প্রথমে ছেলে, তারপর জামাই! এই দু’জনকে নিয়ে বিতর্ক গত পাঁচ মাস ধরেই তাড়া করে ফিরছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঝিকে। তাঁর ইস্তফার দাবিতে বিরোধী বিজেপি নেতৃত্ব সরব। তাঁর দলের মধ্যেও বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রী তাঁকে ঠারেঠোরে বা সরাসরি আক্রমণ করছেন, অপমান করছেন। আর ঠিক তখনই জাতপাতের বিহার রাজনীতিতে প্রত্যন্ত মুশাহার জনজাতির প্রবীণ প্রতিনিধি জিতনরাম পাল্টা-চাপ তৈরি করতে আবেগের আশ্রয় নিলেন, প্রকাশ্য সভায় বললেন, “জানি, আমি, দলিত জিতনরাম মাত্রই কয়েক দিনের মুখ্যমন্ত্রী। খুব বেশি হলে আমার মেয়াদ হয়তো পরের বছরের বিধানসভা ভোট পর্যন্ত!”
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই যেন স্বজন-বিতর্ক তাঁকে তাড়া করেছে! মাস কয়েক আগে গয়ার একটি হোটেল থেকে তাঁর ছেলে এক বিবাহিতা তরুণীর সঙ্গে ধরা পড়ে। তাই নিয়ে হইচইও কম হয়নি। ছেলে সম্পর্কে সে সময় মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য ছিল, “মুখ্যমন্ত্রীর ছেলে বলে কি তার বান্ধবী থাকতে পারবে না!” ক্রমশ তা থিতিয়ে গেলেও হঠাৎ করেই গত কাল থেকে সামনে এসেছে জামাই-বিতর্ক। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পিএ বা একান্ত সহায়ক পদে নিজের জামাইকে নিয়োগ করেছেন। ২৮ মে জিতনরাম মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন। প্রযুক্তিবিদ জামাই দেবেন্দ্র কুমারকে ৪ জুন তিনি নিয়োগ করেন। এই নিয়োগ নিয়ম বিরুদ্ধ তা জানার পরেই জিতনরামেরই নির্দেশে তাঁর জামাই ওই পদ থেকে ইস্তফাও দিয়েছেন। মহাদলিত জিতনরামের স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, “এমন নিয়মের কথা আমার জানা ছিল না।”
এরপরেই তিনি পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, “আমি না হয় নিয়োগ করতে বলেছি, কিন্তু যে ক্যাবিনেট সচিবালয় আমার জামাইকে ওই পদে নিয়োগ করল তারাই বা কী করে এই বেনিয়ম করল? আমাকে জানানো হয়নিই বা কেন?” এর পরে তিনি যেটা বলেছেন তা আরও তাৎপর্যপূর্ণ, “আমার জামাই তো আজ নয়, ২০০৬ সালে যখন আমি প্রথম নীতীশ মন্তিসভায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হই, সেই সময় থেকেই তো দেবেন্দ্র আমার পিএ হিসেবে কাজ করছে।” তাঁর পরের প্রশ্ন, “যে সুশীল মোদী আজ প্রশ্ন করছেন তিনি তো তখন উপ-মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি তখন এই বেনিয়মের কথাটা আমায় বলেননি কেন?” মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, “মহাদলিত গোষ্ঠীর প্রত্যন্ত জনজাতি মুশাহারের প্রতিনিধি বলেই জিতনরামকে উচ্চবর্ণের এই আক্রমণের সামনে পড়তে হচ্ছে।”
পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে নিজের দলের মধ্যেই অপমানিত হচ্ছেন, আক্রমণের মুখে পড়ছেন প্রবীণ এই দলিত নেতা। তাঁর দল জেডিইউয়ের মধ্যে চাউর হয়ে গিয়েছে, নীতীশ কুমারের সঙ্গে জিতনরামের নাকি দূরত্ব বাড়ছে। জিতনরাম নাকি স্থায়ী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। নীতীশও এই ধরনের কথাবার্তা থামানোর জন্য নিজে উদ্যোগী হননি। সুতরাং দলের অন্য নেতা-মন্ত্রীরা ধরেই নিচ্ছেন যা রটছে তা সত্যি। তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে আজ মুখ্যমন্ত্রীর এক অনুষ্ঠানে। শিক্ষকদের এক অনুষ্ঠানে মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর পাশের পাঁচটি চেয়ার আজ খালি ছিল। ওই চেয়ারগুলি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী-সহ পাঁচ মন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট করা ছিল। কোনও মন্ত্রীই মুখ্যমন্ত্রীর ওই অনুষ্ঠানে হাজির হননি। নানা মন্ত্রী নানা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন আমন্ত্রণই পাননি। যদিও উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এঁরা প্রত্যেকেই অনুষ্ঠানে আসবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের ব্যাখ্যা, দলিত জিতনরামকে এড়াতেই মন্ত্রীদের এই কৌশল।
আর এই অনুষ্ঠানের মঞ্চকেই ব্যবহার করেছেন জেডিইউয়ের প্রবীণ এই নেতা। সেখানেই তিনি বলেন, “আমাদের বড় জোট হচ্ছে। আমি জানি, তার নেতা হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমার দিন গোণা আছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy