শুশ্রূষা: চিকিৎসা চলছে জখম হাতিটির। অসমের হোজাইয়ে হাবাইপুর স্টেশনের কাছে। ছবি: রয়টার্স
রেলের কাছে খবর পৌঁছেছিল, লাইনের কাছে রয়েছে তারা। চালকের জন্য ছিল টর্চের আলোর হুঁশিয়ারিও। তবু ট্রেনের ধাক্কায় ফের ৪টি হাতির মৃত্যু হল অসমে। গুরুতর জখম হয়েছে আর একটি। এ বারেও ঘটনাস্থল হোজাই লাইন। গত কাল রাত পৌনে দশটা নাগাদ লামডিং সংরক্ষিত অভয়ারণ্যে গুয়াহাটি-শিলচর ফাস্ট প্যাসেঞ্জার হাতির পালকে ধাক্কা মারে। হাওয়াইপুর ও লামসাখন স্টেশনের মাঝে এই ঘটনার পরে ট্রেনের চালককে মারধর করেন গ্রামবাসীরা। ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হলেও ট্রেনযাত্রীরা কেউ আঘাত পাননি।
বিষয়টি নিয়ে এ বারও বন দফতর বনাম রেল দফতরের চিরাচরিত চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বন দফতরের দাবি, লামডিং, লঙ্কা, হোজাই বনাঞ্চলের ১৯টি এলাকা হাতি-করিডর হিসেবে চিহ্নিত। রেলের কাছে তার তালিকা। হাতি বাঁচাতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও তৈরি হয়েছে। তাতেই স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে বনরক্ষীরা গত কাল বিকেলে হাওয়াইপুর এলাকায় যান। সেখানে হাতির পালের দেখা পেয়ে রেল দফতরকে খবর দেওয়া হয়। হাতিরা যেখানে লাইন পার হয়, রাতে সেখানে পাহারাও দিচ্ছিলেন বনরক্ষী ও স্থানীয় গ্রামরক্ষীরা। ট্রেন আসছে দেখে তাঁরা টর্চ জ্বালিয়ে চালককে বার-বার সঙ্কেত দেওয়ার চেষ্টা করেন। ট্রেন তবু হুড়মুড়িয়ে এসে হাতির পালকে ধাক্কা দেয়। ছিটকে যায় ইঞ্জিন। ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রামবাসীরা বেধড়ক মারেন চালককে।
আজ ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী প্রমীলারানি ব্রহ্ম। তাঁরও বক্তব্য, বন দফতর বারবার সতর্ক করার পরেও রেল ও চালকদের গাফিলতিতে এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। রেলের অবশ্য দাবি, চালকদের সতর্কতা ও ট্রেনের গতি কম রাখার ফলে অন্তত ২০০টি ক্ষেত্রে অঘটন এড়ানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ওই অংশটি নথিভুক্ত হাতি-করিডর নয়। তবু আগাম খবরের ভিত্তিতে ওই লাইনে চলা সব ট্রেনের গতিবেগ ৩০ কিলোমিটারে বেঁধে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও কেন দুর্ঘটনা ঘটল, তা জানতে বিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে।
রাতে জখম হাতিটির চিকিৎসার জন্য বেলা ৯টা পর্যন্ত চিকিৎসক না আসায় এ দিন ক্ষোভ দেখায় জানতা। জনরোষের মুখে পড়েন বনরক্ষীরাও। পরে চিকিৎসকেরা আসেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, জখম হাতিটির সুস্থ হওয়ার আশা কম। ২০১৬ সালেও এই হোজাইয়েই ট্রেনের ধাক্কায় ৩টি হাতি মারা গিয়েছিল। গত বছর ডিসেম্বরে শোণিতপুর জেলায় ট্রেনের ধাক্কায় ৫টি হাতির মৃত্যু হয়। গত বছর ট্রেনের ধাক্কায় ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিল ৪০টি হাতি।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখপাত্র প্রণবজ্যোতি শর্মা জানান, গত কালের ঘটনায় ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হলেও যাত্রীরা কেউ জখম হননি। ‘অ্যাক্সিডেন্ট রিলিফ ট্রেন’-এর সাহায্যে রাত পৌনে তিনটেয় ইঞ্জিনটি তোলা হয়। ট্রেনটিও চালানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy