Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘বাংলাদেশি খেদাও’ নিয়ে উত্তপ্ত নয়ডা, প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে রাজ্য

এই খেদাও অভিযানে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী মহেশ শর্মা পুরোপুরি মদত দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ। রাজ্যের মানুষের হেনস্থার অভিযোগ কানে যেতে তৎপর হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নয়ডার আবাসন থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ফাইল চিত্র।

নয়ডার আবাসন থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৭ ০৪:০৪
Share: Save:

নয়ডার আবাসনে পরিচারিকা নিয়ে গোলমালের জেরে ‘বাংলাদেশি খেদাও’ অভিযানে নেমেছে যোগী আদিত্যনাথ সরকার। তার ফলে পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার থেকে নয়ডায় কাজ করতে যাওয়া প্রায় ৪০টি পরিবার প্রবল বৃষ্টির মধ্যে পথে এসে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ। সংখ্যালঘু ও বাংলাভাষী হওয়ায় তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এই খেদাও অভিযানে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী মহেশ শর্মা পুরোপুরি মদত দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ। রাজ্যের মানুষের হেনস্থার অভিযোগ কানে যেতে তৎপর হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রের খবর, নির্যাতিত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলতে তৃণমূলের একটি মহিলা প্রতিনিধি দল পাঠানোর পাশাপাশি মমতা রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনকে বলেছেন গোটা ঘটনাটি বিস্তারিত ভাবে জেনে তাঁকে জানাতে। প্রয়োজনে সংসদে বিষয়টি নিয়ে সরব হতেও বলা হয়েছে ওই সাংসদকে। মুখ খুলেছে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও।

ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার। নয়ডার একটি আবাসনের বাসিন্দা মিতুল শেট্টির বিরুদ্ধে তাঁর পরিচারিকা জোহরা বিবিকে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে। পরের দিন সকালে জোহরার স্বামী স্ত্রীর খোঁজে আত্মীয় ও পড়শিদের নিয়ে এসে ভিতরে ঢুকতে চাইলে আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। অভিযোগ জানায় দু’পক্ষই। শেট্টিরা জোহরার নামে ১০ দশ হাজার টাকা চুরি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ দায়ের করে। ইতিমধ্যেই ওই কাণ্ডে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জোহরার অভিযোগ, তাঁকে সারা রাত আটকে রেখে মারধরও করা হয়। সকালে সুযোগ বুঝে পালিয়ে যান তিনি।

জোহরার অভিযোগের সত্যতা মানতে রাজি নয় উত্তরপ্রদেশ তথা কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। তাদের দাবি, শুধু শেট্টি পরিবারের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। প্রয়োজনে শেট্টি পরিবারের হয়ে আইনি লড়াই করার পক্ষে সওয়াল করেছেন স্থানীয় সাংসদ মহেশ শর্মা। তাঁর দাবি, ‘‘এরা সকলেই কোথাকার তা ভাল করেই জানা আছে। কারণ আমি নিজেও নয়ডাতেই থাকি।’’ মহেশের দাবি, হামলাকারীরা যাতে অন্তত এক বছর জামিন না পায় তার ব্যবস্থা করবেন তিনি।

ওই আবাসনে ফ্ল্যাট রয়েছে প্রায় দু’হাজার। কাজ করেন প্রায় ছ’শো পরিচারিকা। ঘটনার পরে ঢোকা বারণ হয়ে গিয়েছে অর্ধেকের বেশি পরিচারিকার। ভেঙে দেওয়া হয়েছে তাঁদের ঝুপড়ি, খাবার দোকান। খেটে খাওয়া মানুষগুলির দাবি, তাঁরা কুচবিহারের বাসিন্দা। ভোটার কার্ডও রয়েছে তাঁদের। তাতে অবশ্য বিশেষ হেলদোল হয়নি স্থানীয় প্রশাসনের। অভিযোগ, এদের তাড়ানোই এখন লক্ষ্য বিজেপি সরকারের। মহেশ শর্মার দাবি, ‘‘যাঁরা এতে সাম্প্রদায়িকতার রং লাগানোর চেষ্টা করছেন তাঁদের আমাদের সংগঠনের সদস্যরাই দেখে নেবে।’’

মদনলাল খুরানা যখন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন এ ভাবে বাংলাদেশি তাড়াও অভিযানে নেমেছিল বিজেপি সরকার। বাংলাদেশি অভিযোগে বহু লোকের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছিল। সেই ভয় আবার ফিরে আসছে খেটে খাওয়া বাঙালি পরিবারগুলির ভিতরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE