Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তৃতীয় ফ্রন্টের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন সিপিএমে

সিপিএমের আতস কাঁচের তলায় এ বার দিমিত্রভের ‘যুক্তফ্রন্ট রণকৌশল’। লোকসভা নির্বাচনের ভরাডুবি সিপিএম নেতৃত্বকে এমনই অস্তিত্বের সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে যে প্রকাশ কারাটরা এ বার যুক্তফ্রন্ট তৈরির রণকৌশলকেই খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণিকে একত্র করার জন্যই প্রথম ‘যুক্তফ্রন্টের রণকৌশল’-এর ডাক দেওয়া হয়েছিল কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালে।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৫
Share: Save:

সিপিএমের আতস কাঁচের তলায় এ বার দিমিত্রভের ‘যুক্তফ্রন্ট রণকৌশল’।

লোকসভা নির্বাচনের ভরাডুবি সিপিএম নেতৃত্বকে এমনই অস্তিত্বের সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে যে প্রকাশ কারাটরা এ বার যুক্তফ্রন্ট তৈরির রণকৌশলকেই খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণিকে একত্র করার জন্যই প্রথম ‘যুক্তফ্রন্টের রণকৌশল’-এর ডাক দেওয়া হয়েছিল কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালে। তার পর ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার জন্য যুক্তফ্রন্টের কথা বলেন বুলগেরিয়ার কমিউনিস্ট নেতা জর্জি দিমিত্রভ। এই রণকৌশল মেনেই পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, ত্রিপুরায় অন্য বামপন্থী দলগুলিকে নিয়ে বামফ্রন্ট গড়েছিল সিপিএম। তিন রাজ্যেই বামফ্রন্ট এখনও বিদ্যমান। পশ্চিমবঙ্গে হারের পরেও বামফ্রন্টে চিড় ধরেনি। তা হলে হঠাৎ কেন যুক্তফ্রন্ট তৈরির রণকৌশল পর্যালোচনার প্রয়োজন পড়ল, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

কারাটের এই উপলব্ধির সমর্থনে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটা অংশ এগিয়ে এসেছেন। পলিটব্যুরো নেতা এস আর পিল্লাই বলেন, “লোকসভা নির্বাচনের আগে অন্য কোনও আঞ্চলিক দল বাম দলের সঙ্গে ফ্রন্ট গড়তে এগিয়ে আসেনি। সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল ও ত্রিপুরার বাইরে এবং জাতীয় স্তরে যুক্তফ্রন্ট তৈরি করতে গিয়ে কী অভিজ্ঞতা হয়েছে, তার পর্যালোচনার কথাই বলেছেন কারাট।”

সিপিএম নেতারা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট তৈরি হয়েছিল সমমনোভাবের দল এবং একই শ্রেণির মানুষকে নিয়ে। শুধু ভোটের জন্য সেই জোট তৈরি হয়নি। কিন্তু জাতীয় স্তরে কিংবা অন্যান্য রাজ্যে সেই ভাবে যুক্তফ্রন্ট তৈরি করা যায়নি। প্রত্যেক বারই ভোটের আগে কখনও লালুপ্রসাদ, কখনও মুলায়ম সিংহ যাদব, কখনও মায়াবতী বা জয়ললিতার সঙ্গে রাজ্য স্তরে কিংবা জাতীয় স্তরে আসন সমঝোতা করে তৃতীয় ফ্রন্ট তৈরির চেষ্টা চালিয়েছেন বামেরা। সেই জোট একেবারেই স্থায়ী হয়নি। মুলায়ম, লালুপ্রসাদ, জয়ললিতারা নিজের নিজের সুবিধা অনুূযায়ী অন্য শিবিরে ভিড়ে গিয়েছেন। অন্য বাম দলের নেতারাও এখন বলছেন, সত্যিই এ বার ভেবে দেখার সময় এসেছে। সিপিআই নেতা পল্লব সেনগুপ্ত বলেন, “কংগ্রেস বা বিজেপির সঙ্গে এই দলগুলির আর্থিক নীতির বিশেষ ফারাক নেই। তাই নির্বাচনে জোট হলেও অন্য সময়ে বামপন্থীরা সরকারের আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে যে সব আন্দোলন করে, সেখানে এই দলগুলিকে পাওয়া যায় না।”

দু’বছর আগে পার্টি কংগ্রেসে সিপিএম নিজস্ব সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর ওপরে জোর দিয়েছিল। সেই চেষ্টা যে সফল হয়নি, প্রকাশ কারাট নিজেই এখন তা স্বীকার করছেন। লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদীর জুজু দেখিয়ে ফের সব আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে জোট তৈরির চেষ্টা করেছিলেন কারাট। শেষ পর্যন্ত সেই ফ্রন্টও দানা বাঁধেনি। এ বার কি তা হলে বামপন্থী ও আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে ফ্রন্ট তৈরির চেষ্টাই ছেড়ে দেবে সিপিএম? পিল্লাই বলেন, “পর্যালোচনার অর্থ এই নয় যে আমরা যুক্তফ্রন্টের রণকৌশল ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু এত দিনের অভিজ্ঞতার নিরিখে ভবিষ্যতে কী ভাবে সেই রণকৌশলকে কাজে লাগানো যেতে পারে, কী ভাবে স্থায়ী ও বিশ্বাসযোগ্য জোট গড়া যেতে পারে, নেতৃত্ব সেটাই খতিয়ে দেখতে চাইছেন।” সিপিএমের এই নেতা জানান, আগামী বছর পার্টি কংগ্রেসেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

third front strategy premanshu chowdhury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE