চার মাসের মাথায় নভেম্বরে জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই আজ ভাঙল কংগ্রেস ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের ছ’বছরের পুরনো সম্পর্ক। রাজ্যে এখনও ওমর আবদুল্লার নেতৃত্বে দু’দলের জোট সরকার চললেও, বিধানসভা ভোটের আগে কোনও জোট হচ্ছে না।
লোকসভা নির্বাচনে জম্মু-কাশ্মীরের ছ’টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে একটিও জিততে পারেনি কংগ্রেস বা ন্যাশনাল কনফারেন্স। বিজেপি জম্মুর দু’টি আসন এবং লাদাখ দখল করেছে। মেহবুবা মুফতির পিডিপি কাশ্মীর উপত্যকার তিনটি আসনই জিতে নিয়েছে। তার থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ হল, লোকসভা নির্বাচনে মোট ভোটের ৩২ শতাংশ গিয়েছে বিজেপির ঝুলিতে। সেই হিসেবে ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, কংগ্রেস, সবাইকেই পিছনে ফেলে দিয়েছে বিজেপি। রাজনৈতিক সূত্রে খবর, এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ন্যাশনাল কনফারেন্সের সঙ্গে জোটে গিয়ে ওমর সরকারের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার দায় এড়াতে চেয়েছে। কাশ্মীরের আঞ্চলিক দলগুলি বরাবরই কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে থাকতে চায়। ওমরও লোকসভা নির্বাচনের পরে হতোদ্যম হয়ে পড়া কংগ্রেসের সঙ্গে থাকতে চাননি।
অমিত শাহ বিজেপির সভাপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর জম্মু-কাশ্মীরেও তাঁর দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার জন্য পরিকল্পনা নিচ্ছেন। শ্রীনগরে নিজেদের ক্ষমতায় মসনদ দখলের জন্য রাজ্য নেতৃত্বকে কাশ্মীরি পণ্ডিত ছাড়াও, বৌদ্ধ ও বকরওয়াল উপজাতির মন জয় করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, জম্মুতে অমিত হিন্দু ভোটের মেরুকরণের চেষ্টা করবেন। কাশ্মীর উপত্যকার যে সব আসন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত নয়, সেখানেও একই চেষ্টা হবে। উল্টোদিকে পিডিপিও ক্ষমতায় ফিরতে চেয়ে এ বার মুফতি মহম্মদ সইদকে সামনে রেখে ভোটে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখতে কংগ্রেস ও ন্যাশনাল কনফারেন্স, দুই দলই যে জোট ভাঙতে চেয়েছিল, তার প্রমাণ মিলেছে আজ। দুই দলের নেতারাই দাবি করেছেন, তাঁরাই আগে জোট ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ প্রথমে জম্মুতে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা ঘোষণা করেন কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ, অম্বিকা সোনি ও সইফুদ্দিন সোজ। এআইসিসি-তে জম্মু-কাশ্মীরের ভারপ্রাপ্ত অম্বিকা বলেন, “আমাদের সিংহভাগ নেতা-কর্মীই নির্বাচনে একলা লড়তে চেয়েছেন।” কংগ্রেসের এই ঘোষণার পরেই ওমর আবদুল্লা ট্যুইট করে জানিয়ে দেন, দশ দিন আগে তিনি নিজেই জোট ভাঙার সিদ্ধান্ত সনিয়া গাঁধীকে জানিয়ে এসেছেন। ওমর বলেন, “সনিয়া গাঁধীকে বলেছিলাম, আমি প্রকাশ্যে জোট ভাঙার কথা ঘোষণা করব না। কারণ আমি নিজেকে সুবিধাবাদী হিসেবে তুলে ধরতে চাই না।”
ওমর জানিয়েছেন, কংগ্রেস এটাকে এখন নিজেদের সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখাতে চাইছে। এতে তিনি আশ্চর্য হননি। তবে কংগ্রেসের দাবি সত্যি নয়। গুলাম নবি আজাদ, অম্বিকা সোনিরা দাবি করেছেন, লোকসভা নির্বাচনে দু’দলের মধ্যে জোট হলেও এক দলের ভোট আরেক দলের ঝুলিতে যায়নি। শরিক হিসেবে ন্যাশনাল কনফারেন্সের কাছ থেকে কোনও সাহায্যই পায়নি কংগ্রেস। লোকসভা ভোটে জম্মু ও লাদাখের তিনটি আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছিল। কাশ্মীর উপত্যকার তিনটি আসনে লড়েছিল ন্যাশনাল কনফারেন্স। অম্বিকা সোনির অভিযোগ, জম্মুতে কংগ্রেস প্রার্থীরা ন্যাশনাল কনফারেন্সের ভোট পাননি। ওমরের পাল্টা অভিযোগ, জম্মুতে কংগ্রেসের ঝুলিতে তাঁর দলের সব ভোটই গিয়েছিল। কিন্তু কাশ্মীর উপত্যকায় তাঁরা কংগ্রেসের কোনও ভোট পাননি। সেটা হয়ে থাকলে ভোটের ফল অন্যরকম হত। এখন বিধানসভা নির্বাচনেও এর পুনরাবৃত্তি হলে ন্যাশনাল কনফারেন্সেরই ক্ষতি হত। কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদের বক্তব্য, “দল জম্মু-কাশ্মীরে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে উঠে আসতে চায়। সেই জন্যই নিজের শক্তিতে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
বিধানসভার ৮৭টি আসনের মধ্যে তিনটি বাদে সবক’টিতেই কংগ্রেস প্রার্থী দেবে। সিপিএম বিধায়ক মহম্মদ ইউসুফ তারিগামি ও দুটি স্থানীয় দলের নেতাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেবে না তারা। ছয় বছর আগে বিধানসভা ভোটের পরে ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় কংগ্রেস ও ন্যাশনাল কনফারেন্স জোট গড়ে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আগামী বিধানসভায় জোট না হওয়ার সিদ্ধান্তে সেই সরকারের কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা আশাবাদী, সরকারের আর কয়েক মাস মেয়াদ বাকি রয়েছে। ভোটে জোট না হওয়ার সিদ্ধান্তের প্রভাব সরকারের উপর পড়বে না। সইফুদ্দিন সোজের বক্তব্য, “যতদিন চলে, সরকার চলুক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy