উত্তরপ্রদেশে ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ার মুখেই ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল দাদরির ঘটনা। মহম্মদ আখলাক হত্যার প্রায় আট মাস পর ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি রিপোর্ট জানাল, গোমাংস বা সেই গোত্রেরই কোনও মাংস ছিল তাঁদের বাড়ির ফ্রিজে। রিপোর্টটি দিয়েছে অখিলেশ সিংহ যাদব সরকারেরই অধীনে থাকা মথুরার একটি ল্যাবরেটরি।
গত সেপ্টেম্বর মাসে ক্ষিপ্ত জনতা আখলাককে পিটিয়ে মারার পরে তাঁর বাড়িতে পাওয়া মাংস প্রথমে পরীক্ষা করেন গ্রেটার নয়ডার এক ভেটেরিনারি অফিসার। তাঁর রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ওটা পাঁঠার মাংস। রাজ্যে ক্ষমতাসীন সমাজবাদী পার্টি ও বিজেপি-বিরোধী সব দল সমস্বরে অভিযোগ তুলেছিল, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের লক্ষ্যেই গোহত্যার গুজব ছড়ানো হয়েছে। এর পিছনে রয়েছে আরএসএস ও বিজেপি। এখন রাজ্য সরকারেরই অধীনে থাকা ল্যাবরেটরি উল্টো রিপোর্ট দেওয়ায় অস্বস্তিতে মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ ও তার দল।
উত্তরপ্রদেশে গোমাংস খাওয়া নিষিদ্ধ নয়। তবে গোহত্যা বেআইনি কাজ। গত সেপ্টেম্বর মাসে দাদরির বিসারা গ্রামে গুজব রটে, আখলাকের বাড়িতে গোহত্যা করা হয়েছে। আর সেই ‘অপরাধে’ আখলাকের বাড়িতে হামলা চালায় উন্মত্ত জনতা। তারা পিটিয়ে মারে ৫২ বছর বয়সি আখলাককে। গুরুতর জখম হন আখলাকের ছেলে। এই ঘটনায় এক বিজেপি নেতা-সহ ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। দাদরি-কাণ্ডে বিতর্কের ঝড় ওঠে দেশ জুড়ে। বিরোধীদের তুমুল নিন্দার মুখে চাপে পড়ে যায় নরেন্দ্র মোদীর সরকার। দাদরির ঘটনাকে দুঃখজনক আখ্যা দিয়েও বিজেপি দায় ঠেলে অখিলেশ সরকারের দিকেই।
তাদের যুক্তি ছিল, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখাটা রাজ্যের দায়িত্ব। তাতে অবশ্য সমালোচনা বন্ধ হয়নি। বরং এ বিষয়ে মোদীর দীর্ঘ নীরবতা নিয়ে ক্রমাগত চাপ বাড়াতে থাকে কংগ্রেস ও কেন্দ্রের অন্য বিরোধী দলগুলি। আখলাকের ছোট ছেলে দানিশ সম্প্রতি আশঙ্কা প্রকাশ করেন ‘হিন্দুত্ববাদী’রা এই মামলাকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে। এখন গোমাংসের প্রমাণ মেলার খবরে, দাদরি প্রসঙ্গ ফের রাজনীতির চাপানউতোরে ইন্ধন হয়ে উঠবে
বলে মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলি।
আখলাকের হত্যার পরে তাঁর পরিবার গোহত্যা তো দূর, গোমাংস রাখা বা খাওয়ার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেছিল। আর আজ পুলিশের দাবি উড়িয়ে দিয়ে আখলাকের ভাই চাঁদ মহম্মদ বলেছেন, ‘‘দাদরি পুলিশ প্রথমে বলেছিল, ওটা পাঁঠার মাংস। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, গরুর মাংস। পুরোটাই আসলে রাজনীতি।’’ ঘটনার পরপরই অখিলেশ সরকার ক্ষতিপূরণ হিসেবে আখলাকের পরিবারকে জমি ও নগদ ৪৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিল।
এখন কী বলছে সরকার?
প্রশাসনের তরফে এ দিন মুখ খুলেছেন রাজ্যের পুলিশ-প্রধান জাভেদ আহমেদ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রথমে জানা গিয়েছিল, ওটা পাঁঠার মাংস। এখন রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ফ্রিজে গোমাংস বা সেই গোত্রের মাংস ছিল। তাতে অবশ্য এক জনকে পিটিয়ে মেরে ফেলার মতো ঘটনা লঘু হয়ে যায় না।’’ প্রায় একই বক্তব্য আখলাকের পরিবারের আইনজীবী ইউসুফ সইফিরও। তিনি বলেছেন, ‘‘মথুরার ল্যাবরেটরি মাংস নিয়ে কী বলল, তাতে কিছু আসে যায় না। মামলাটা হত্যার। এবং প্রশাসন ও তদন্তকারীও সেটা মানছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy