ক্যামেরার নজরদারি, ১৪৪ ধারা, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ— এত কড়াকড়ির পরও মাধ্যমিক পরীক্ষায় নকল নিয়ে হলে ঢুকল ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। ধরা পড়ল ১০ ভুয়ো পরীক্ষার্থীও। সব মিলিয়ে বরাক উপত্যকায় ৩১ জনের পরীক্ষা বাতিল করা হল। তার মধ্যে কাছাড়ে সরাসরি পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বের করা হল ৮ জনকে। হাইলাকান্দিতে ১২ ও করিমগঞ্জে ১ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। হাইলাকান্দিতে মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকায় এক ইনভেজিলেটরের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কাছাড়ে হল থেকে ৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়। বাকি ১০ জনের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে ভুয়ো পরীক্ষার্থী নিয়োগের জন্য।
কাছাড় জেলার লক্ষ্মীপুর মহকুমার আরসিবিপি হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের অধ্যক্ষ যদুমণি শর্মা জানিয়েছেন, শুরু থেকেই এক-দু’জন পরীক্ষার্থীকে দেখে তাঁর সন্দেহ হচ্ছিল। পরে এক্সটারন্যাল রাতুলচন্দ্র দেবও একই কথা বলেন। তখনই রেজিস্ট্রেশন ও অ্যাডমিট কার্ডের ছবি মিলিয়ে দেখা হয়। একে একে ধরা হয় আব্দুল হাকিম, আব্দুল সহিদ চৌধুরী, আপাতউদ্দিন চৌধুরী, সমীর আহমেদ, ফারুক আহমেদ চৌধুরী, আব্দুল আজিজ চৌধুরী, ইয়াহৈবা খান, জমিল হোসেন, আব্দুল রহিম চৌধুরী ও সেলিমউদ্দিন চৌধুরী। পরে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ধৃতদের ২ জনের বাড়ি শিলচরে, বাকিরা লক্ষ্মীপুর মহকুমার বাসিন্দা। তারা শহিদুল ইসলাম, আব্দুল রহমান, জাইদুর রহমান, নুরুল ইসলাম, আজাদ হোসেন, জমির হোসেন, আমির হোসেন. ফিরোজ খান চৌধুরী, মহম্মদ তম্বা ও মহম্মদ আলির হয়ে পরীক্ষায় বসেছিল। ওই ৯ জনই সুভাষনগর পাবলিক হাই স্কুলের ছাত্র। ১ জন হরিনগর শিশুনিকেতন হাই স্কুলের পড়ুয়া। ভুয়ো পরীক্ষার্থী নিয়োগের জন্য এই ১০ জনের পরীক্ষাও বাতিল হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছে পুলিশ।
এ ছাড়া, একই পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে টোকাটুকির দায়ে রোশন আহমেদ নামে এক পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নিষিদ্ধ হলেও সুভাষনগর পাবলিক হাই স্কুলের ওই ছাত্র লুকিয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকেছিল। পরে হোয়াটসঅ্যাপে উত্তর সংগ্রহ করে খাতায় তোলার সময় ধরা পড়ে যায়। ধলাইয়েও ৩ ছাত্র বহিষ্কৃত হয়েছে। শিলচরের বি সি রায় অ্যাকাডেমি পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ওরিয়েন্টাল হাই স্কুলের ২ জনকে নকল করার অপরাধে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বের করা হয়েছে। অন্য দুই বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে গণিরগ্রামের জেআর হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল এবং লেবুরবন্দের জনকল্যাণ স্কুলে।
আজ হাইলাকান্দির ১৬টি কেন্দ্রে জেলার ৬ হাজার ৬৪৬ জন ছাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে। একই সঙ্গে হাই মাদ্রাসার ২৮৭ জন ছাত্রও পরীক্ষা দিচ্ছে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর ইন্দ্রকুমারী উচ্চতর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে এক শিক্ষক পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে গিয়ে ধরা পড়েন। সার্কেল অফিসার ত্রিদীপ রায় তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এ ছাড়াও পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের সময় ছাত্র এবং শিক্ষকের কাছে থেকে আরও পাঁচটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। এ বার হাইলাকান্দি জেলাকে চারটি জোনে ভাগ করে পরীক্ষা পরিচালনা করা হচ্ছে। আলগাপুর জোনে মোট ৫জন পরীক্ষার্থীকে নকল করার দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে আলগাপুরের পাব্লিক উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১ জন, অন্নদাচরণ হাইস্কুলের ১ জন, জানকীচরণ উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩ জন ছাত্র রয়েছে। লালায় এন টি মডেল হাইস্কুলের ৪ জন ও লালা উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১ জন ছাত্রকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। কাটলিছ়ড়ায় চার্লমার্স হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের ২জনকেও নকল করার দায়ে বের করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক এফ আর লস্কর বলেন, ‘‘আগে যে পরীক্ষাকেন্দ্রে গণটোকাটুকির অভিযোগ উঠেছিল, সেখানে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
অন্য দিকে, করিমগঞ্জে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে পুলিশের প্রায় খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে। এমএমসি বিদ্যালয়ের গেট ভেঙে কয়েকশো অভিভাবক পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করলে উত্তেজনার পারদ চরমে ওঠে। পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ নিয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আগেই কঠোর মনোভাব নিয়েছিল। কারা প্রবেশ করতে পারবেন, তাঁদের তালিকাও বিদ্যালয়গুলিতে পাঠানো হয়েছিল। ফলে অভিভাবকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। অভিভাবকদের বক্তব্য, তাঁরা না ঢুকলে ছাত্রছাত্রীরা প্রথম দিন বসার জায়গা খুঁজে বের করতে পারবে না। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পর্ষদের কঠোর নির্দেশের কথা জানালে গেটের বাইরে পুলিশ-অভিভাবকদের মধ্যে ঠেলাধাক্কা শুরু হয়। ব্যারিকেড ভেঙে অভিভাবকরা ভিতরে প্রবেশ করেন। খবর পেয়ে যান পুলিশ সুপার প্রদীপ রঞ্জন কর। লাঠিচার্জের হুমকি দেওয়া হয় মাইকে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বেরিয়ে যান অভিভাবকরা।
জেলার দুল্লভছড়ায় সিভিপি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নকল করায় সত্যম সিংহ নামে এক পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy