Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সংসদ ক্যান্টিন

ভর্তুকির দিন শেষ, দাম বাড়ল খাবারের

সংসদের ক্যান্টিনে সস্তা খাবার নিয়ে বিতর্কটা কম দিনের নয়। নতুন বছর পড়তে না পড়তেই সে বিতর্কে ইতি টানতে উদ্যোগী হল কেন্দ্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩১
Share: Save:

সংসদের ক্যান্টিনে সস্তা খাবার নিয়ে বিতর্কটা কম দিনের নয়। নতুন বছর পড়তে না পড়তেই সে বিতর্কে ইতি টানতে উদ্যোগী হল কেন্দ্র।

আগামী কাল থেকে সংসদ ক্যান্টিনে ভর্তুকির দিন শেষ। বাড়ছে বিভিন্ন পদের দাম। আগে যে নিরামিষ থালি মিলত মাত্র ১৮ টাকায়, তা এখন থেকে বিক্রি করা হবে ৩০ টাকায়। আমিষ থালির জন্য আগে দিতে হত ৩৩ টাকা। তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৬০ টাকায়। একই ভাবে চিকেন কারি ২৯ টাকার পরিবর্তে এখন পাওয়া যাবে ৪০ টাকায়। এই রকম ভাবে বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন খাবারের মূল্য। বাজার দরের থেকে অনেক কমে এত দিন ধরে লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদরা এই ক্যান্টিনে খাবার পেতেন। তা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। এ বছরের জুনে বিষয়টি নিয়ে ফের সরব হয় সংবাদমাধ্যম।

সেই সময় সাংসদদের খাবারের জন্য সরকারের ভর্তুকির বহর কতটা, তা জানতে চেয়ে সুভাষ অগ্রবাল নামে এক সামাজিক আন্দোলনকারী তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় মামলা করেছিলেন। তার জবাবে সরকারের তরফেই জানানো হয়েছিল, গত পাঁচ বছরে সাংসদদের খাবারে ৬০ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা খয়রাতি দেওয়া হয়েছে। ওই ক্যান্টিনে এক প্লেট পুরি-তরকারির দামে ৮৮ শতাংশ ভর্তুকি দিত কেন্দ্র। সাংসদ বা সংসদের যে সদস্যরা মাসে ১ লক্ষ ৪০ হাজার বা তারও বেশি আয় করেন, তাঁরা এক প্লেট ‘ফ্রায়েড ফিশ উইথ চিপস’ কিনতেন মাত্র ২৫ টাকায়। মাটন কাটলেট পেতেন আরও কমে, মাত্র ১৮ টাকায়। মশলা দোসা ৬ টাকায়! গত এপ্রিল মাসেই ওই ক্যান্টিনে মধ্যাহ্নভোজন সেরেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভাত, রুটি, রাজমা, সার্সো কা সাগ, আলুর তরকারি আর দই খেয়ে তাঁকে দিতে হয়েছিল ২৯ টাকা! বাজারদরের তুলনায় ক্যান্টিনে যে জলের দরে খাবার পাওয়া যেত— এই সব তথ্য থেকেই তা স্পষ্ট।

সেই সময়েই প্রশ্ন ওঠে, যে সরকার পেট্রোল-ডিজেলের উপর থেকে ভর্তুকি তুলেছে, রান্নার গ্যাসেও ভর্তুকি ছাড়ার ডাক দিয়েছে, সংসদের ক্ষেত্রে তারা কেন হাত গুটিয়ে রয়েছে? স্পিকার সুমিত্রা মহাজন সেই সময় বলেছিলেন, সংসদের ক্যান্টিনে শুধু সাংসদরাই খান না। সাংবাদিক, সংসদের সব স্তরের কর্মী, নিরাপত্তা রক্ষী, এবং অতিথি— এঁরাও নিয়মিত ক্যান্টিনে খেয়ে থাকেন। তবে সেই সময় কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল— সব দল নির্বিশেষে সাংসদরা মেনে নেন, ভর্তুকি দিয়ে খাওয়ার ব্যাপারটি মোটেই ঠিক নয়। সঙ্গতও নয়।

প্রতি বারের মতো এ বারেও এই বিতর্কে ধামাচাপা পড়ে যাবে বলে মনে হলেও শেষমেশ স্পিকার জানান, সংসদের ক্যান্টিন কমিটি-সহ সব পক্ষকে নিয়ে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ছ’বছর পরে যার ফলশ্রুতি এই মূল্যবৃদ্ধি। তার আগে দু’বার ক্যান্টিনের খাবারের দাম বেড়েছিল, ২০০৩ এবং ২০০৯-এ। কিন্ত কোনও বারই সেই বৃদ্ধি ১০%-এর বেশি হয়নি।

এ বার অবশ্য সংসদের ক্যান্টিন কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ‘লাভ নয়-লোকসান নয়’ নীতিতে খাবার বিক্রি করা হবে। এক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে এই কথা। সব সাংসদ, লোকসভা ও রাজ্যসভার সব আধিকারিক, সাংবাদিক, রক্ষী, দর্শক— প্রত্যেকেই এ বার নতুন মূল্যে খাবার কিনবেন। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংসদের ক্যান্টিনে খাবারের দাম নিয়ে বহু বারই সংবাদমাধ্যমে সমালোচনা হয়েছে। সেটা মাথায় রেখেই স্পিকার ক্যান্টিন কমিটিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। তার পরেই এই সিদ্ধান্ত। শুধু এ বার নয়, এর পরেও সময়ে সময়ে প্রয়োজনমতো দাম নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে।

এ ছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, দিনের বেলায় কম পরিমাণ খাবারের পদ রান্না করা হবে যাতে খাবার নষ্ট না হয় এবং খরচও বাঁচে। আর চা-কফি তৈরির মেশিন বসানো হবে যাতে ক্যান্টিনের কর্মীদের উপরে কাজের চাপ কমে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE