Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মুখ খুললেই বিপদ! সিঁটিয়ে ‘নায়ক’ কাফিল

গোরক্ষপুরের বাবা রাঘবদাস মেডিক্যাল কলেজে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দু’দিনে ৩৩টি শিশুমৃত্যু ঘিরে যখন গোটা দেশ তোলপাড়, তখনই সংবাদ শিরোনামে আসেন ওই হাসপাতালের এনসেফ্যালাইটিস ওয়ার্ডের প্রধান কাফিল খান। বলা হয়েছিল, সেই সঙ্কটের সময় নিজে টাকা দিয়ে বাইরে থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে এনে বহু শিশুকে বাঁচিয়ে ছিলেন কাফিল।

কাফিল খান। —ফাইল চিত্র।

কাফিল খান। —ফাইল চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৭ ০৪:২৭
Share: Save:

টেলিফোনের ও-পার থেকে আত্মবিশ্বাসী গলাতেই গত শুক্রবার অর্থাৎ ১৮ অগস্ট তিনি জানিয়েছিলেন, ২০ তারিখের পরে সব ‘রহস্য’ ফাঁস করে দেবেন। কিন্তু ২১ অগস্টের সকালে গোরক্ষপুরের সেই শিশু-চিকিৎসক কাফিল খানকে আনন্দবাজারের তরফে ফোন করা হলে সন্ত্রস্ত গলায় উত্তর এল— ‘‘ওরা আমাকে মিডিয়ার কাছে মুখ খুলতে বারণ করেছে। কিছু বললেই কপালে দুঃখ আছে। আমার এখন কোনও নিরাপত্তা নেই। মাফ করুন!’’

গোরক্ষপুরের বাবা রাঘবদাস মেডিক্যাল কলেজে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দু’দিনে ৩৩টি শিশুমৃত্যু ঘিরে যখন গোটা দেশ তোলপাড়, তখনই সংবাদ শিরোনামে আসেন ওই হাসপাতালের এনসেফ্যালাইটিস ওয়ার্ডের প্রধান কাফিল খান। বলা হয়েছিল, সেই সঙ্কটের সময় নিজে টাকা দিয়ে বাইরে থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে এনে বহু শিশুকে বাঁচিয়ে ছিলেন কাফিল। মৃত শিশু কোলে কাঁদছেন চিকিৎসক— এমন ছবিও ছাপা হয়েছিল।

এ হেন ‘নায়ক’ চিকিৎসককে যদিও তদন্ত শুরুর আগেই সাসপেন্ড করে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। বলা হয়— প্রাইভেট প্র্যাকটিসে ব্যস্ত থাকতেন বলে কাফিল বিআরডি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে মাথাই ঘামাননি। এ জন্য তীব্র সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারকে।

আর কাফিল খান ১৪ অগস্টের পর থেকেই কার্যত আত্মগোপন করেন। চিকিৎসক মহলের দাবি, গোরক্ষপুর-কাণ্ডে এমনিতেই যোগী সরকার প্রবল চাপে। এর পরে যদি কাফিল মুখ খোলেন, তা হলে সরকারি হাসপাতাল ও প্রশাসনের অনেক কথা ফাঁস হয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা করছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। তাই কাফিল খানের মুখ বন্ধ রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।

কিন্তু কারা তাঁকে মুখ বন্ধ রাখতে বলছেন? উত্তরে কাফিল বলেন, ‘‘দয়া করে নাম জানতে চাইবেন না, আমার বিপদ হবে।’’ এর পরে আর তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন:ডোকলাম মিটবে, আশা রাজনাথের

সূত্রের খবর, গোরক্ষপুরের ঘটনায় জেলাশাসক সম্প্রতি যে তদন্ত-রিপোর্ট পেশ করেছেন, তাতে ওই হাসপাতালের অধ্যক্ষ এবং অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের প্রধানের গাফিলতি ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কাফিল খানের নাম সেখানে নেই। শুধু বলা হয়েছে, হাসপাতালের কাজে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে তাঁর কিছুটা ত্রুটি ছিল।

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিলের (আইএমএ) কেন্দ্রীয় শাখাও গোরক্ষপুরের হাসপাতালে চিকিৎসকদের ভূমিকা নিয়ে আলাদা তদন্ত চালিয়েছিল। ঘোরতর বিজেপি-প্রভাবিত ওই শাখাও কিন্তু কাফিল খানের চিকিৎসা পদ্ধতিতে ত্রুটি পায়নি। সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি কৃষ্ণকুমার অগ্রবাল শুধু বলেন, ‘‘তিনি হাসপাতালে প্রশাসকের ভূমিকাতেও ছিলেন। তাই সে দিক থেকে তাঁর ত্রুটি রয়েছে।’’

আইএমএ-র পশ্চিমবঙ্গ শাখায় আবার তৃণমূলের ভরপুর প্রভাব। তারা ইতিমধ্যেই কাফিল খানের সাসপেনশনের বিরোধিতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে কড়া চিঠি লিখেছে। পশ্চিমবঙ্গ শাখার সচিব শান্তনু সেনের দাবি, ‘‘নিজেদের দোষ ঢাকতেই
বিজেপি সরকার চিকিৎসকদের বলির পাঁঠা করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE