কুয়াশায় ট্রেন চলছে দেরিতে। ইলাহাবাদ স্টেশনে যাত্রীরা। ছবি: পিটিআই।
রেলপথে দিল্লি থেকে কলকাতা পৌঁছতে লাগে কমবেশি ১৮ ঘণ্টা। এখন দিল্লি থেকে সেই ট্রেন ছাড়ছেই নির্দিষ্ট সময়ের ১৮ ঘণ্টা পরে!
দিল্লি থেকে বিমানে কলকাতা পৌঁছতে সময় লাগে দুই থেকে সোয়া দু’ঘণ্টা। এখন ভোরবেলা বিমান ওড়ার জন্য তা দু’ঘণ্টায় রানওয়েতে পৌঁছবে কি না, নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না।
এই দীর্ঘ দেরির কারণ উত্তর ভারতের গাঢ় কুয়াশা। তার দাপটেই টানা দু’দিন ধরে বিপর্যস্ত বিমান এবং দূরপাল্লার ট্রেন চলাচল। কুয়াশা উত্তর ভারতের চৌহদ্দিতে আটকে থাকলেও তার প্রভাব পড়েছে গোটা দেশে। পূর্ব রেল জানিয়েছে, কুয়াশায় দিল্লি থেকে ট্রেন আসতে দেরি করছে। তাই কালকা মেল, পূর্বা এক্সপ্রেস, জোধপুর এক্সপ্রেস-সহ হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে উত্তর ভারতগামী একাধিক ট্রেনের সূচি পরিবর্তন করতে হয়েছে। ফলে নাকাল হচ্ছেন যাত্রীরা। পূর্ব রেল জানাচ্ছে, আজ, রবিবার হাওড়া-পটনা-নয়াদিল্লি রাজধানী দুপুর দু’টো পাঁচের বদলে বিকেল পাঁচটা দশে ছাড়বে। এ দিনের হাওড়া-দিল্লি পূর্বা এক্সপ্রেস বাতিল হয়েছে।
দিল্লি বিমানবন্দর সূত্রের খবর, গাঢ় কুয়াশার জন্য দৃশ্যমানতা অনেক কমে গিয়েছিল। শুক্রবার প্রায় ২০০টি উড়ানের দেরি হয়েছে। ৭টি উড়ান বাতিল। দু’টি বিমান নামতে না-পেরে অন্য বিমানবন্দরে চলে গিয়েছে। শনিবার পরিস্থিতি কিছুটা ভাল ছিল। বিমানবন্দর সূত্রের দাবি, পুরনো টার্মিনালে পরিকাঠামো উন্নত না হওয়ায় সমস্যা হয়েছে। বাড়ি থেকে রওনা দেওয়ার আগে উড়ানের সূচি বদল হয়েছে কি না, তা যাচাই করার পরামর্শ দিয়েছে বিমান সংস্থাগুলি।
চার মাস আগে ঘটা করে রেল মন্ত্রক জানিয়েছিল, এ বারের শীতে ঘন কুয়াশা হলেও ট্রেনের চাকা থমকাবে না। তার জন্য নয়া প্রযুক্তির ক্যামেরাও লাগানো হয়েছিল। এখন রেল মন্ত্রকের কর্তারাই জানাচ্ছেন, গত কয়েক দিনে ঘন কুয়াশার জেরে দুশোর বেশি ট্রেনের যাত্রা ব্যাহত হয়েছে। কিছু ট্রেন ঘুরপথে চালাতে হয়েছে। দিল্লি-পটনা রাজধানী-সহ ১২টি ট্রেন বাতিল হয়েছে। রেলের তরফে আগে জানানো হয়েছিল, নয়া প্রযুক্তির ক্যামেরায় ২ থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে সব ছবি ফুটে উঠবে চালকের সামনের স্ক্রিনে। বোঝা যাবে, কোথাও বাধা আছে কি না। পরের সিগন্যালটিও জানতে পারবেন চালক। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কেন এত ট্রেন আটকে যাচ্ছে? রেলকর্তাদের দাবি, নয়া প্রযুক্তি সব ট্রেনে ব্যবহার করা হয়নি। যে সব ট্রেনে এই ব্যবস্থা লাগানো হয়েছে, সেখানে ফল মিলেছে।
মৌসম ভবন সূত্রের খবর, উত্তর ভারত দিয়ে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বয়ে গিয়েছে। ফলে সেখানে বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি ছিল। তার উপরে তাপমাত্রা কমতে শুরু করায় সেই জলীয় বাষ্প সম্পৃক্ত হয়ে কুয়াশা তৈরি করেছে। এর সঙ্গে জুড়েছে দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের বায়ুদূষণ। দিল্লি এবং উত্তর ভারতের বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি রয়েছে। কুয়াশার সঙ্গে সেই ভাসমান কণা মিশে তাকে আরও গাঢ় করে তুলছে। আবহবিদেরা জানান, স্বাভাবিক কুয়াশা হলে রোদ উঠলে তা উবে যায়। কিন্তু ধুলো মিশ্রিত কুয়াশা (ধোঁয়াশা) তৈরি হলে তা সহজে কাটে না। ফলে পরিস্থিতি অনেক বেশি জটিল হয়ে ওঠে।
মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, উত্তর ভারতে একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। ফলে তা থেকে বাতাসে কিছুটা জলীয় বাষ্প ঢুকছে। উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে ঠান্ডা উত্তুরে হাওয়া জোরালো ভাবে বয়ে আসছে। এর ফলে কুয়াশা তৈরির অনুকূল পরিস্থিতি থাকছে। ‘‘কুয়াশার ঘনত্ব কম-বেশি হতে পারে। কিন্তু তা থাকবেই,’’ বলছেন এক আবহবিদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy