প্রণাম। জয়ললিতার সমাধিতে তামিলনাড়ুর নতুন মুখ্যমন্ত্রী পালানিসামি। বৃহস্পতিবার চেন্নাইয়ে। ছবি: পিটিআই।
দীর্ঘ টানাপড়েনের শেষে আজ বিকেলে তামিলনাড়ুর ১৩ তম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন ই কে পালানিস্বামী। তাঁর সঙ্গেই মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন এডিএমকে-র ৩০ জন বিধায়কও। রাজ্যপাল সি বিদ্যাসাগর রাও দু’সপ্তাহের মধ্যে পালানিস্বামীকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার নির্দেশ দিলেও, রাতে এডিএমকে সূত্রে জানানো হয়েছে, শনিবারেই তামিলনাড়ু বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। সে দিন নিজের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দেবেন পালানিস্বামী।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে শশিকলা মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড় থেকে সরে যেতেই, লড়াইটি দাঁড়ায় তাঁর মনোনীত নেতা পালানিস্বামী বনাম পনীরসেলভমের মধ্যে। দফায় দফায় দুই শিবির গত দু’দিন ধরে রাজ্যপালের কাছে সরকার গড়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু আজ বেলা বারোটায় পালানিস্বামীকে রাজভবনে ডেকে দু’সপ্তাহের মধ্যে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার নির্দেশ দেন রাজ্যপাল। রাজভবন সচিবালয় সূত্রে জানা গিয়েছে— পালানিস্বামী ও পনীরসেলভম, দুই শিবিরের পক্ষ থেকেই সরকার গড়ার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু পালানিস্বামী নিজের সমর্থনে পর্যাপ্ত বিধায়কের স্বাক্ষর রাজ্যপালের কাছে জমা দিয়েছেন বলে খবর। যা দিতে পারেননি পনীর। তাই পালানিস্বামীকেই প্রথমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার সুযোগ দিয়েছেন রাজ্যপাল। রাজ্যপালের কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়ে আজ সন্ধ্যায়ই শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন পালানিস্বামী। মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়াও স্বরাষ্ট্র ও অর্থের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর নিজের হাতে রেখেছেন পালানি। সঙ্গে সড়ক ও বন্দরের মতো পুরনো দফতরগুলি রয়েছে। পালানিস্বামীর সঙ্গেই আজ শপথ নিয়েছেন জয়ললিতা মন্ত্রিসভার অধিকাংশ পুরনো মন্ত্রী। পরে রাতে দলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, শনিবারের মধ্যেই ভোটাভুটি মিটিয়ে ফেলা হবে।
দুপুরে পালানিস্বামী শিবির যখন রাজভবনে, তখন তাঁদের ক্ষমতা দখল রুখতে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হন পনীর-ঘনিষ্ঠ রাজ্যসভা সাংসদ ভি মৈত্রেয়ন। নির্বাচন কমিশনের কাছে তিনি শশিকলার সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পদাধিকার গ্রহণ ও সেই পদাধিকার বলে পালানিস্বামীকে বিধায়ক দলের নেতা নির্বাচিত করার পদক্ষেপকে বেআইনি বলে দাবি জানান। কমিশন অবশ্য সেই দাবি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দেয়। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হওয়ায় পালানিস্বামীর মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়া আটকায়নি। তবে এত সহজে যে তিনি লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে সরে আসবেন না তা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন পনীরসেলভম। রাতে জয়ললিতার স্মৃতিসৌধ ঘুরে এসে পনীরসেলভম বলেন, ‘‘এই সরকার শশিকলার পরিবারের সরকার। জয়ললিতার সরকার না গড়া পর্যন্ত এই লড়াই জারি থাকবে।’’
আরও পড়ুন:
মেঝেতে কাটল রাত, জেল কোনও আবদার মানল না, ব্রেকফাস্টে চাটনি-ভাত
পনীর শিবির যে ভাবে তাদের যাত্রা পণ্ড করতে তৎপর রয়েছে তা দেখে গরিষ্ঠতা প্রমাণে দেরি করার পক্ষপাতী নন পালানিস্বামী। আজ শপথগ্রহণের পরে মন্ত্রী ও বিধায়কদের নিয়ে জয়ার স্মৃতিসৌধে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান নতুন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর মুখ্যমন্ত্রী নিবাসে না গিয়ে সোজা গোল্ডেন বে রিসর্টেই ফিরে আসেন তিনি। আগামী শনিবার ভোটাভুটি না হওয়া পর্যন্ত রিসর্টেই থাকতে বলা হয়েছে বিধায়কদের। পালানিস্বামী শিবিরের আশঙ্কা, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দল ভাঙার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে পনীর শিবির। সেই কারণে সুরক্ষা কড়া করা হয়েছে ওই রিসর্টের আশেপাশে।
আজ পালানিস্বামী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ায় অন্তত প্রথম রাউন্ডে বাজি জিতলেন জেলবন্দি শশিকলা। শীর্ষ আদালতের ওই রায়ের ফলে তাঁর পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া সম্ভব নয় বুঝতে পেরেই জয়ার ঘনিষ্ঠ চার বারের বিধায়ক পালানিস্বামীকেই পরিষদীয় দলের নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী মনোনীত করেন শশিকলা। কাল জেলে যাওয়ার ঠিক আগে দলের উপ-সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বেছে নেন ভাইপো টি টি ভি দিনকরনকে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, জয়ললিতার ধাঁচেই দল ও প্রশাসনে নিজের অনুগামীকে রেখে জেল থেকে দলের উপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব ধরে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছেন শশী। সেই লক্ষ্যে অন্তত প্রাথমিক ভাবে সফল হলেন তিনি। যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধী দলের নেতা এম কে এ স্ট্যালিন। পালানিসেলভমের সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আশাকরি নতুন সরকার শশিকলার কথায় উঠবে-বসবে না। পালানিস্বামী নিশ্চয় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিজের শপথ ভুলবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy