Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ফুরোয় না রাস্তা, বাহিনী দিশাহারা দণ্ডকারণ্যে

গোটাটাই আদিবাসী এলাকা। পাকা রাস্তা নেই। স্কুল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র তো দূর, ইটের একটা বাড়িও চোখে পড়ে না। রাজ্য সরকার নাকি এলাকার উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৫০
Share: Save:

গোটাটাই আদিবাসী এলাকা। পাকা রাস্তা নেই। স্কুল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র তো দূর, ইটের একটা বাড়িও চোখে পড়ে না। রাজ্য সরকার নাকি এলাকার উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। অথচ উন্নয়ন স্তব্ধ। প্রশাসনের দাবি, সড়ক তৈরিতে বাধা দেয় মাওবাদীরা। স্কুলবাড়ি তৈরি হলেও গুঁড়িয়ে দেয়। আর মাওবাদীদের দাবি, তাদের পাশে আছে মানুষ।

বছর আটেক আগে খবরের সূত্রে দণ্ডকারণ্যে গিয়ে ওপরের ছবিগুলো দেখা। সে বারই রাতে গোপন ডেরায় নিয়ে গিয়েছিল মাওবাদীরা। বাঙালি সাংবাদিককে বুঝিয়েছিল, তাদের একমাত্র লড়াই রাষ্ট্রের সঙ্গে। ছত্তীসগঢ়ের এই এলাকায় রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে নিয়মিত আনাগোনা আধাসেনার। অতএব প্রতিপক্ষ তাঁরাও।

আট বছর পরেও সেই এক ছবি। হতদরিদ্র গ্রামবাসী ঘর করেন ভয় আর অনুন্নয়নের সঙ্গে। বছরের পর বছর ধরে চিন্তাগুম্ফার জঙ্গলের বুক চিরে বুরকপাল-জাগড়গুণ্ডা সড়ক তৈরি হচ্ছে তো হচ্ছেই। অনেকেই বলেন, রাস্তা তৈরির বরাত পাওয়া সরকারি ঠিকাদারদের সঙ্গে বোঝাপড়া তৈরি করে নিয়েছে মাওবাদীরা। ঠিকাদার দেবেন সরকারি টাকার ভাগ। বিনিময়ে পাবেন নিশ্চিন্তে থাকার আশ্বাস।

মাওবাদী দমনে

• দিল্লিতে মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ৮ মে

• এই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ নেই

• বৈঠকে থাকবেন মাওবাদী এলাকার ৩৫ জেলাশাসক

• দাবি উঠেছে ছত্তীসগঢ়ে সেনা ও বায়ুসেনা মোতায়েনের

• বৈঠক হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রসচিব, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার

দু’দিন আগে সুকমার জঙ্গলে মাওবাদী হামলায় নিহত জওয়ানদের দায়িত্ব ছিল নির্মীয়মাণ বুরকপাল-জাগড়গুণ্ডা সড়ক ও তার নির্মাণকর্মীদের সুরক্ষা দেওয়া। দেখা যাচ্ছে, নির্মাণকর্মী ও স্থানীয় গ্রামবাসীরা সবাই অক্ষত। বেছে বেছে মারা হয়েছে শুধু জওয়ানদেরই। এমনকী আজ এই অভিযোগ উঠেছে যে, নিহত ছ’জন জওয়ানের গোপনাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে মাওবাদীরা। তবে সিআরপি শীর্ষ কর্তা সুদীপ লাখটাকিয়া বলেন, ‘‘আমার কাছে এ বিষয়ে কোনও তথ্য নেই। হতে পারে ওই জওয়ানেরা গোল হয়ে বসেছিলেন। সেই সময়ে তাঁদের মাঝে গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়। তাতে একই ধরনের ক্ষত হতে পারে।’’

সূত্রের দাবি, ওই অঞ্চলে মাওবাদী সক্রিয়তা নিয়ে বিশদ কোনও তথ্য ছিল না সিআরপি-র কাছে। অথচ বাহিনীর ওই ৭৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের শিবির সংলগ্ন এলাকাতেই এক সরপঞ্চকে মাত্র দু’মাস আগে পুলিশের চর সন্দেহে খুন করেছিল মাওবাদীরা। গোয়েন্দাদের আবার আশঙ্কা, আধাসেনা বা স্থানীয় গ্রামবাসীদের মধ্যেই রয়েছে মাওবাদীদের চর। অনেক গ্রাম প্রধানের সঙ্গে ঠিকাদারদের মতোই বোঝাপড়া তৈরি করেছে জঙ্গিরা। গ্রাম থেকে টাকা-খাবার সবই জুটছে তাদের। সরকারের দাবি, এ সবই আদায় হচ্ছে ভয় দেখিয়ে।

সিআরপি-র আইজি (বস্তার) বিবেকানন্দ সিন্‌হা বলেছেন, ‘‘কোনও একটি কারণকে দায়ী না করে সার্বিক ভাবে সুকমার ব্যর্থতার বিশ্লেষণ করতে হবে।’’ আপাতত মাওবাদী এলাকায় দ্রুত রাস্তা তৈরির কাজ শেষ করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা ভাবছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। নতুন রণকৌশল ঠিক করতে মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের আগামী ৮ মে দিল্লিতে বৈঠক ডেকেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। এই তালিকায় এখন পশ্চিমবঙ্গ নেই। বৈঠকে থাকবেন উপদ্রুত এলাকাগুলির ৩৫ জেলাশাসকও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CRPF Maoist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE