একই মালায়। বৃহস্পতিবার রায়বরেলীতে সনিয়া ও প্রিয়ঙ্কা। ছবি: পিটিআই।
মনমোহন নামজাদা অর্থনীতিবিদ। তাই তাঁর কাছে এক ঘণ্টার অর্থনীতির পাঠ নিলেন নরেন্দ্র মোদী। গত কাল প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর হঠাৎ আগমন ঘিরে রাজনীতির যে প্রবল জল্পনা চলছে, তার জবাব আজ এ ভাবেই দিলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী।
কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে সরকারের অর্থনীতি নিয়ে ঝাঁঝালো সমালোচনার প্রহরখানেক বাদে গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারি বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ! তা নিয়ে রাজনীতির অলিন্দে ধোঁয়াশা ও জল্পনা ঘনীভূত হওয়ায় আজ মেঘ কাটাতে সচেষ্ট হলেন রাহুল গাঁধী। স্বভাবসুলভ ভঙ্গীতে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে রাহুল আজ বলেন, ‘‘মনমোহনজি গতকাল বলেছিলেন, দেশের অর্থনীতির অধোগতি হচ্ছে। তার পরেই তাঁকে চা খেতে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী।’’ এখানেই না থেমে রাহুল বলেন, ‘‘অর্থনীতিবিদ হিসেবে মনমোহনজির গোটা বিশ্বে সুনাম রয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী তাঁর পাঠশালায় আজ এক ঘণ্টার ক্লাস করলেন। জেনে নিলেন, কী ভাবে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হবে। মনমোহনজির সঙ্গে দেখা হলে জানতে চাইব মোদীজি কী কী শিখলেন!’’
কেন্দ্রে মোদী সরকারের অর্থনীতি নিয়ে সমালোচনার জন্য গতকাল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে কৌশলে ব্যবহার করেছিলেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মনমোহন। এবং সেই সমালোচনা এতই তীক্ষ্ণ ছিল যে, দীর্ঘদিন বাদে মনমোহনকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন কংগ্রেসিরা। কিন্তু সন্ধে হতে না হতে তাতে সেই উচ্ছ্বাসে জল পড়ে যায়। কারণ, কংগ্রেসকে বলা-কওয়া নেই নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে সাত নম্বর রেসকোর্স রোডে চলে যান মনমোহন। তাঁকে গেট থেকে অভ্যর্থনা করে ভিতরে নিয়ে যান স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। এবং সঙ্গে সঙ্গে সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেয় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়।
মনমোহন-মোদীর সেই ছবির প্রচার শুরু হতেই জল্পনা শুরু হয়ে যায়, তা হলে কি তলে তলে আপস করে নিচ্ছেন মনমোহন? কারণ, স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে তাঁকে সম্প্রতি নোটিস ধরিয়েছে সিবিআই। বিশেষ আদালতে তাঁকে হাজির হতেও বলা হয়েছিল।
তা ছাড়া, দু’দিন আগে প্রাক্তন ট্রাই কর্তা প্রদীপ বাইজলও এক সাক্ষাৎকারে স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির দায় সরাসরি মনমোহনের ওপরে চাপিয়ে দেন।
এই অবস্থায় রাতে মনমোহনের সচিব জানান, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর নিমন্ত্রণেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। অর্থনীতি ও বিদেশনীতি নিয়ে উভয়ের কথা হয়েছে।’’ কিন্তু কংগ্রেস নেতারা বুঝতে পারেন, এতেও ঠিক মতো ক্ষত মেরামত হল না। বিজেপি বরং কংগ্রেসকে বোকা বানিয়েছে। মনমোহন-মোদীর বৈঠকের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সব আক্রমণ ভোঁতা করে দিতে চেয়েছেন বিজেপির রাজনৈতিক ম্যানেজাররা। এই পরিস্থিতিতেই আজ ধোঁয়াশা কাটাতে মুখ খোলেন রাহুল।
তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী বলেন, ‘‘মনমোহনের অর্থনীতি ডাহা ফেল করেছে। তাতে গত দশ বছরের গ্রামের মানুষ আরও গরিব হয়েছে। সেই ফেল করার অর্থনীতির পরামর্শ আমাদের চাই না। মোদী গুজরাতের উন্নয়ন করে দেখিয়েছেন। এ বার গোটা দেশকে বৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবেন।’’
বিজেপি যে ছেড়ে কথা বলবে না, সেটা জানা কথা। কিন্তু মোদীকে কটাক্ষ করা অব্যাহত রাখেন রাহুল। ছাত্র সংগঠনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘এ দেশে এক জন আছেন যিনি সব জানেন! কৃষকদের ব্যাপারে জানেন, শিক্ষার ব্যাপারে জানেন। আবার জামাকাপড়ের ব্যাপারেও জানেন!’’ সন্দেহ নেই, মোদীকে ‘সবজান্তা’ বলে কটাক্ষ করে তাঁর পোশাক-আশাক নিয়ে কটাক্ষ করতে চান রাহুল। আবার প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়েও খোঁচা দেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমেরিকা, ফ্রান্স, মঙ্গোলিয়া— কোথায় কোথায় না চলে যাচ্ছেন! কিন্তু কৃষক, মজুরের বাড়ি ঢুঁ মেরে তাঁদের দুর্দশা দেখার সময় ওঁর নেই!’’
ঘটনা হল, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এখন গোটা গাঁধী পরিবারই প্রচারে নেমে পড়েছে। গতকাল অমেঠী গিয়ে প্রিয়ঙ্কা বঢরা কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানির সমালোচনা করেছিলেন। আজ আবার রায়বরেলী সফরে গিয়ে গ্রাম সড়ক যোজনায় বরাদ্দ না দেওয়ার জন্য মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণ করেন সনিয়া গাঁধী। কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, এই প্রচারে মনমোহনও দশ নম্বর জনপথের সঙ্গেই রয়েছে। এ ব্যাপারে বিভ্রান্তি যে নেই সেটাই আজ বুঝিয়ে দিলেন রাহুল গাঁধী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy