উদ্ধার হওয়া সোনা। —নিজস্ব চিত্র
সীমান্তরক্ষী বাহিনী কড়া নজর রাখছে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ সীমান্তে। জবরদস্ত নজরদারি চলছে কলকাতা বিমানবন্দরেও। বাধ্য হয়েই বদলাতে হচ্ছে সোনা পাচারের পথ।
সোনা পাচারে এখন উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন বিমানবন্দরকে নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে। মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে সোনা ঢুকছে মণিপুর ও মিজোরামে। সেখান থেকে সড়কপথে গুয়াহাটি, ইম্ফল, আইজল, শিলচর বিমানবন্দর দিয়ে সেই সোনা কখনও পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে কলকাতায়, কখনও বা দিল্লিতে। বাংলাদেশ সীমান্তে এবং কলকাতা বিমানবন্দরে শুল্ক দফতরের কড়াকড়িতেই সোনা পাচারের এই রুট বদল বলে মনে করছেন শুল্ক অফিসারেরা। আগে ব্যাঙ্কক থেকে বা বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে যে-হারে ভারতে সোনা ঢুকছিল, তা কমেছে বলেও মনে করছেন তাঁরা।
সোনা যে উত্তর-পূর্বের বিমানবন্দর দিয়ে ঢুকছে, সেই খবরও নিয়মিত আসছে শুল্ক বা ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইনটেলিজেন্স (ডিআরআই)-এর কাছে। গত কয়েক মাসে পরপর কয়েকটি ক্ষেত্রে ধরা পড়েছে সোনা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিলচর থেকে চোরাই সোনা নিয়ে এসে কলকাতায় ধরা পড়েছেন কে আজহারউদ্দিন নামে তামিলনাড়ুর এক বাসিন্দা। তাঁর সোনা আনার খবর শুল্ক দফতরের মতো বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ-ও পেয়ে যায়।
বিমানবন্দরের খবর, আজহারের জুতোর সুখতলায় লুকোনো ছিল মায়ানমারের ছাপ মারা সাতটি সোনার বার। তার ওজন এক কিলোগ্রাম ১৬৭ গ্রাম, বাজারদর ৩৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। জানুয়ারির গোড়ায় সাড়ে চার কোটি টাকার সোনা-সহ গুয়াহাটির কাছে বামুনি ময়দানে একটি গাড়ি আটকায় ডিআরআই। অফিসারদের সন্দেহ, ইম্ফলের দুই যুবক ওই ১৫ কিলোগ্রাম সোনা কলকাতায় পাচার করছিলেন।
১১ ডিসেম্বর ইম্ফল বিমানবন্দরে ধরা পড়েন তিন জন। ইম্ফল থেকে ইন্ডিগোর উড়ানে তাঁরা আসছিলেন কলকাতায়। তাঁদের পায়ুর ভিতর থেকে ৫১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার ১৭৩০ গ্রাম সোনা পাওয়া যায়। সেই সোনাও মায়ানমার থেকে সড়কপথে ইম্ফলে এসেছিল। ৩ ডিসেম্বর আইজল থেকে কলকাতায় নামার পরে ডিআরআই অফিসারদের হাতে ধরা পড়েন সাত যুবক ও এক যুবতী। তাঁদের কাছে মেলে প্রায় ন’কেজি সোনা, যার বাজারদর। সেই সোনাও এসেছিল মিজোরাম ও মায়ানমারের সীমান্ত দিয়ে। জেরায় জানা যায়, ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে হাওড়ার ওই যুবক-যুবতীরা সোনা পাচারে রাজি হন।
সাম্প্রতিক কালে সোনা পাচারের সব চেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে গুয়াহাটি বিমানবন্দরে। গত ২৯ ডিসেম্বর সোনা পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ইন্ডিগোর এক ম্যানেজারকে। ২১ ডিসেম্বর গুয়াহাটি বিমানবন্দর থেকে এক যাত্রীকে ২.৬৫ কেজি চোরাই সোনা-সহ গ্রেফতার করার পরে উঠে আসে ইন্ডিগোর ওই ম্যানেজারের নাম। অভিযোগ, নিজের রক্ষীদের চাপ দিয়ে সোনা পাচারকারীদের সাহায্য করতেন ওই ম্যানেজার।
বিমানবন্দরে সিআইএসএফের নিরাপত্তা থাকে। সেখান দিয়ে সোনা পাচারের ঝুঁকি নেওয়া হচ্ছে কেন?
শুল্ক এবং ডিআরআই কর্তাদের মতে, জুতোর সুখতলা বা পায়ুতে লুকিয়ে সোনা পাচার করলে অনেক ক্ষেত্রে টের পাচ্ছে না সিআইএসএফ। শুল্ক গোয়েন্দারা এই ধরনের পাচার ধরতে অনেক বেশি পটু। যাত্রীরা বিস্ফোরক বা অস্ত্র নিয়ে বিমানে উঠছেন কি না, মূলত তার উপরেই মনোনিবেশ করে সিআইএসএফ।
সড়কপথে সোনা আনার ঝুঁকি কম, এটা মানতে নারাজ গোয়েন্দারা। তাঁদের কথায়, ‘‘সোনা ভারতে ঢোকার পরে তাড়াতাড়ি ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেওয়াই পাচারকারীদের মূল উদ্দেশ্য। যত বেশি সময় ধরে চোরাই সোনা তাঁদের কাছে থাকবে, ধরা পড়ার আশঙ্কাও বাড়বে। আগে ব্যাঙ্কক থেকে সরাসরি বিমানে সোনা আসছিল। এখনও আসছে, তবে কম। এখন সড়কপথে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিমানবন্দরে সোনা ঢুকিয়ে তড়িঘড়ি তা কলকাতায় আনার চেষ্টা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy