দাউদ ইব্রাহিম
এ বার আর জনবহুল জায়গায় বিস্ফোরণ নয়, আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যা করে ভারতে অশান্তি পাকানোর ছক করছে পাকিস্তান। আর সেই কাজে ফের ‘ডি-কোম্পানি’ ভরসা পাকিস্তানের। মুম্বইতে ধৃত ফয়সল মির্জাকে জেরা করে সন্ত্রাসের এক নতুন ব্লু-প্রিন্টের হদিশ পেল কলকাতা ও মুম্বই পুলিশের যৌথ তদন্তকারী দল।
গত শুক্রবার কলকাতা পুলিশের সূত্র ধরে ফয়সলকে গ্রেফতার করে মুম্বই পুলিশ। শুধু দাউদ নয়, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন এবং খালিস্তান লিবারেশন ফোর্সের মত সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে ভারতে সন্ত্রাসের জাল ছড়ানোর চেষ্টায় পাক চর সংস্থা আইএসআই, দাবি গোয়েন্দাদের।
মুম্বইয়ের যোগেশ্বরী এলাকার বাসিন্দা, পেশায় ইলেক্ট্রিসিয়ান ফয়সল যে পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছে তা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি তার পরিবার। বাড়িতে বলেছিল, শারজা যাচ্ছে চাকরির খোঁজে। তদন্তকারীদের দাবি, গুজরাতে একটি বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ফারুক দাবেদিওয়ালার সাহায্যেই পাকিস্তানে পৌঁছয় ফয়সল। মুম্বই পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “ফারুক দীর্ঘদিন ধরে দাউদ ঘনিষ্ঠ। সম্পর্কে সে ফয়সলের কাকা।
আরও পড়ুন
‘শীর্ষ’ ভারতীয় নেতার উপর হামলার ছক বানচাল করল কলকাতা পুলিশ
ভারত থেকে পালিয়ে সে শারজায় ডেরা বাঁধে। ফয়সলকে সে প্রথমে নিয়ে যায় দুবাই। সেখানে দাউদের সঙ্গী এক ব্যাবসায়ী তাকে নাইরোবির বিমানের টিকিট কেটে দেয়। সেই বিমানেই করাচি পৌঁছয় ফয়সল।” জেরায় ফয়সল জানিয়েছে, করাচিতে প্রথমে তাকে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের শীর্ষ নেতা আমির রেজা খানের কাছে রাখা হয়। আমির তাকে মুরিদকেতে লস্কর-ই-তৈবা-র সদর দফতরে পৌঁছে দেয়। সেখানেই লস্কর শিবিরে দু’ সপ্তাহ ধরে অস্ত্র ও বিস্ফোরক প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মঘাতী হামলা করার জন্য তৈরি করা হয় ফয়সলকে। তদন্তকারীদের দাবি, পাকিস্তানে বসেই ছক করা হয় ভারতের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে হত্যা করার। কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিকের দাবি, “দেশের এক শীর্ষ নেতার ওপর হামলা করার ছক চূড়ান্ত করে ফেলেছিল এরা। শেষ মুহূর্তে সেই ছক বানচাল করা হয়।”
মুম্বইতে ধৃত ফয়সল মির্জা।
ফয়সলকে জেরা করে জানা গিয়েছে, আমির রেজা খান এ রকম কমপক্ষে এক ডজন যুবককে ফয়সলের মতো প্রশিক্ষণ দিয়ে ভারতে ফেরত পাঠিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ে ব্যবহার করার জন্য। সেই সূত্র ধরে ইতিমধ্যেই মুম্বইয়ের এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। ইন্টারপোলের সাহায্য নিয়ে দুবাইতে ফারুককেও আটক করা হয়েছে, জানিয়েছেন এক তদন্তকারী।
ডি-কোম্পানির এই ভূমিকা সামনে আসার পরই পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসের এক নতুন অক্ষের সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা। পঞ্জাবে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর ২০১৭ পর্যন্ত আটটি খুনের ঘটনা ঘটে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দু’জন মোটরবাইক আরোহী পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করেছে টার্গেটকে। যারা খুন হয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতা। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) এই খুনগুলির তদন্তে নেমে অনাবাসী ভারতীয় জগতার সিং এবং হরদীপ সিং-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করে। এনআইএ তাদের চার্জশিটে জানিয়েছে— ইতালির বাসিন্দা হরদীপ এবং লুধিয়ানার বাসিন্দা রমনদীপ সিং সরাসরি এই খুনের সঙ্গে যুক্ত।
আরও খবর
আমির রেজার খোঁজে নেমে ফয়জল শিকার
এরা প্রত্যেকেই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন খালিস্তান লিবারেশন ফোর্সের সক্রিয় সদস্য। এনআইএ-র দাবি, ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে— ইতালি, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়াতে বসবাসকারী সংগঠনের সদস্যরা আর্থিক সাহায্য করছে। কিন্তু হামলার ছক তৈরি হচ্ছে পাকিস্তানের মাটিতে। এক এনআইএ তদন্তকারীর দাবি, হরমিত সিং ওরফে ডক্টর নামে পাকিস্তানের এক বাসিন্দা গোটা অপারেশন নিয়ন্ত্রণ করেছে, আইএসআই এর নির্দেশ মেনে। ধৃত রমনদীপকে শারজার শুটিং ক্লাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তার পিছনেও ছিল দাউদের কোম্পানি।
তদন্তকারীদের দাবি, ফয়সল এবং রমনদীপ বা আমির রেজা খান, সবাই একই পরিকল্পনার অংশ, যেখানে পাক চর সংস্থার হয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে ডি-কোম্পানি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy