Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অবশেষে গাজা নিয়ে রাজ্যসভায় বিতর্কে রাজি কেন্দ্র

বিরোধীদের হইচইয়ের মুখে অবশেষে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যসভায় আলোচনার ব্যাপারে রাজি হল কেন্দ্রীয় সরকার। সম্ভবত সোমবার এ বিষয়ে বিতর্ক হবে বলে সূত্রের খবর। গাজায় ইজরায়েলি হানার নিন্দা করে দু’দিন আগে লোকসভায় প্রথম সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। অল্প সময়ের জন্য সেই আলোচনার সুযোগ দেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন।

গাজার পাশে। ইজরায়েলি হানার প্রতিবাদ। বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরুতে।

গাজার পাশে। ইজরায়েলি হানার প্রতিবাদ। বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরুতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩০
Share: Save:

বিরোধীদের হইচইয়ের মুখে অবশেষে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যসভায় আলোচনার ব্যাপারে রাজি হল কেন্দ্রীয় সরকার। সম্ভবত সোমবার এ বিষয়ে বিতর্ক হবে বলে সূত্রের খবর।

গাজায় ইজরায়েলি হানার নিন্দা করে দু’দিন আগে লোকসভায় প্রথম সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। অল্প সময়ের জন্য সেই আলোচনার সুযোগ দেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। কংগ্রেস নেতা শশী তারুর দাবি করেন, এ ব্যাপারে একটি সর্বসম্মত নিন্দা প্রস্তাব পাশ হোক। সেই দাবিতে সায় দেয় তৃণমূল, বাম, সমাজবাদী পার্টি-সহ বাকি বিরোধীরা। কিন্তু সেই দাবি এক কথায় খারিজ করে দেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তিনি বলেন, “ঘরোয়া রাজনীতির জন্য সরকার কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ করবে না।”

একই কথা বলেছিলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। রাজ্যসভায় গাজা নিয়ে আলোচনার দাবিতে দু’দিন ধরে অনড় ছিলেন বিরোধীরা। কাল রাজ্যসভার কর্মসূচিতে বিষয়টি লিপিবদ্ধও ছিল। তবু আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল সরকার। সুষমা বলেছিলেন, বিষয়টি যে আলোচ্যসূচিতে রয়েছে, তা তিনি জানতেন না। এ ব্যাপারে সরকার আলোচনায় প্রস্তুত নয়। কারণ, কোনও বন্ধু দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক কথা উঠে আসুক, তা সরকার চায় না।

ঘটনা হল, লোকসভায় সরকারের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও রাজ্যসভায় নেই। সেই সুযোগ নিয়ে ইস্যু-ভিত্তিক বিরোধী ঐক্য গড়ে রাজ্যসভায় সরকারকে কতটা বিপাকে ফেলা যায়, সেটাই এখন যাচাই করে দেখছেন গুলাম নবি আজাদ-আনন্দ শর্মার মতো কংগ্রেস নেতারা। এ ক্ষেত্রে ‘ইস্যু’ যেমন গাজা। গত কালের পর আজও কংগ্রেসের নেতৃত্বে বাম, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি-সহ তামাম বিরোধী দল গাজা নিয়ে আলোচনায় অনড় থাকে। সেই সঙ্গে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, সরকার এ ব্যাপারে আলোচনায় রাজি না হলে রেল বাজেট এবং সাধারণ বাজেট বিতর্কও চলতে দেওয়া হবে না। আবার গাজা বিতর্কে আলোচনা না চেয়ে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারির কাছে সরকার যে আর্জি জানিয়েছিল, তা-ও খারিজ হয়ে যায়। এর পরেও সরকার রেল বাজেট বিতর্ক শুরু করতে চাইলে বিরোধীদের বাধায় দফায় দফায় মুলতবি হয়ে যায় রাজ্যসভা। শেষ পর্যন্ত অচলাবস্থা কাটাতে আলোচনায় রাজি হতে হয় সরকারকে।

গাজায় ইজরায়েলি হানার প্রতিবাদে অবস্থান-বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার আমদাবাদে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্যালেস্তাইনের ওপর ইজরায়েলি আগ্রাসন নিয়ে বামেরা গত কয়েক দশক ধরে সরব। আবার ইজরায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেও নেহরু-গাঁধী জমানা থেকে কংগ্রেস বরাবর প্যালেস্তাইনিদের মানবাধিকার রক্ষায় সওয়াল করেছে। কিন্তু এই দুই দল ছাড়া সপা, বসপা, তৃণমূল বা জেডিইউ-এর মতো দলগুলির ইজরায়েল-বিরোধিতার মূল কারণ একটাই সংখ্যালঘুদের বার্তা দেওয়া। কংগ্রেসের প্রথম সারির এক নেতার কথায়, “রাজ্যসভায় এমন বিরোধী রয়েছে, যারা সরকারের সঙ্গে তলে তলে আপসে প্রস্তুত। ইস্যুর ভিত্তিতে সেই দলগুলোকে একত্র করে বিজেপি-কে একঘরে করা যায় কি না, সেটাই দেখতে চাইছিল কংগ্রেস। সেই কৌশল অনেকটাই সফল।” এখন বিরোধীরা গাজা নিয়ে রাজ্যসভায় একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব পাশে সচেষ্ট হবেন বলে সূত্রের খবর।

সংখ্যালঘু আবেগ নিয়ে বিজেপি-র ততটা উদ্বেগ নেই। বরং ইজরায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার ব্যাপারে সঙ্ঘ পরিবার বরাবর সক্রিয়। তা ছাড়া ইজরায়েলের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির পথেও এগোতে চাইছে এনডিএ সরকার। সুষমা আজও বলেন, “চলতি সংঘর্ষে ভারতের স্বার্থ কোনও ভাবেই জড়িত নয়। তাই এ বিষয়ে সংসদে আলোচনা অযৌক্তিক।” কিন্তু গুলাম নবি এবং সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য, সুষমা হয়তো ভুলে গিয়েছেন, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সংকট নিয়ে সংসদে বহু বার আলোচনা হয়েছে। শ্রীলঙ্কার দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে ’৮৩ সালে লোকসভায় বিতর্কে প্রথম বক্তৃতা করেছিলেন সুষমাই। ইরাকে মার্কিন হানার নিন্দা করে বাজপেয়ী জমানাতেও নিন্দা প্রস্তাব পাশ হয়েছিল লোকসভায়। এতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কখনওই খারাপ হয় না। বরং দেখা গিয়েছে, ভারতের এই মজবুত গণতন্ত্রের বার্তায় পরবর্তী কালে সমর্থন জানিয়েছে বিশ্বের অন্য দেশগুলিও।

পিটিআইয়ের ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

central government debate gaza loksabha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE