Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
বিজেপিকে তোপ মমতার

অমিতের পত্রাঘাতে বিদ্ধ চন্দ্রবাবুর পাল্টা

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে মর্যাদা দেওয়ার প্রশ্নে চন্দ্রবাবুর পাশে দাঁড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অমিতের নাম না করে আক্রমণ শানালেন বিজেপিকে।

চন্দ্রবাবু নায়ডু এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

চন্দ্রবাবু নায়ডু এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৮ ০৪:২৮
Share: Save:

চন্দ্রবাবু নায়ডুকে চিঠি অমিত শাহের। প্রথমে ভাবা হচ্ছিল বুঝি মিটমাটের বার্তা। কিন্তু বিজেপি সভাপতির চিঠি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-র প্রধান তথা অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু আজ যে ভাবে আক্রমণ শানালেন অমিতকে, তাতে ধামাচাপা পড়ে গেল তাদের এনডিএ-তে ফেরানোর চেষ্টা। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে মর্যাদা দেওয়ার প্রশ্নে বরং চন্দ্রবাবুর পাশে দাঁড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অমিতের নাম না করে আক্রমণ শানালেন বিজেপিকে। টিডিপি সূত্রে জানানো হয়েছে, চলতি সপ্তাহ যে ভাবে রোজ সংসদে সরকারে বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে, মঙ্গলবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

ন’পাতার ওই চিঠিতে অমিত কেন্দ্রের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বিবরণ তুলে ধরে অভিযোগ করেছেন, চন্দ্রবাবু রাজ্যের প্রকৃত উন্নয়নের কথা না ভেবে রাজনৈতিক ফায়দা নিতেই এনডিএ ছেড়েছেন। তাঁর তোলা বঞ্চনার অভিযোগ ঠিক নয়। অসত্য বলছেন অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যের উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিমাফিক অর্থ দিয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রের দেওয়া অর্থ কোথায় খরচ হয়েছে, তা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে অন্ধ্র সরকার।

চন্দ্রবাবুর পাল্টা দাবি, বিজেপি সভাপতির চিঠি মিথ্যেয় ভরা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অমিত শাহের দাবি, রাজ্যকে দেওয়া অর্থ ঠিক ভাবে খরচ করতে পারেনি সরকার। ঘুরিয়ে বলার চেষ্টা করা হয়েছে অন্ধ্র সরকার অদক্ষ। কিন্তু তথ্য বলছে, টিডিপি-র আমলে রাজ্যে আর্থিক বৃদ্ধির হার বেড়েছে। কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। যে কারণে একাধিক জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছে রাজ্য।’’ চন্দ্রবাবুর প্রশ্ন, ‘‘তবু কেন মিথ্যা বলছেন অমিত শাহ?’’

কেন্দ্রের দেওয়া অর্থের প্রশ্নে চন্দ্রবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে মমতা এ দিন টুইট করেছেন, ‘‘প্রশংসা করছি চন্দ্রবাবুর। তিনি সত্যটা তুলে ধরেছেন। তথাকথিত অনেক নেতা মিথ্যে বলে বেড়াচ্ছেন। এটা তাঁদের অভ্যাস। রাজ্যগুলির উপরে বুলডোজার চালিয়েও এঁরা বোঝাতে চাইছেন, রাজ্যগুলিকে যেন তাঁরা কৃতার্থ করছেন। এটা ভুয়ো যুক্তরাষ্ট্রীয় ভাবনা।’’

রাজ্যের উন্নয়নে কেন্দ্রের দায়বদ্ধতা নিয়ে অমিতের দাবিকে কটাক্ষ করে চন্দ্রবাবুও বলেন, ‘‘বন্ধ ঘরে মাত্র ২০ মিনিটের বৈঠকে অবৈজ্ঞানিক ভাবে অন্ধ্রপ্রদেশকে ভেঙে দেওয়ায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এতে রাজ্য ১০ বছর পিছিয়ে গিয়েছে। যার জন্য একমাত্র বিজেপি দায়ী।’’

উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচনে হারের পরেই চন্দ্রবাবুদের সমর্থন প্রত্যাহারে বড় ধাক্কা খায় বিজেপি। অশান্তির আঁচ পড়েছে এনডিএ শিবিরেও। লোকসভা ভোটের এক বছর আগে প্রকাশ্যে বড় শরিকের মনোভাব নিয়ে অসন্তোষ জানাতে শুরু করেছেন রামবিলাস পাসোয়ান, উত্তরপ্রদেশের ওমপ্রকাশ রাজভড়ের মতো ছোট শরিকেরা। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিজেপিতে। যদিও আজই এক সাক্ষাৎকারে অমিত বলেছেন, ‘‘এনডিএ ভাঙার কোনও প্রশ্ন নেই। শরিকদের মধ্যে ছোটখাটো সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু বিজেপি শরিক দলগুলিকে সম্মান করে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও, আমরা শরিকদের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিই। এটাই আমাদের নীতি।’’

বঞ্চনার অভিযোগ এনে গত সপ্তাহে এনডিএ থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল টিডিপি। মাঝে টিডিপি সাংসদ তথা প্রাক্তন বিমানমন্ত্রী অশোক গজপতি রাজুকে দিয়ে বিজেপি মিটমাটের চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। উল্টে চলতি সপ্তাহের প্রত্যেক দিন সরকারের বিরুদ্ধে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসে টিডিপি। বিজেপি সূত্র বলছে, এতেই ক্ষুব্ধ অমিত আজ টিডিপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। প্রাক্তন জোট-শরিকের বিরুদ্ধে অমিতের এ ভাবে পত্রাঘাত কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE