Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সইদের হুমকির পরেও বন্ধুত্বের বার্তাই

এ যেন জোয়ার-ভাটা। কাল যদি অশান্তির কটূ-কাটব্য তো আজ বন্ধুত্বের বার্তা। তার মধ্যেও রয়েছে আবার উল্টো চোরাস্রোত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:২২
Share: Save:

এ যেন জোয়ার-ভাটা। কাল যদি অশান্তির কটূ-কাটব্য তো আজ বন্ধুত্বের বার্তা। তার মধ্যেও রয়েছে আবার উল্টো চোরাস্রোত।

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের মাটিতে দাঁড়িয়ে হাফিজ সইদ যে হুমকি দিয়েছেন, তাকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে নয়াদিল্লি। এই জঙ্গি নেতার ঘোষণা— পঠানকোটের মতো আরও হামলা হবে ভারতে। তার ২৪ ঘণ্টা পরেই শুক্রবার পাক অধিকৃত কাশ্মীরের (ইসলামাবাদ যাকে বলে আজাদ কাশ্মীর) আইনসভায় দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের গলায় আবার বন্ধুত্বের সুর। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় কাশ্মীর-সহ ভারতের সঙ্গে সব মতপার্থক্য মিটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

গুয়াহাটিতে দক্ষিণ এশিয়ার খেলাধুলোর অনুষ্ঠানের সূচনা করে পাকিস্তানকে পাল্টা বন্ধুত্বের সুর শুনিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। পঠানকোট হামলার পরে পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা এই প্রথম ভারতে খেলতে এলেন। প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের নাম উচ্চারণ না-করে বলেন, ‘‘আশা করি খেলাধুলোর এই আসর প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে শান্তির সম্পর্ক গড়ে তুলবে। ব্যবসা,-বাণিজ্য ও পর্যটনের যোগাযোগ গড়ে উঠবে এলাকার দেশগুলির মধ্যে।’’ দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের নদীর জল এক পাত্রে মিশিয়ে সৌহার্দের সেই বার্তা দেন মোদী। ৪৭১ জনের বড়সড় দলই পাঠিয়েছে এ বার পাকিস্তান। মোদী বলেন, নিজের দেশে ফিরে গিয়ে ভারতের দূত হয়ে কাজ করবেন গুয়াহাটি ফেরত খেলোয়াড়েরা।

কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের ওঠাপড়া যেন থামছে না। কাশ্মীর সীমান্তের গোলাগুলি থামার পরেই আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলিতে শরিফ ও মোদীকে পাশাপাশি দেখা যেতে থাকে। একটা আলোচনা প্রক্রিয়া শুরুর তোড়জোড়ও শুরু করে দুই দেশ। কাবুল থেকে মোদী সরাসরি পৌঁছে যান শরিফের মেয়ের বিয়ের আসরে। সম্পর্কের সেই শরিফ দশার রেশ কাটতে না-কাটতেই পঠানকোটে বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলায় এলোমেলো হয়ে পড়ে পরিবেশ। ফের থমকে যায় আলোচনা প্রক্রিয়া।

শরিফ অবশ্য পঠানকোট তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। ঘটনার তদন্তে বিশেষ দল তৈরি করেছেন। ভারত সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ দিলে দ্রুত বিচারের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। কিন্তু তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার জঙ্গি নেতা হাফিজ সইদের হুমকি।

তার পরে শুক্রবার দুই প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীর বন্ধুত্বের বার্তার মধ্যে উল্টোসুরও রয়েছে। পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, দিল্লি ও মুম্বইয়ে মোতায়েন তাদের সরকারি এয়ারলাইন্সের দুই অফিসারের ভিসার মেয়াদ ভারত না-বাড়ানোয় কার্যত অন্তরীণ হয়ে রয়েছেন তাঁরা। তাঁদের ফোনের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। দফতরেও আসতে দেওয়া হচ্ছে না। পাকিস্তানে থাকা দুই অফিসারের পরিবার তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও পারছেন না। জানুয়ারির গোড়ায় ভিসা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে এক মাস ধরে এই অবস্থা

চলছে। পাক বিদেশ দফতর শুক্রবার বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ভারত সরকারের এই আচরণে শুধু যে পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে তা-ই নয়, দু’দেশের মানুষের সম্পর্কের মধ্যেও এর প্রভাব পড়বে।

দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর অবশ্য বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাঁদের এক কর্তার কথায়, এটা নিয়মের ফের। দু’দেশের সম্পর্কে এর কোনও প্রভাব পড়বে না। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদেশসচিব স্তরের বৈঠকের যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে, তা-ও এর ফলে ব্যাহত হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE