Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
জমি বিল

বিরোধিতার এক মঞ্চ, তবু দোলার খোঁচা বামেদের

নরেন্দ্র মোদী সরকারের জমি বিলের বিরুদ্ধে এ বার একই মঞ্চে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি এবং তৃণমূলের দোলা সেন! সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের পর থেকে জমির প্রশ্নে যারা পরস্পরের যুযুধান! কার্ল মার্ক্সের জন্মদিবসের সকালে এমনই বিরল ঘটনার সাক্ষী রইল দিল্লির যন্তর মন্তর। সংসদে জমি বিলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস, তৃণমূল ও সিপিএম এককাট্টা হলেও সংসদের বাইরে পরস্পরের আন্দোলনে যেতে অসুবিধা ছিল তাদের।

জমি অধিগ্রহণ বিলের বিরোধিতায় সিপিএম। যন্তর মন্তরে ভূমি অধিকার সংঘর্ষ আন্দোলনের সভায় বক্তা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

জমি অধিগ্রহণ বিলের বিরোধিতায় সিপিএম। যন্তর মন্তরে ভূমি অধিকার সংঘর্ষ আন্দোলনের সভায় বক্তা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৫ ০৩:২৩
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদী সরকারের জমি বিলের বিরুদ্ধে এ বার একই মঞ্চে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি এবং তৃণমূলের দোলা সেন! সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের পর থেকে জমির প্রশ্নে যারা পরস্পরের যুযুধান!

কার্ল মার্ক্সের জন্মদিবসের সকালে এমনই বিরল ঘটনার সাক্ষী রইল দিল্লির যন্তর মন্তর।

সংসদে জমি বিলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস, তৃণমূল ও সিপিএম এককাট্টা হলেও সংসদের বাইরে পরস্পরের আন্দোলনে যেতে অসুবিধা ছিল তাদের। সেই কারণেই অ-রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি করে নাগরিক সংগঠনগুলিকে নিয়ে এসে আন্দোলনে নেমেছে বিরোধী দলগুলি। সেখানে যেমন সিপিএম-সিপিআইয়ের কৃষক সভা রয়েছে, তেমনই মেধা পাটকরের মতো নাগরিক আন্দোলনকারীরাও রয়েছেন। তৃণমূল অবশ্য এত দিন সেই মঞ্চে সরাসরি যোগ দেয়নি। কিন্তু আজ ‘জমি অধিকার সংঘর্ষ আন্দোলনে’র সংসদ অভিযানে তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ দোলাও যোগ দেন।

শুধু তা-ই নয়, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরির পাশে দাঁড়িয়েই দোলা জানিয়ে দেন, কৃষকদের জমি কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে সিপিএমের বোধোদয় হয়েছে দেরিতে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আন্দোলন শুরু করেন। তার আগে পর্যন্ত ১৮৯৪ সালের ব্রিটিশ জমানার আইনে জাতীয় স্বার্থ দেখিয়ে জমি অধিগ্রহণ করা হত। ওই জমি থেকে যাঁদের রুটিরুজি চলত, তাঁদের কোনও মতামতই নেওয়া হত না। দোলা বলেন, ‘‘এই আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই পথপ্রদর্শক। বামপন্থীদেরও তা মনে রাখতে হবে।’’

মোদী সরকারের জমি বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে এই অ-রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে তোলার পিছনে সিপিএম নেতারা যথেষ্ট উদ্যোগী হয়েছিলেন। সেই মঞ্চেই হাজির হয়ে আজ তৃণমূল সাংসদ যে ভাবে সিপিএমকেই এক হাত নিয়েছেন, বাম জমানায় সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের প্রসঙ্গ তুলেছেন, তাতে সিপিএম নেতারা যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছেন। সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, জনগণের স্বার্থে বামেদের পাশাপাশি বাম মনস্ক ও গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলিকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করতে হবে।

কিন্তু সেই আন্দোলনে তৃণমূল এসে বামেদের অস্বস্তিতে ফেললে কী করতে হবে, তা অবশ্য পার্টি কংগ্রেসের দলিলে লেখা নেই! প্রশ্ন উঠেছে, তৃণমূলকে এই মঞ্চে আমন্ত্রণ জানালেন কে?

একটি সূত্রের খবর, আজকের সংসদ অভিযানে যাতে তৃণমূলের তরফে কেউ যোগ দেন, তার জন্য মমতাকে ফোন করে অনুরোধ জানান মেধা। মমতাই দোলাকে আজকের বিক্ষোভ প্রদর্শনে যোগ দিতে বলেন। ‘জমি অধিকার সংঘর্ষ আন্দোলনে’র উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, রাজনৈতিক রং নির্বিশেষে সব দলকেই এই মঞ্চে আহ্বান জানানো হয়েছে। গত মাসে এই মঞ্চের সভায় কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ, তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সে বার জয়রাম এলেও দীনেশ আসেননি। কিন্তু চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, তাঁরা এই আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছেন। সিঙ্গুরে গিয়ে বাম সরকারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা বহু বার করেছেন মেধা। যন্তর মন্তরের মঞ্চেও তাঁর দৌত্য মারফত যে অস্বস্তি আসবে, কে জানত!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE