Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ট্রাম্প জমানায় প্রতিটা বল দেখে খেলবে দিল্লি

তিনি লেজে কাটবেন, না মাথায় জানা নেই! তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে সম্যক পরিচিতিও নেই বিশ্বের। হোয়াইট হাউসের গৃহপ্রবেশের আগে, স্বদেশেই তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভের ঝড়।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২১
Share: Save:

তিনি লেজে কাটবেন, না মাথায় জানা নেই! তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে সম্যক পরিচিতিও নেই বিশ্বের। হোয়াইট হাউসের গৃহপ্রবেশের আগে, স্বদেশেই তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভের ঝড়। তাঁর প্রতিটি নীতিকে বঁটিতে কাটতে শুধু বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা নয়, প্রস্তুত মার্কিন কংগ্রেসের কিছু রিপাবলিকান সদস্য এবং মার্কিন সংবাদমাধ্যমও।

তিনি অর্থাৎ ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাইসিনা সংলাপে চার দিন আগেই নরেন্দ্র মোদী মুখে বলেছেন বটে, এত দিন ধরে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের যে ভিত তৈরি হয়েছে, ট্রাম্প যুগে তা এগিয়ে নিয়ে যেতে সমস্যা হবে না। শপথ নেওয়ার পরে ট্রাম্পকে টুইটারে শুভেচ্ছাও জানান তিনি। কিন্তু বাস্তব যে এতটা মসৃণ নয়, তা ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করছেন সাউথ ব্লকের কর্তারা। তাঁদের সম্মিলিত মত হল, সুকৌশলে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী মার্কিন নীতিকে বদলে বদলে এগোতে হবে। জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ‘বল টু বল’ খেলাটাই এখন বুদ্ধিমানের কাজ। পাশাপাশি কূটনৈতিক শিবিরের মত, অযথা গুটিয়ে না থেকে এ বার কৌশলগত ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিছুটা সামনের পায়ে যেতে হবে সাউথ ব্লককে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘চিনের সঙ্গে ট্রাম্প যে পাল্লা দিতে চাইবেন, তা স্পষ্ট। সে ক্ষেত্রে তিনি ভারতকে পাশে চাইবেন সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। প্রশ্ন হল, প্রবল শক্তিধর প্রতিবেশীকে অগ্রাহ্য করে কত দূর পর্যন্ত পাশে থাকতে পারবে ভারত।’’ কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এ ক্ষেত্রে একটি মধ্যপন্থা নিতে পারেন মোদী। অর্থাৎ ভারতের সম্ভাব্য আশঙ্কাগুলিকে (মার্কিন দেশে ভারতীয় পেশাদার স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা, এ দেশ থেকে মার্কিন সংস্থাগুলিকে গুটিয়ে না নেওয়া, এইচ বি-ওয়ান ভিসা) নির্মূল করতে হবে ট্রাম্পকে। পরিবর্তে ভারতও ট্রাম্পের স্বার্থ দেখবে।

মনমোহন জমানা থেকেই ভারত আমেরিকার দ্বিদলীয় সমর্থন জোগাড়ে সমর্থ হয়েছে। কাশ্মীর বিতর্কে নাক গলানো, পরমাণু পরীক্ষার জেরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এখন ইতিহাস। এই পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি দেখতে চাইছে, মার্কিন দেশে ট্রাম্প-বিরোধিতার স্বর কোন আকার নেয়। মার্কিন প্রেস কর্পোরেশন ট্রাম্পকে খোলা চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে যে, তিনি সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করছেন। আগামী দিনে তাঁর প্রশাসনের সঙ্গে মার্কিন সংবাদমাধ্যমের যে লড়াই চলবে সে কথা খোলাখুলি বলা হয়েছে চিঠিতে। এই চাপ যদি বাড়তে থাকে তাহলে ট্রাম্পকে দর কষাকষির টেবিলে বসানো অপেক্ষাকৃত সহজ হবে। মার্কিন কংগ্রেসে এ বার সবথেকে বেশি সংখ্যক (ছ’জন) মার্কিন বংশোদ্ভূত ভারতীয় জিতে এসেছেন। এই বিষয়টিকেও দু’দেশের সম্পর্কে কী ভাবে কাজে লাগানো যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মালয়ালি পরিবারের মেয়ে প্রমীলা জয়পাল যেমন ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠান বয়কট করার কথা জানান। শুধু তিনি একা নন, মার্কিন কংগ্রেসের মোট ৩৩ জন ডেমোক্র্যাট সদস্য ওই অনুষ্ঠান বয়কট করবেন। আমেরিকায় এ ধরনের ঘটনা অভূতপূর্ব।

ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির রূপকার কূটনীতিক রণেন সেনের কথায়, ‘‘ট্রাম্প আসলে না রিপাবলিকান না ডেমোক্র্যাট! তিনি এক জন স্বতন্ত্র ব্যক্তি।’’ রণেনবাবুর মতে, এ হেন ‘স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব’র সঙ্গে খেলতে গেলে খেলার নিয়ম বদলাতে হবে। মান্ধাতা আমলের কূটনৈতিক তত্ত্ব ঝেড়ে ফেলে আশু দাবি আদায়ে এগোতে হবে। প্রাক্তন বিদেশসচিব জি পার্থসারথির মতে, ট্রাম্প আসায় কৌশলগত ভাবে ভারতের লাভ বই ক্ষতি নেই। কেন? তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রথমত ট্রাম্প সুকৌশলে রাশিয়াকে চিনের পিছনে লাগিয়েছেন। এর ফলে কিছুটা চাপে বেজিং। যা ভারতের জন্য ভাল। দ্বিতীয়ত ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ভাল হওয়ায় এই জমানায় রাশিয়ার সঙ্গে নয়াদিল্লির বর্তমান তিক্ততা কেটে গিয়ে সম্পর্ক ভাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Donald Trump Parliament Delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE