সিগন্যালিং থেকে শুরু করে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন লাইন ও কোচ পরিকাঠামোগত ভাবে বিদেশি প্রযুক্তির উপর রেলের নির্ভরতা ব্যাপক ভাবে বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী সংস্থার সমস্ত শর্ত মানতে বাধ্য থাকবে রেল। এ সব কারণেই আপাতত বুলেট ট্রেনের প্রশ্নে আপাতত পিছিয়ে এসেছে রেল। যদিও মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, এটা এক দিনের প্রকল্প নয়। সময়স্বাপেক্ষ ব্যাপার। কাজ এগোচ্ছে।

তবে বাজেট নথি দেখে একটি বিষয় স্পষ্ট। শুধু বুলেটই নয়, কার্যত ব্রাত্য হাই স্পিড করিডরও। গত বারের পাঁচটি হাইস্পিড করিডর নিয়েও বিশেষ কিছু বলা হয়নি বাজেটে।

পরিবর্তে বাস্তবের পথে হেঁটে বর্তমান লাইনগুলোতেই আরও কী ভাবে দ্রুত ট্রেন চালানো যায়, সেই উত্তর খুঁজেছে রেল মন্ত্রক। বর্তমানে রেলের ১২১৯টি সেকশন অতি ব্যস্ত রুটের তালিকায় রয়েছে। যার মধ্যে আবার ৪৯২টি সেকশনে তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতার (একশো শতাংশের বেশি) অনেক বেশি ট্রেন চলে। যেমন, দিল্লি-কলকাতা বা কলকাতা-চেন্নাই রুট। তেমনি ২২৮টি সেকশনে ট্রেন চলে তাদের ক্ষমতার আশি বা একশো শতাংশের কাছাকাছি। যার অর্থ, বর্তমানে যে লাইন রয়েছে তাতে নতুন করে ট্রেন গুঁজে দেওয়া সম্ভব নয়। লাইনে যেখানে অত ভিড় সেখানে হাইস্পিড ট্রেন চালানো যে কার্যত অসম্ভব, তা বোঝেন রেলকর্তারা।

তাই চলতি বাজেটে নতুন ট্রেন ঘোষণা করা হয়নি। উল্টে জোর দেওয়া হয়েছে নতুন লাইন নির্মাণের উপর। যেখানে একটি লাইন রয়েছে সেখানে ডাবলিং, যেখানে দু’টি বা তিনটি লাইন রয়েছে সেখানে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন পাতার প্রস্তাব দিয়েছে রেল মন্ত্রক। রেল কর্তাদের নতুন লাইন না-পাতা পর্যন্ত ট্রেনের গতিবেগ বাড়ানো সম্ভব নয়। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজধানী বা শতাব্দীর মতো ট্রেনের গড় গতি যেখানে ১৩০ কিলোমিটার সেখানে প্যাসেঞ্জার ও মালগাড়ির ২৫ কিলোমিটার। তার ফলে ভারতীয় রেলের সার্বিক গড় গতি ঘণ্টায় মাত্র ৭০ কিলোমিটার। আপাতত এই ছবিটাই পাল্টাতে চাইছে রেল মন্ত্রক। বাজেট নথিতে তাই বেশি করে জোর দেওয়া হয়েছে, নতুন লাইন নির্মাণের উপর। একাধিক লাইন হলেই একটি লাইনের উপর চাপ কমবে। বাড়বে গড় গতিবেগ। মন্ত্রকের মতে, লাইনের উপর চাপ কমলে ১৬০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে।

প্রভুর কথায়, এর ফলে দিল্লি-মুম্বই বা দিল্লি-কলকাতা আরও কম সময়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rail budget bulet train anamitra sengupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE