ফাইল চিত্র।
মাঝখানে ২১টা বছর। তবু বিস্তর আলোচনা করে জ্যোতি বসুর মতোই সীতারাম ইয়েচুরির রাস্তাও বন্ধ করে দিল সিপিএম! সেই সঙ্গেই তৃণমূলের জন্য খুলে দেওয়া হল রাজ্যে ফের কংগ্রেসকে পাশে নেওয়ার দরজা!
দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভোটাভুটিতে আজ খারিজ হয়ে গেল সিপিএমের সাধারণ সম্পাদককে ফের রাজ্যসভার প্রার্থী করার প্রস্তাব। প্রকাশ কারাট শিবিরের যুক্তি, কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের রাজ্যসভায় যাওয়া কখনওই উচিত নয়। জ্যোতিবাবুর জন্য প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রস্তাব যখন এসেছিল, তখন এ ভাবেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। যাকে পরে স্বয়ং জ্যোতিবাবু বলেছিলেন, ‘ঐতিহাসিক ভুল’! সিপিএমের এ বারের সিদ্ধান্তকে ‘চতুর্থ ঐতিহাসিক ভুল’ বলতে শুরু করেছেন দলের ভিতরে-বাইরে অনেকেই! বসুকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়া, পরমাণু চুক্তি ঘিরে ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেওয়া, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে বহিষ্কারের পরে কারাটদের মুকুটে আরও একটি পালক যোগ হল! বস্তুত, নরেন্দ্র মোদীর দাপটের বাজারে তিন দিন ধরে আলোচনা করে কোনও দল নিজের সুবক্তা সাংসদ কমিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে— এমন নজির খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ!
আরও পড়ুন:বায়ুসেনার নিশানায় ছিলেন মুশারফরা
সিপিএমের একটি সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় কমিটিতে ইয়েচুরিকে প্রার্থী করার প্রস্তাব খারিজ হয়েছে ৫০-৩০ ভোটে। এমনকী, বাংলার সব সদস্যও ইয়েচুরির পক্ষে হাত তোলেননি! এখন রাজ্যসভা ভোটে সিপিএমের অবস্থান কী হবে, তা ঠিক করার ভার বঙ্গ ব্রিগেডের উপরেই ছেড়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। কলকাতায় ফিরে বুধবারই বামফ্রন্টের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রেরা।
নিজেদের যুক্তিতেই রাজ্যসভায় কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থন করা মুশকিল সিপিএমের। এই অবস্থায় তাদের কাজ আরও কঠিন করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা থেকে ষষ্ঠ আসনে কংগ্রেস মীরা কুমারকে প্রার্থী করলে তৃণমূল তাঁকে সমর্থন করবে বলে দিল্লিতে আজ জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যে মীরাকে কয়েক দিন আগেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বামেরা ভোট দিয়েছে, তাঁর বিরোধিতা করার যুক্তি সাজাতে হবে এখন! অথবা এমন কোনও ‘নির্দল’ প্রার্থীর সন্ধান করতে হবে, যাঁকে বাম-কংগ্রেস দু’পক্ষই সমর্থন করতে পারবে। অথবা বামেদের কোনও নিজস্ব প্রার্থী খুঁজতে হবে, যিনি হার নিশ্চিত জেনেও দাঁড়াতে রাজি হবেন! নতুবা ভোটদানে বিরত থাকতে হবে।
দু’বারের বেশি যে কাউকে রাজ্যসভায় পাঠানো হয় না, কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিজেই উল্লেখ করেছেন ইয়েচুরি। তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানোর পক্ষে সওয়াল করেন সূর্যবাবু। যুক্তি দেন, বিজেপি-তৃণমূলকে ঠেকাতে কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া জরুরি। ইয়েচুরিকে প্রার্থী করা না হলে আসনটি তৃণমূল ছিনিয়ে নিতে পারে। ইয়েচুরির পক্ষে ব্যাট ধরেন তামিলনাড়ুর সাংসদ টি কে রঙ্গরাজনও। কিন্তু কারাট যুক্তি দেন, কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের রাজ্যসভায় যাওয়া উচিত নয়। দিনের শেষে তাঁদের মুখেই যুদ্ধজয়ের হাসি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy