তামিলনাড়ুর সংস্কৃতির অঙ্গ সেই জাল্লিকাট্টু
জাল্লিকাট্টু (ষাঁড়ের দৌড়) নিয়ে বিক্ষোভে উত্তাল গোটা তামিলনাড়ু। প্রতিবাদ, সমাবেশ আর জমায়েত তো হচ্ছেই, গোটা তামিলনাড়ুতেই জায়গায় জায়গায় চলছে পথ অবরোধ। বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে চেন্নাইয়ের মেরিনা সৈকতে শুক্রবার অনশন শুরু করে দিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতকার এ আর রহমান। মিছিলে হাঁটলেন রজনীকান্ত ও কমল হাসন ও দাবাড়ু বিশ্বনাথন আনন্দ। প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সামাল দিতে তামিলনাড়ু সরকার অবশ্য ইতিমধ্যেই অর্ডিন্যান্স জারির প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে। জাল্লিকাট্টু নিয়ে শাসক দল এআইএডিএমকে’র নেতা এম থাম্বিদুরাইয়ের নেতৃত্বে তামিলনাড়ুর সাংসদদের একটি প্রতিনিধিদল এ দিন দেখা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে। পরে সেই প্রতিনিধিদলটি সংবাদমাধ্যমকে জানায়, রবিবারের মধ্যেই ওই অর্ডিন্যান্স জারি করা হতে পারে। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ও পনীরসেলভাম বলেছেন, ‘‘অর্ডিন্যান্সটি ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলেই দিনদু’য়েকের মধ্যে জাল্লিকাট্টু ফের শুরু করার অর্ডিন্যান্স জারি করা হবে।’’
জাল্লিকাট্টু (ষাঁড়ের দৌড়) ফের শুরুর দাবিতে তুমুল বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, সমাবেশ আর তা প্রশমিত করতে তামিলনাড়ু সরকারের কড়া পদক্ষেপের তোড়জোড়ের মধ্যে খোদ অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহাতগি বললেন, ‘‘এটা রাজ্যও করতে পারে। করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকারও। কেন্দ্র ও রাজ্য, দু’য়ে মিলেও করতে পারে কাজটা। আর সেই কাজটা খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। ফেলে রাখা চলবে না। তবে তামিলনাড়ু যেহেতু ভারতেরই অঙ্গরাজ্য, তাই সেই রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকেও মেনে নিতে হবে।’’ পশুদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে, এই অভিযোগে জাল্লিকাট্টুর ওপর জারি হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, অত্যন্ত প্রাচীন এই প্রথা তামিলনাড়ুর সংস্কৃতিরই অঙ্গ। তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে তা তামিলনাড়ুর মানুষের সংস্কৃতিকেই অবমাননা করা হবে। একটি পিটিশনের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে জাল্লিকাট্টু নিষিদ্ধ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পনীরসেলভাম ও প্রধানমন্ত্রী মোদী
ও দিকে, জাল্লিকাট্টুর ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে কি থাকবে না, তা নিয়ে তার সিদ্ধান্ত কার্যকরের সময়সীমা, শুক্রবার পিছোতে রাজি হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের কাছে ওই অনুরোধ জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। গতকাল অবশ্য তামিলনাড়ুতে ওই ষাঁড়ের দৌড় ফের শুরু করার ব্যাপারে কেন্দ্রের তরফে কিছুটা ‘উদাসীনতা’রই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পনীরসেলভামকে বলেছিলেন, ‘‘জাল্লিকাট্টুর সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে মর্যাদা দিলেও বিষয়টি যেহেতু সুপ্রিম কোর্টে রয়েছে, তাই সে ব্যাপারে কেন্দ্রের সরাসরি কিছু করণীয় লেই। তবে তামিলনাড়ু সরকার এ ব্যাপারে যে পদক্ষেপ করবে, তাতে কেন্দ্রের সমর্থন থাকবে বলে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
আরও পড়ুন- ১৯১ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা, ‘ঘরশত্রু’ শিবপালকেও টিকিট দিলেন অখিলেশ
তারই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছিল, তা হলে জাল্লিকাট্টু নিয়ে কৌশলে তার দায় কিছুটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে কি কেন্দ্রীয় সরকার?
চেন্নাইয়ের মেরিনা সৈকতে বিক্ষোভ। শুক্রবার।
এ দিকে, জাল্লিকাট্টু ফের শুরু করার দাবিতে প্রতিবাদের পারদ ক্রমশ চড়ছে তামিলনাড়ুতে। চেন্নাইয়ের মেরিনা সৈকতে শুক্রবারও জমায়েত হয়েছে। তবে বিক্ষোভের কেন্দ্রে চলে আসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম। কারণ মুখ্যমন্ত্রী ও পনীরসেলভম মোদীর সঙ্গে দেখা করার পরেও আশার আলো দেখা যায়নি। তাতেই আগুনে ঘি পড়ে। মোদী-বিরোধী চেহারা নেয় বিক্ষোভ। প্রতিবাদী পড়ুয়ারা পাশে পেয়েছে বিশ্বনাথন আনন্দ এবং এ আর রহমানের মতো সেলিব্রিটিদেরও। প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই অবস্থান তামিল সংস্কৃতির পক্ষে অপমানজনক— বলছেন বিক্ষোভকারীরা। মেরিনা সৈকতে আজ মোদীর ছবি আঁকা প্ল্যাকার্ডে কালি মাখিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি পনীরসেলভম, এডিএমকে সাধারণ সম্পাদক শশিকলা এবং নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মেনকা গাঁধীর বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন পড়ুয়ারা। সপ্তাহের গোড়া থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে তামিলনাড়ুর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অনেক মুখই সমর্থন জানিয়েছেন। এ বার সেই সেলিব্রিটি তালিকায় জুড়ল সঙ্গীতকার এ আর রহমানের নাম। প্রাক্তন বিশ্বসেরা দাবাড়ু বিশ্বনাথন আনন্দ টুইটারে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, ‘‘ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তির লক্ষ্যে জেগে উঠেছে আমার রাজ্য। তামিলনাড়ুর মানুষ হওয়ায় গর্বিত আমি।’’ ডিএমকে কার্যনির্বাহী সভাপতি এম কে স্ট্যালিন জাল্লিকাট্টু নিয়ে সর্বদল বৈঠক করার অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। শুক্রবার বিধানসভায় এ নিয়ে আলোচনা চেয়েছেন তিনি।
তামিলনাড়ু পেরিয়ে প্রতিবাদের ঢেউ ছুঁয়েছে শ্রীলঙ্কা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়ার তামিল বাসিন্দাদের মনেও। এত চাপের মুখে কেন্দ্র যদি অবস্থান বদল করে অর্ডিন্যান্স আনার কথা ভাবে, আইনি পথে তার মোকাবিলারও প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy