সাংবাদিক সম্মেলনে অরুণ জেটলি। ছবি: পিটিআই
আট তারিখে রাত আটটায় নোট বাতিলের ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে। কিন্তু দেশের ভিতর এখন সঙ্কট সামলাচ্ছেন অরুণ জেটলি। এবং ফের তিনি আজ অবতীর্ণ হলেন নরেন্দ্র মোদীর সঙ্কটমোচকের ভূমিকায়।
কালো আর জাল টাকা রুখতে বাজার থেকে ১৪ লক্ষ কোটি টাকা বাজার থেকে উধাও করে দেওয়ার ঘটনা যে কোনও যুদ্ধের থেকে কম নয়, সেটি বিলক্ষণ জানতেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথম ঘোষণার দিনই সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা তিনি বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সরকারের অন্য কাউকে দিয়ে এই ঘোষণা না করিয়ে নিজেই সেই কাজটি করার পিছনে এটিও ছিল অন্যতম কারণ। কিন্তু এখন যখন দেশের প্রায় সব প্রান্ত থেকে টাকা না পেয়ে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠছে, নিত্যদিন দিবারাত্র সেই সঙ্কট সামালের ভার কিন্তু এখন সেই জেটলির হাতেই। রোজ নিয়ম করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্ক, অর্থমন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে মুশকিল আসান করার নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।
গোটা প্রক্রিয়াটি গোপন রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী একটি ‘ছোট্ট’ টিম তৈরি করেছিলেন। কাকপক্ষীও যাতে টের না পায়, সুনিশ্চিত করেছিলেন সেটি। এমনকী বিজেপির অন্দরের খবর, খোদ অর্থমন্ত্রী হয়েও অরুণ জেটলিও গোড়া থেকে তলে তলে প্রধানমন্ত্রীর এই তৎপরতার কথা জানতেন না। জেনেছেন অনেক পরে। অথচ গোটা কর্মকাণ্ডটি নিয়ে নাড়াচাড়া, নতুন নোট ছাপানোর যাবতীয় প্রক্রিয়াটি সরাসরি তাঁরই মন্ত্রকের অধীনে পড়ে। ঘোষণার পর চার দিন কেটে গেল, যে ভাবে ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন, মানুষের হেনস্থা চলছে তাতে স্পষ্ট, গোপনীয়তা রাখতে গিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছিলই না। টাকা বদল করতে না পেরে, হাতে টাকা না পেয়ে রোজ হেনস্থা হচ্ছে আম জনতা। সরকারি নির্দেশ না থাকলেও ব্যাঙ্কগুলি নগদের যোগান অনুযায়ী নিজেদের মতো নিয়ম তৈরি করছে। উষ্মা ধীরে ধীরে অসন্তোষের আকার ধারণ করছে। আর এই সব কিছুই সামাল দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন অরুণ জেটলি।
বিজেপির এক নেতার মতে, অরুণ জেটলি সব সময়ই সঙ্কটমোচকের ভূমিকা পালন করে এসেছেন। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মাসখানেকের মধ্যেই স্মৃতি ইরানির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিতর্কই হোক বা মন্ত্রী নিহাল চাঁদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, অথবা পরে ব্যাপম কেলেঙ্কারি থেকে সুষমা স্বরাজ-বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার সঙ্গে ললিত মোদীর যোগাযোগ নিয়ে তুমুল ঝড়- সঙ্কটের সময় অরুণ জেটলিই ছিলেন মোদীর পরিত্রাতা। ঠিক কংগ্রেসে এক সময় যে ভূমিকা পালন করে এসেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। সনিয়া গাঁধী তাঁকে প্রধানমন্ত্রী না করলেও সব সঙ্কট মোচনের জন্য প্রণবই ছিলেন সনিয়ার সব থেকে বড় ভরসা। প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদী গত আড়াই বছরে দিল্লিতে তাঁর রাশ অনেকটাই নিজের হাতে নিয়ে ফেলেছেন। এক সময় যে দিল্লি তাঁর অনেকটাই অচেনা ছিল, তাতে এখন জেঁকে বসেছেন তিনি। তবুও নোট বাতিলের মতো যে সিদ্ধান্তে মোদী বড় বাজি ধরেছেন, তার সুষ্ঠু রূপায়ণের জন্য এখন সেই জেটলির উপরেই ভরসা করছেন তিনি।
আজ জাপানেও অনাবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে আলাপচারিতায় মোদী গোপন করেননি, এই সিদ্ধান্ত নিয়েও তিনি বেশ ভয়ে-ভয়ে ছিলেন। মানুষের কী কী অসুবিধা হবে তা নিয়ে আশঙ্কায় ছিলেন। গোটা বিষয়টি গোপন রাখার জন্য তিনি তাঁর ‘ছোট্ট’ টিমের বাইরে কাউকে বলতেও পারেননি। কারও থেকে সে ভাবে পরামর্শ নিতেও পারেননি। এখন নিজের সেই সিদ্ধান্তকে ঘিরে দেশের অসন্তোষ মেটাতে জেটলিকে ভার দিয়েছেন তিনি। মোদীর কাছে আরও বড় আশঙ্কা হল, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি তাঁর বিরুদ্ধে একজোট হচ্ছে। সংসদে তাঁকে চেপে ধরারও কৌশল তৈরি করছে। এবং সেই প্রয়াসকেও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে সেই জেটলিকেই। বিরোধীদের ঐক্য ভেঙ্গে আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া সংসদের অধিবেশনেই পণ্য ও পরিষেবা করের মত গুরুত্বপূর্ণ বিলটি পাশ করানোর দায়ও অরুণ জেটলিরই।
জেটলি ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, সে কারণে রোজ সকাল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত জেটলির কাজ পুরো বিষয়টির উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা। এক দিকে কড়া নিরাপত্তার সঙ্গে নোটের বাক্স যাতে নিরাপদে ব্যাঙ্কে পৌঁছতে পারে, সেটি রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে সমন্বয় করে সুনিশ্চিত করা। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নোটের যোগান ঠিকমতো দেওয়া। নতুন নোটের সঙ্গে এটিএমগুলিকে উপযোগী করে তুলতে অগ্রগতি নজরদারি করা। এরই মধ্যে যে ভাবে রাজনীতির পারদও চড়ছে, তারও জবাব দেওয়া। ব্যক্তিগত স্তরে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলে তাঁদের ক্ষোভ প্রশমণের ব্যবস্থা করা, যাতে সংসদে এই নিয়ে উত্তাপ না পাড়ে। জেটলি তাই আজ সাংবাদিক সম্মেলনে নিজেই বলেন, আম জনতার কাছে যাতে সঠিক তথ্য পৌঁছায়, সে কারণেই তিনি বারবার সামনে আসছেন। আর সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে প্রচারের দৌলতে যাতে সেটি সব মানুষের কাছে পৌঁছায়, তারই চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিরন্তর।
আরও পড়ুন: ভোগান্তি চলবে, মানুষের কষ্ট করেও সমর্থন এ বার ক্রমশ বদলাচ্ছে অসন্তোষে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy