Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সীমান্তে পাক সেনার মহড়া, সতর্ক বিএসএফ

রাজস্থান সীমান্তে পাক সেনা সমাবেশ লক্ষ করে ফের সতর্ক করে দেওয়া হল বিএসএফ-কে। পাকিস্তান একে সেনা মহড়া বলে দাবি করলেও ঝুঁকি না-নিয়ে পশ্চিম সীমান্তে অতিরিক্ত এক বিগ্রেড আধা সামরিক বাহিনী পাঠিয়েছে নয়াদিল্লি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৫৭
Share: Save:

রাজস্থান সীমান্তে পাক সেনা সমাবেশ লক্ষ করে ফের সতর্ক করে দেওয়া হল বিএসএফ-কে। পাকিস্তান একে সেনা মহড়া বলে দাবি করলেও ঝুঁকি না-নিয়ে পশ্চিম সীমান্তে অতিরিক্ত এক বিগ্রেড আধা সামরিক বাহিনী পাঠিয়েছে নয়াদিল্লি।

পাকিস্তান অবশ্য দাবি করছে, জয়সলমেরের উল্টো দিকে সৈন্য সমাবেশ করে আসলে স্থলবাহিনী ও বিমানবাহিনী যৌথ ভাবে মহড়া দিচ্ছে। পাক সংবাদমাধ্যমের দাবি, এই মহড়ায় অংশ নিয়েছেন পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর প্রায় ৩০০ সদস্য। উড়ছে যুদ্ধবিমান। মহড়ায় অংশ নিয়েছে পাক সেনার ফাইভ কোর ও টু স্ট্রাইক কোর। যারা এসেছে যথাক্রমে করাচি ও মুলতান থেকে। যোগ দিয়েছে ২০৫ ব্রিগেড। সব মিলিয়ে অন্তত ১৫ হাজারের কাছাকাছি পাক সেনা জওয়ান এখন এই যুদ্ধ মহড়ায় ব্যস্ত। মহড়ায় ব্যবহার করা হচ্ছে ট্যাঙ্ক এবং কামানও।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসলামাবাদের আশঙ্কা, উরির বদলা নিতে যে কোনও সময়ে হামলা চালাতে পারে ভারত। বিশেষ করে জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে যে ভাবে ভারত প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে, তাতে সেই ভয় আরও জোরদার হয়েছে। তা ছাড়া, নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সার্জিকাল স্ট্রাইক চালানোর প্রশ্নে চাপ রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর উপর। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত যদি সত্যিই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে, তখন ঘরোয়া রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় পাল্টা হামলা চালাতে হবে পাকিস্তানকে। স্থলপথে হামলা হলে তা হবে ভারতের পশ্চিম সীমান্ত দিয়েই। তাই আগে থাকতেই সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখতে এ ভাবে মহড়া শুরু করেছে পাকিস্তান। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই মহড়া চলবে ৩০ অক্টোবর। পাঁচ সপ্তাহ ধরে চলা এই মহড়া কিছুটা অভূতপূর্ব বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের ব্যাখ্যা, আসলে এক মাসের বেশি সময় ধরে সীমান্তে আগেভাগেই সেনা মোতায়েন করে রাখতে চাইছে পাকিস্তান। যাতে ভারত হামলা চালালে দ্রুত প্রত্যুত্তর দেওয়া সম্ভব হয়।

সীমান্তে পাকিস্তানের এ ধাঁচের মহড়া-সমাবেশ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে কেন্দ্র। সেই কারণে বিএসএফ ও সেনাকে সতর্ক করে দেওয়ার পাশাপাশি উরির মতো সীমান্ত দিয়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশের সমস্যা আটকাতে বিএসএফকে আরও শক্তিশালী করতে নীতিগত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সূত্রের খবর, পঞ্জাব ও রাজস্থান সীমান্তে যে ফাঁকফোকরগুলো রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সীমান্ত একেবারে নিশ্ছিদ্র করার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র। যাতে পাখি পর্যন্ত গলতে না পারে। অনুপ্রবেশ রুখতে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে সর্বশেষ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ওপর। তা ছাড়া, রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে এই গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করতে ‘রিয়্যাল টাইম বেসিস’-এ তথ্য-গ্রিড বসানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছে বিএসএফ।

বর্তমানে বিএসএফের নিজস্ব বিমানবাহিনী থাকলেও, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে তার ব্যবহার বা পরিচালন করার ক্ষমতা বাহিনীর হাতে নেই। বিএসএফের পক্ষ থেকে তাই কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যে ভাবে কোস্ট গার্ড স্বনিয়ন্ত্রিত সংস্থার মতো কাজ করে, ঠিক সেই মর্যাদা তাদের বিমানবাহিনীকেও দেওয়া হোক। যাতে নজরদারি বা আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বিএসএফ নিজেই বিমান ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সূত্রের খবর, এ বিষয়ে বিমান মন্ত্রক ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে মতামত চেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

পঠানকোট হামলার পরে সীমান্তের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে একটি রিপোর্ট তৈরি করে কেন্দ্র। তাতে দেখা গিয়েছে রাজস্থান, জম্মু ও গুজরাতের মতো রাজ্যে, যেখানে আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে, সেখানকার বড় সংখ্যক বর্ডার আউট পোস্ট পুরনো বা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যেগুলো রয়েছে সেগুলোর পরিকাঠামো আধুনিক মানের নয়। উরি হামলার পরে ওই সব বর্ডার আউট পোস্টও ঢেলে সাজার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অত্যাধিক উচ্চতায় যে পোস্টগুলো রয়েছে, সেগুলো বিশেষ ধরনের পলিমার দিয়ে বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা অনেক বেশি টেঁকসই। বিএসএফকে ঢেলে সাজতে ও উরির ঘটনা পর্যালোচনা করতে আজ বৈঠকে বসেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। পি চিদম্বরম চেয়ারম্যান হওয়ার পরে এটিই ছিল কমিটির প্রথম বৈঠক। আলোচনায় সীমান্ত সুরক্ষিত করতে প্রয়োজনে আরও বেশি করে আধা সেনা মোতায়েন করার প্রশ্নে একমত হন সব সাংসদ। এ ছাড়া রাজ্য পুলিশের আধুনিকীকরণের প্রশ্নেও কেন্দ্রীয় বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার সমালোচনায় সরব হন বিরোধী সাংসদেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pakistan Indo-Pak border
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE