Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সারদায় জড়িয়ে অসমে আত্মঘাতী প্রাক্তন ডিজি

সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিল তাঁর নাম। গত ২৮ অগস্ট তাঁর বাড়িতে হানা দিয়েছিল সিবিআই। বুধবার সকালে অসম পুলিশের প্রাক্তন ডিজি শঙ্কর বরুয়াকে তাঁর নিজের বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল। সিবিআই গুয়াহাটিতে তাঁর উজানবাজারের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শঙ্করবাবু।

শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ডিজিপি খগেন শর্মা। গুয়াহাটিতে। ছবি: উজ্জ্বল দেব

শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ডিজিপি খগেন শর্মা। গুয়াহাটিতে। ছবি: উজ্জ্বল দেব

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিল তাঁর নাম। গত ২৮ অগস্ট তাঁর বাড়িতে হানা দিয়েছিল সিবিআই। বুধবার সকালে অসম পুলিশের প্রাক্তন ডিজি শঙ্কর বরুয়াকে তাঁর নিজের বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল।

সিবিআই গুয়াহাটিতে তাঁর উজানবাজারের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শঙ্করবাবু। ১৩ সেপ্টেম্বর ভর্তি হন হাসপাতালে। এই ক’দিন সেখানেই ছিলেন তিনি। আজ সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ফিরেছিলেন উজানবাজারের বাড়িতে। গিয়েছিলেন বাড়ির কাছে ব্যাঙ্কেও। সেখান থেকে ঘুরে আসার পরে চলে যান দোতলার ছাদে। নীচে তখন দুপুরের খাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। দুপুর দেড়টা নাগাদ ছাদ থেকে গুলির শব্দ পাওয়া যায়। ছোট ছেলে কৌশিক ছুটে গিয়ে দেখেন চিলেকোঠার ঘরে পড়ে রয়েছে শঙ্করবাবুর দেহ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, নিজের রিভলভার থেকে গুলি করে আত্মঘাতী হয়েছেন এই প্রাক্তন পুলিশকর্তা। ডান দিক দিয়ে মাথা ফুঁড়ে ঢুকেছে গুলি।

নিহত প্রাক্তন পুলিশকর্তার পরিবারের অভিযোগ, সারদা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর থেকেই শঙ্করবাবু মানসিক চাপে ছিলেন। সারদা মামলায় জড়িত আরও কয়েক জন পুলিশ ও ব্যবসায়ী ক্রমাগত শঙ্করবাবুর উপরে মানসিক চাপ বাড়াচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁরা কারা, তা স্পষ্ট করে বলেননি পরিবারের কেউ। এ ব্যাপারে সিবিআই বা কোনও ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগও করেননি তাঁরা।

সারদা-কাণ্ডে অসমে দুই প্রাক্তন পুলিশ-কর্তার নাম জড়িয়েছে। দ্বিতীয় জনও শঙ্করবাবুর মতো রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি। নাম ঘনশ্যাম মুরারী শ্রীবাস্তব। ২৮ অগস্ট তাঁর বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। শঙ্করবাবুর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পরে শঙ্করবাবুকে তাঁর ব্যাঙ্কে নিয়ে গিয়েছিল সিবিআই। ব্যাঙ্ক লেনদেনের নথিপত্রর প্রতিলিপি নিয়ে যায় তারা। তার পর থেকেই পুরোপুরি অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ওই ডিজি। সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়েছে, শঙ্করবাবুর বাড়ি ও ব্যাঙ্কে অভিযান চালানো হলেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে কোনও সমন পাঠানোর আগেই সরে গেলেন শঙ্করবাবু। তাঁর মৃত্যুতে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে শোকপ্রকাশ করা হয়েছে।

বাড়িতে ফিরেই শঙ্করবাবুর ব্যাঙ্কে যাওয়া ও স্ত্রী-ছেলেকে যাবতীয় টাকার ‘নমিনি’ করে আসা থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাৎক্ষণিক ঝোঁকের বসে নয়, হয়তো আগে থেকেই আত্মহত্যার পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন তিনি। তাঁর অ্যাকাউন্টে সারদার অর্থও রয়েছে কি না, সিবিআই তা তদন্ত করে দেখবে। পুলিশও ব্যাঙ্কে খোঁজ নিচ্ছে।

সারদা তদন্ত শুরু হওয়ার পরে, এ ব্যাপারে শঙ্করবাবুর যোগ থাকার কথা প্রথম প্রকাশ্যে আনেন সারদা প্রকাশনার গুয়াহাটির প্রতিনিধি দিবন ডেকা। সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি দাবি করেন সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে গায়ক সদানন্দ গগৈ, তৎকালীন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও শঙ্কর বরুয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। পরে, সুদীপ্ত ও সদানন্দকে জেরা করেও সিবিআই জানতে পারে, শঙ্করবাবু সুদীপ্তর ব্যবসা প্রসারে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেছেন। অভিযোগ, সারদার বিরুদ্ধে যাতে ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (ইকনমিক অফেন্সেস) ব্যবস্থা না নেয় তার জন্য তিনি প্রভাব খাটিয়েছিলেন। কার্যত বিভিন্ন সমস্যার সময়ে সারদাকে আড়াল করতেন তিনি। বরুয়া নিজে অবশ্য এ কথা অস্বীকার করেছিলেন।

সিবিআই জেনেছে, সদানন্দ গগৈয়ের সঙ্গে তাঁর গানের সূত্র ধরেই আলাপ ও বন্ধুত্ব হয় শঙ্করবাবুর। ১২ সেপ্টেম্বর সদানন্দকে গ্রেফতার করে সিবিআই। তার তিন দিন আগে গ্রেফতার হন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন ডিজি রজত মজুমদার। পারিবারিক সূত্রে খবর, এর পরেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন বরুয়া। বুকে ব্যথা অনুভব করায় ১৩ সেপ্টেম্বর তাঁকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতা না করার অভিযোগ এনে সিবিআই যখন রজতবাবুকে গ্রেফতার করে, তিনিও সে সময় দৃশ্যতই মানসিক চাপে পড়ে গিয়েছিলেন। গ্রেফতারের সময় সই পর্যন্ত করতে না পারায় প্রাক্তন ডিজি রজতবাবুর টিপছাপ নিতে হয়। হাসপাতালে নানা রকম পরীক্ষায় শারীরিক কোনও সমস্যা ধরা না পড়লেও নিজেকে অসুস্থ বলেই দাবি করছিলেন রজতবাবু। কেউ কেউ একে কৌশল বলে সন্দেহ করলেও এটা মানসিক চাপ থেকেই বলে মনে করেন তদন্তকারীদের একাংশ।

এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে অসম পুলিশের এসএসপি আনন্দপ্রকাশ তিওয়ারি বলেন, “এক রাউন্ড গুলি চলেছে। ঘর থেকে কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি। বড়ঠাকুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।” বর্তমান ও প্রাক্তন কয়েক জন পুলিশকর্তা এ দিন শঙ্করবাবুর বাড়িতে এলেও, রাজনৈতিক নেতারা বিশেষ কেউ আসেননি। যাননি মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। তাঁর হয়ে শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের মুখ্যসচিব।

ঘনশ্যাম মুরারী শ্রীবাস্তবের পরে, ডিজি পদে বরুয়ার নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। ১৯৭৪ ব্যাচের এই আইপিএসকে ডিজি করা হলে ‘সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল’-এ মামলা করেছিলেন ১৯৭৩ সালের আইপিএস সারদা প্রসাদ। বিস্তর বিতর্কের পরে ২০০৯ সালে শঙ্করবাবুই ডিজি হন।

পরিবারিক সূত্রে খবর, শঙ্করবাবুর বাবা ভবানী বরুয়াও ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশ প্রধান। স্ত্রী নীলাক্ষী ও বিধবা মা অনিমাদেবীকে নিয়ে উজানবাজারের বাড়িতে থাকতেন শঙ্করবাবু। বড় ছেলে সিদ্ধার্থ দিল্লিতে এবং ছোট ছেলে কৌশিক রোমে থাকেন। বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে সম্প্রতি রোম থেকে এসেছিলেন কৌশিক। গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্তের পরে বরুয়ার দেহ ৪ নম্বর অসম পুলিশ ব্যাটেলিয়নে নিয়ে গিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। দেওয়া হয় গান স্যালুট। রাতেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু রাজ্যের কাছ থেকে এ ব্যাপারে রিপোর্ট তলব করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE