শিল্পী: নিজের তৈরি দূর্গামূর্তির সামনে রূপক সরকার। শিলচরে। ছবি: সানি গুপ্ত।
স্কুল থেকে ফিরে বন্ধুরা মাঠে গেলেও, বছর পনেরোর ছেলেটি যায় কুমোরপাড়ায়।
খড় বাঁধা থেকে বাঁশ কাটা— সবেতেই কী যেন খুঁজে বেড়ায় সে। প্রতিমার নাক-মুখ তৈরির সময় তাকিয়ে থাকে নিষ্পলক চোখে।
এ ভাবেই মূর্তি তৈরি শিখেছে শিলচর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির পড়ুয়া রূপক সরকার। বাড়িতে গড়েছে দশভূজার মূর্তি। কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী। বাদ যাননি মহাদেবও। ৩০ সেন্টিমিটার উঁচু মূর্তিতে রয়েছে চারটি অসুর। দেবী দুর্গা দুই অসুরকে পরাস্ত করছেন। লক্ষ্মী-সরস্বতীর পায়ের নীচে অন্যরা।
বছর তিনেক বয়স থেকেই মূর্তি গড়ায় আগ্রহ তার, এ কথা বলেন মা অপর্ণাদেবী। তখন অবশ্য বাড়ির কেউ এতে গুরুত্ব দেননি। কুমোর ছাড়া কেউ প্রতিমা তৈরি করলে অমঙ্গল হয়, এমন কথা বলে তাকে নিরস্ত করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু মূর্তি তৈরিই শখ রূপকের, তাই লুকিয়ে মূর্তি গড়ত সে। পরিবারের কেউ এই পেশায় ছিলেন না, তবু প্রতিমাশিল্প কেন তাকে এত টানে, রূপকের কাছেও জবাব নেই। সে শুধু জানে, কুমোরপাড়ার যেতে তার ভাল লাগে। কোনও প্রতিমাশিল্পী তাতে বিরক্ত হন না। ডেকে নিয়ে উৎসাহ দেন।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গণেশ নন্দী বলেন, ‘‘ছোট মূর্তি তৈরিতে সমস্যা বেশি। একটি বড় আঙুল যত সহজে তৈরি করা যায়, ছোট বানানো ততই কঠিন।’’ একই দাবি রূপকেরও। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা নেই। মা বাড়ি বাড়ি টিউশনি করে সংসার চালান। না হলে সব সরঞ্জাম কিনে এ বারই বড় মূর্তি বানিয়ে নিতাম।’’
ছেলের কথায় ভয় পান অপর্ণাদেবী। রূপককে তিনি সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে দেখতে চান। জানান, গান ভাল গায় রূপক। পুজোর পর বিভিন্ন মঞ্চে ডাক পড়ে। কিন্তু তাতে কান না দিয়ে রূপক বলে, ‘‘আগামী বছর সোনালি রঙের দুর্গা তৈরি করবো। গড়ব বাড়ির লক্ষ্মীও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy