মোদী-যোগ: শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। রবিবার লখনউয়ে। ছবি: পিটিআই
উত্তরপ্রদেশে ২১-তম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আজ শপথ নিলেন নরেন্দ্র মোদীর আশীর্বাদধন্য যোগী আদিত্যনাথ। মোদী-অমিত শাহের উপস্থিতিতে শপথ নিয়ে প্রথম সাংবাদিক বৈঠকেই যোগীর ঘোষণা, উন্নয়নের রাস্তায় হাঁটবেন তিনি। কোনও ভেদাভেদ করবেন না। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ২২ জন পূর্ণমন্ত্রী ও ২৪ জন প্রতিমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন।
ভোটে একজন মুসলমানকেও প্রার্থী করেনি বিজেপি। অথচ বিপুল পরিমাণ মুসলিম ভোট পেয়েছে তারা। সেই অঙ্কেই বোধহয় মহসিন রাজা নামের প্রাক্তন রঞ্জি ক্রিকেটারকে এ দিন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়েছেন যোগী। বিজেপির অন্দরেই অনেকে বলছেন, এর ফলে অ-বিজেপি দলগুলির সমালোচনার একটা সুযোগ অন্তত পাওয়া যাবে। এ দিন যোগী মুখ্যমন্ত্রী হয়েই তাঁর মন্ত্রীদের জন্য দু’টি ফরমান জারি করেছেন— কোনও মন্ত্রী বেফাঁস মন্তব্য করবেন না। এবং স্বচ্ছ প্রশাসন গড়ে তুলতে সব মন্ত্রীকে সম্পত্তির হিসেব দিতে হবে।
কট্টর হিন্দু ভাবমূর্তির যোগী আদিত্যনাথকে বাছার পিছনে ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’ মোদীর স্পষ্ট অঙ্ক, ২০১৯ পর্যন্ত বিজেপি ধাপে ধাপে হিন্দুত্বের সুর চড়াবে। মোদী মনে করেন, এনডিএ-তে শরিকদের সঙ্গে বাজপেয়ী আপসের রাস্তায় হেঁটেছেন বলেই বিজেপি হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে এগোতে পারেনি। আডবাণীর রথযাত্রা, রামমন্দিরের দৌলতে বিজেপির যে শ্রীবৃদ্ধি হয়েছিল, তা বাধা পায় শরিক নিয়ে চলতে গিয়ে।
আরও পড়ুন: এ বার মন্দির হবেই, আশায় বুক বাঁধছে অযোধ্যা
২০১৪-য় মোদীর প্রচার কৌশলে রামমন্দির অগ্রাধিকার পায়নি। কংগ্রেসের নেহরুবাদী বহুত্ববাদের বিপরীতে এক পাল্টা তত্ত্ব তৈরি করেন তিনি। তা সাফল্যও পায়। আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাফল্য এবং বিশ্ব জুড়ে এই ধরনের শক্তির উত্থানের পর মোদী মনে করছেন, গোটা দুনিয়ায় এই নতুন প্রবণতা এসেছে। যাকে বলা হচ্ছে ‘গড ইজ ব্যাক’ তত্ত্ব। অর্থনৈতিক সঙ্কট, মন্দা, বেকারির এই প্রেক্ষিতে ভারতেও হিন্দুত্বের চাষের জন্য উর্বর জমি তৈরি বলে মনে করছেন তিনি। ২০১৪-র পর ২০১৯-এ এই রাজনৈতিক লাইনকে আরও এক ধাপ এগোতে চান মোদী।
বিজেপির সামনে এর পর ছত্তীসগঢ়, গুজরাত, রাজস্থান, হিমাচল, মধ্যপ্রদেশের ভোট। সেখানে আঞ্চলিক দল নেই। কংগ্রেসের সঙ্গেই লড়াই। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, হিন্দুত্বের পাল্টা হিসেবে কংগ্রেসের পক্ষে শুধু সংখ্যালঘু ভোটের রাজনীতি করাটা কঠিন। এমনিতেই তাদের সংগঠন দুর্বল। তাই বিজেপির এই কৌশল কংগ্রেসকে আরও বেকায়দায় ফেলবে। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর কল্যাণ সিংহকে যেমন উগ্র হিন্দুত্বের মুখ হিসেবে সর্বত্র প্রচারে নামানো হয়েছিল, আদিত্যনাথকেও তেমনই অন্য রাজ্যে প্রচারে নামানো হবে।
উত্তরপ্রদেশের জন্য তাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে রামমন্দির। দ্বিতীয় কৌশল হল, দলিত ও নিম্ন বর্গকে উচ্চবর্ণ হিন্দুর সঙ্গে মেলানো। যাদব-দলিত ভোটকে হিন্দু ভোটের রঙ দেওয়া। আরএসএসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘চৈতন্যদেবের ভক্তি আন্দোলনে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের বিকাশে পশ্চিমবঙ্গে যেমন শ্রেণি বিভেদ কমেছিল, ঠিক সে ভাবে দলিত, স্থানীয় গুরু ও আরাধ্য নেতাদের পুজো শুরু করে হিন্দুদের মধ্যে ভেদাভেদ মুছে ফেলা যাবে।’’ তৃতীয় কৌশল হল, মুসলমান ভোটের বিভাজন। উত্তরপ্রদেশে শিয়া, সুন্নি ও নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজনকে হাতিয়ার করা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy