Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মোদীর ‘দম্ভ’ ঢিট করতে সব বিলেই বাগড়া

রাহুল গাঁধী আজও তাঁর বাসভবনে প্রোমোটারের টালবাহানায় নাজেহাল কিছু ক্রেতার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁদের লড়াইয়ে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন। এর পরেও কি আবাসন বিল এই যাত্রায় পাশ হতে দেবে কংগ্রেস? সনিয়া গাঁধীর দল অন্তত তা হতে দিতে নারাজ। লোকসভায় বাজেট অধিবেশনের আর মাত্র চার দিন বাকি। এর মধ্যে শুধু অর্থ বিল ছাড়া আর কিছুই যাতে পাশ না হয় তার জন্য কোমর বাঁধছে কংগ্রেস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০৩:৪৮
Share: Save:

রাহুল গাঁধী আজও তাঁর বাসভবনে প্রোমোটারের টালবাহানায় নাজেহাল কিছু ক্রেতার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁদের লড়াইয়ে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন। এর পরেও কি আবাসন বিল এই যাত্রায় পাশ হতে দেবে কংগ্রেস? সনিয়া গাঁধীর দল অন্তত তা হতে দিতে নারাজ। লোকসভায় বাজেট অধিবেশনের আর মাত্র চার দিন বাকি। এর মধ্যে শুধু অর্থ বিল ছাড়া আর কিছুই যাতে পাশ না হয় তার জন্য কোমর বাঁধছে কংগ্রেস। সনিয়া গাঁধী আজ বৈঠক করেছেন দলের রাজ্যসভা সদস্যদের সঙ্গে। কাল বসবেন লোকসভার সাংসদদের সঙ্গে।

সন্দেহ নেই, এই পরিস্থিতিতে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের দ্বিতীয় অধ্যাদেশটির ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। লোকসভায় বিপুল গরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেস-সহ তামাম বিরোধী দলের আপত্তিতে সেখানে বিলটি আলোচনার জন্যেও পেশ করে উঠতে পারেনি সরকার। ফলে তৃতীয় বার ওই অধ্যাদেশ জারি করা হবে, নাকি লোকসভা জিইয়ে রাখা হবে— এই সব সাংবিধানিক খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন অরুণ জেটলিরা। শুধু জমি অধ্যাদেশই নয়, পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি) বিল, রিয়েল এস্টেট (‌রেগুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) বিল, বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি বিলও যে কোনও ছুতোয় রুখে দেওয়ার সংকল্প নিচ্ছে কংগ্রেস। জমি অধ্যাদেশের মতোই জিএসটি এবং আবাসন বিলও সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর দাবি তুলছে কংগ্রেস। তৃণমূল অবশ্য জিএসটি বিল পাশের ক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগিতাই করতে চলেছে বলে জানিয়েছে। এটা সরকারের পক্ষে স্বস্তির।

প্রশ্ন হল, জমি নিয়ে তৈরি হওয়া বিরোধী ঐক্যে এ ভাবে ফাটল ধরছে দেখেও মোদী সরকারের প্রতিটি বিল রুখে দিতে কংগ্রেস এতটাই কেন মরিয়া? অবশ্যই জাতীয় স্তরে দলের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা ফেরানো। সরকারের যাবতীয় উদ্যোগ অচল করে দিয়ে আম-আদমি থেকে শুরু করে শিল্পপতি-লগ্নিকারী— সব পক্ষকেই মোদীর প্রতি বিরূপ করে তোলা। ঘরোয়া আলোচনায় দলের শীর্ষ নেতারা এটা অস্বীকারও করছেন না। তবে প্রকাশ্যে তাঁরা দায়ী করছেন মোদী সরকারকেই।

অভিযোগ এক, বিল নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করছে না সরকার।

অভিযোগ দুই, প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়েও দেশীয় রাজনীতির গণ্ডি পেরোতে পারছেন না। বিদেশেও কংগ্রেস ও তার বিগত সরকারগুলির উদ্দেশে ক্রমাগত বিদ্রুপ ও কটাক্ষ ছুড়ে দিচ্ছেন।

অভিযোগ তিন, রাজনৈতিক সৌজন্যতার ধার তো ধারছেই না, ভুল স্বীকারেও রাজি নয় দাম্ভিক এই সরকার। মোদী বিদেশে গিয়ে ভুল কিছু বলেননি, সংসদে এমন দাবি করে অরুণ জেটলি স্পষ্ট করে দিয়েছেন ভবিষ্যতেও মোদী এমনটা করতে পারেন। সরকারের এই দম্ভকে ঢিট করাই এখন বড় বিষয় হয়ে উঠেছে কংগ্রেসের কাছে।

রাজ্যসভায় দলের কৌশল ঠিক করতে এ দিন বিকেলে সভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ, প্রবীণ নেতা আনন্দ শর্মা, দিগ্বিজয় সিংহ, আহমেদ পটেলদের নিয়ে বৈঠক করেন সনিয়া। বৈঠক চলে দু’ঘণ্টা দুই। এর পরে দলের এক শীর্ষ নেতা জানান, সরকারের কাজকর্ম নিয়ে বিরোধীরা সমালোচনা করবে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ জড়িয়ে থাকলে, বিরোধীরাও তাতে সমর্থন দেয়। এমন মতাদর্শগত বিরোধিতাকে বড় করে দেখা হয় না। তবে এই ধরনের বিষয় নিয়ে বিরোধী নেতাদের সঙ্গে সরকার আলোচনা করে থাকে। কেন্দ্রের বর্তমান সরকার কোনও বিষয়ে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজনই বোধ করছে না। যেমন জিএসটি বিলটি সংসদে পেশ করার আগে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও আলোচনাই করেনি সরকার। অথচ মনমোহন সরকারই ওই বিলের প্রস্তাব করেছিল। ইউপিএ জমানার বিলটি কিছুটা পাল্টে বিরোধীদের তা না জানিয়েই তড়িঘড়ি সংসদে পাশ করাতে চাইছে সরকার। একই ভাবে স্থলসীমান্ত চুক্তির আওতা থেকে অসমকে বাইরে রাখতে চাইছে স্রেফ দলীয় রাজনীতির স্বার্থে। মনমোহন জমানায় ওই বিলের আওতায় অসমকেও রাখা হয়েছিল। কেন অসমকে বাদ রেখে চুক্তির কথা ভাবা হচ্ছে, তা নিয়ে কংগ্রেস এমনকী, অসমের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কোনও আলোচনা করেননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি বলেন, ইউপিএ জমানায় তৎকালীন লোকসভার নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় নিয়ম করে প্রতিটি বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে সব বিষয়ে নিয়মিত আলোচনা করতেন। বর্তমান সরকার সেটুকু সৌজন্য দেখানোর প্রয়োজন বোধ করছে না।

কংগ্রেস আর ও যে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ, তা হল, বিদেশ সফরে মোদী কংগ্রেসকে আক্রমণ করে যাচ্ছেন। গত সপ্তাহে সংসদে এ প্রসঙ্গ তুলেছিলেন আনন্দ শর্মারা। কিন্তু রাজ্যসভার নেতা জেটলি জানিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী ভুল কিছু করেননি। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতেও এমনটা করতে পারেন। কংগ্রেসের নেতারা বেজায় চটেছেন এতে। আনন্দ শর্মার কথায়, ‘‘সরকার দম্ভ ছাড়তে পারেনি। সেই দম্ভেরও শিক্ষা হওয়া উচিত।’’ এবং সেই লক্ষ্যেই রাজ্যসভায় যেমন বিল ধরে ধরে আপত্তি জানাবে কংগ্রেস। তেমনই পঞ্জাবের কিশোরীর শ্লীলতাহানি থেকে শুরু করে, পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয় উত্থাপন করে লোকসভায় গোল বাধানোর চেষ্টা করবে দল।

রাজ্যসভায় অর্থবিল পাশ করার পর টেনেটুনে চার দিন হাতে থাকবে সরকারের। এর মধ্যে জিএসটি, আবাসন, স্থলসীমান্ত চুক্তি বা জলপথ নিয়ে বিল পাশ হবে? মোদীর সেনাপতিরা ঘোর সংশয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE